পুতিনের শাসনের ২০ বছর

গোয়েন্দা বইয়ের পোকা ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। ১৬ বছর বয়সে যোগ দিতে চলে গিয়েছিলেন গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে। কর্মকর্তারা শারীরিক গড়ন ও বয়স নিয়ে হাসাহাসি করে বলেছিলেন, ফিল্ড ওয়ার্ক হবে না তোমাকে দিয়ে। এক কাজ করো, দু-তিনটি ভাষা শিখে নাও আর আইন পড়ো। তাহলে বড় হয়ে কেজিবির ডেস্ক ওয়ার্ক করতে পারবে। সেদিন হতাশা নিয়ে ফিরে ছেলেটি কয়েকটি ভাষা শিখলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়লেন। ২৩ বছর বয়সে একদিন খোদ কেজিবির কর্মকর্তারা কড়া নাড়েন তাঁর দরজায়। সেই ছেলে ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন প্রেসিডেন্ট এবং ব্রিটেনের পাঁচজন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় আসা-যাওয়া দেখলেন। কিন্তু তিনি বহাল তবিয়তে। ক্ষমতার ২০ বছরের চিত্র তুলে ধরেছে বিবিসি। ছবিগুলো এএফপির।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে রাশিয়া হওয়ার পর সবচেয়ে প্রভাবশালী শাসক ভ্লাদিমির পুতিন। ৩১ ডিসেম্বর তাঁর শাসনামলের ২০ বছর পূর্ণ হবে। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে রাশিয়া হওয়ার পর সবচেয়ে প্রভাবশালী শাসক ভ্লাদিমির পুতিন। ৩১ ডিসেম্বর তাঁর শাসনামলের ২০ বছর পূর্ণ হবে। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন।
পুতিন ১৯৯৯ সালে আগস্টে প্রধানমন্ত্রী হন। আর ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তিনি বরিস ইয়েলৎসিনের কাছ থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ব্যাটন নেন।
পুতিন ১৯৯৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার সময় দ্বিতীয়বারের মতো চেচনিয়া যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনি অবরোধ করে রাখে রুশ সেনারা। চেচনিয়া স্বাধীনতার আন্দোলন দমিয়ে জনগণের কাছে হিরো বনে যান পুতিন।
২০০৪ সালে জঙ্গিরা রাশিয়ার বেসলানে স্কুলে আক্রমণ চালিয়ে ৩৩০ জনকে হত্যা করে। এর অধিকাংশই শিশু। সেই হামলার পরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীরবতা।
২০০০ সালের মার্চে পুতিন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। এর কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি পড়ে যান সংকটে। কারণ, ওই বছরের আগস্টে কৃষ্ণ সাগরে কার্স্ক সাবমেরিন বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। এতে ওই সাবমেরিনের ১১৮ নাবিক মারা যান। নিহত নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে পুতিন।
প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমন্ত্রণে পুতিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০১ সালে টেক্সাসে বুশের সঙ্গে পুতিনের এক বৈঠক হয়।
২০০৩ সালে ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি রাশিয়ায় যান ইরাক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য। এ সময় পুতিনের সঙ্গে খোশমেজাজে বারলুসকোনি।
রানির আমন্ত্রণে পুতিন ব্রিটেন সফরে যান ২০০৩ সালে। ১৮৭৪ সালের পর পুতিনই প্রথম সরকারপ্রধান, যিনি যুক্তরাজ্য সফরে যান।
আঙ্গেলা ম্যার্কেল, টনি ব্লেয়ার, জ্যাক শিরাক, ভ্লাদিমির পুতিন ও জর্জ ডব্লিউ বুশ একসঙ্গে। ২০০৬ সালে জি-এইট সামিটে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে বিশ্বনেতারা।
রাশিয়ার সংবিধানমতে, তিনবারের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। পুতিন সহজ সমাধান বের করলেন। নিজের অন্যতম বিশ্বস্ত দিমিত্রি মেদভেদেভকে ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী। জর্জিয়া সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেখানে যান পুতিন।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখলে নেয় রাশিয়া। একটি জরিপ নিয়ে কথা বলছেন পুতিন। জনগণকে বড় স্ক্রিনে তা দেখানো হচ্ছে।
এ বছরের আগস্টে ক্রিমিয়ায় মোটরসাইকেল র‌্যালি শেষে সেলফি শিকারিদের পাল্লায় পুতিন।
ইউক্রেন সমস্যা নিয়ে বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ভ্লাদিমির পুতিন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের লক্ষ্য হলো ‘রাশিয়াকে আবার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী করতে হবে’। ২০১২ সালে ক্রেমলিনে আবার ফিরে আসার পর তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি ইতিবাচক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বৈশ্বিক কূটনীতির আসরের সবচেয়ে সম্মানজনক চেয়ারগুলোর একটির দখল নিতে চেয়েছেন।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে পুতিন।
মার্কিন গোয়েন্দাদের অভিযোগ, ২০১৬ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে রাশিয়া। তবে এরপরই দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে সম্পর্ক বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ।
ব্রিটেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সঙ্গে পুতিন।
২০০৭ সালে মঙ্গোলিয়ায় স্নাইপার রাইফেল হাতে পুতিন। সিনেমায় নায়কদের সচরাচর এমন আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা যায়।
পুতিনের প্রিয় দুই কুকুর বাফি ও ইয়ুমি।
পুতিন মাঝেমধ্যেই বিশ্বকে তাঁর খেলোয়াড়ি নৈপুণ্য দেখান। কখনো আইস হকি, কখনো জুড়ো–কারাতে খেলেন।