শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা বলেছেন, ঘৃণা ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি তৈরি করছে। খবর রয়টার্সের।
রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে এবারের নোবেল জিতেছেন মারিয়া রেসা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে গত শুক্রবার তাঁরা নোবেল জয় করেছেন। নোবেল জয়ের পর এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে আজ শনিবার মারিয়া রেসা রয়টার্সকে এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে মারিয়া রেসা বলেন, ‘বিশ্বে সংবাদের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটির অ্যালগরিদম ভুয়া তথ্য ও ঘৃণা ছড়ানো ঠেকানোকে অগ্রাধিকার দিতে সফল হয়নি। এমনকি তথ্যপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে ফেসবুক।’
ফেসবুক গণতন্ত্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, এমন মন্তব্য করে মারিয়া রেসা বলেন, ‘আপনার কাছে যদি তথ্য না থাকে, তবে আপনি প্রকৃত সত্য জানতে ও বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবেন না। আর এসবের অভাব গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তোলে।’
মারিয়া রেসার এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ফিলিপাইনে ফেসবুকের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। তবে তিনি সাড়া দেননি।
এমন একসময় মারিয়া রেসা এ মন্তব্য করলেন, যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির ওপর ‘ভীতিকর ও মুসলিমবিদ্বেষী’ কনটেন্ট ছড়ানো ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন। ফেসবুকের বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ গবেষণা ও নথি গণমাধ্যমে ফাঁস করে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের শুনানিতে অংশ নিয়ে ফ্রান্সেস হাউগেন বলেন, ‘ব্যবহারকারীরা ভীতিকর ও মুসলিমবিদ্বেষী কনটেন্ট ছড়াচ্ছেন জেনেও ফেসবুক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। হিন্দি ও বাংলা শব্দগুলো বুঝতে পারার মতো অ্যালগরিদম না থাকায় ফেসবুক তেমন কনটেন্ট শনাক্ত করতে পারে না। বিশ্বে ভুয়া তথ্য ও জাতিগত সহিংসতা ছড়ানোর এটি অন্যতম কারণ।’
এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় ব্যবহারকারীদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে ফেসবুক। ডাউনডিটেক্টর ডটকমে দেখা যায়, বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাতে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারের মতো ফেসবুকের মালিকানাধীন মূল সেবাগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানান ব্যবহারকারীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা এসব সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন তাঁরা।
এ বিষয়ে ফেসবুকের মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, ‘ফেসবুক ও এর সেবা ব্যবহারে বিঘ্ন ঘটার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা দ্রুত এর সমাধান করেছি। যাঁরা আমাদের পণ্য ব্যবহার করতে পারেননি, তাঁদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’
এর আগে গত সোমবার রাতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের সব সেবা। প্রায় ছয় ঘণ্টা বিশ্বজুড়ে বন্ধ থাকার পর সেবা চালু করে ফেসবুক। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সন্তোষ জনার্দন জানান, এ সমস্যার মূলে ছিল ফেসবুকের রাউটারের ‘কনফিগারেশনে পরিবর্তন’।