অস্ট্রেলীয় দার্শনিক টবি ওর্ড মনে করেন, পরবর্তী শতাব্দী হবে বিপজ্জনকভাবে অনিশ্চিত। কেবল সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেকল্পনাতীত বিকাশের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করা যায়। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ডোডো বা ডাইনেোসরের মতো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে হবে। একবিংশ শতাব্দী হবে বিশাল এক রাশিয়ান রুলেট খেলা। অনেকে এমন ভয়াবহ ভবিষ্যদ্বাণী গ্রাহ্য করবে ন। অন্যদের পক্ষে এটি উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলবে, যা ইতিমধ্যে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী বিপদ মূল্যায়নকারী বিশেষজ্ঞরা একটি মহামারি আসতে দেখেছিলেন, তবে তাদের কাছে মানুষের জন্য এর চেয়েও বড় ধরনের উদ্বেগ ছিল। করোনা মহামারি ঠেকাতে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রজাতি হিসেবে মানুষ তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু থেকে। করোনাভাইরাস মহামারিও মানুষকে অনেক কিছু শেখাবে। এর উদাহরণ টেনে এ ধরনের ঘটনার পূর্বাভাস দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাবে।
অস্ট্রেলীয় দার্শনিক টবি ওর্ড তাঁর লেখা 'দ্য প্রিসিপিস' বইয়ে লিখেছেন, 'স্মৃতিপটে যা নেই, এমন সম্ভাব্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা আমরা সেভাবে করতে পারি না। এমনকি বিশেষজ্ঞরা পূর্বে না ঘটা কোনো ঘটনার বিষয়ে আভাস দিলে. তা যাচাই না করা পর্যন্ত বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে যায়। করোনাভাইরাস মহামারি ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক বিজ্ঞানী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, বিশ্বব্যাপী অদূর ভবিষ্যতে কোনো এক মুহূর্তে মহামারি দেখা দেবে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও ভাইরোলজিস্ট ছাড়াও মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ২০১৫ সালে টেড টকে মারাত্মক এক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলেন। তবে যদি এখনও কিছু না ঘটে থাকে, যেন তা ঘটবে না ধরে নেওয়ার মতো মানুষ বেশি। যদি এ ধরনের মহামারির কথা বলা হয়, যাতে অনেক মানুষ মারা যাবে, তবে তা বিশ্বাস করানো আরও কঠিন।
অস্তিত্বের হুমকির দুটি সংজ্ঞা রয়েছে, যদিও এগুলো প্রায় একই। একটি হলো এমন কিছু, যা মানবতার যবনিকা টানবে, এই গ্রহ থেকে আমাদের সরিয়ে দেবে। অন্যটি কিছুটা কম সমস্যাপূর্ণ। এটি এমন এক বিষয়, যা সভ্যতার নিশ্চিত পতনের দিকে পরিচালিত করে, যা বেঁচে থাকা মানবতাকে অস্তিত্বের এক প্রাগৈতিহাসিক রাজ্যে পরিণত করে।
অক্সফোর্ডের ফিউচার অব হিউম্যানিটিতে অস্তিত্বের হুমকি বিষয়ে কাজ করছেন ওর্ড। এখানে মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হতে পারে, এমন নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে ক্ষতিকর জীবাণু, সুপার ভলকানো থেকে শুরু করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হুমকি পর্যন্ত সমস্ত কিছু বিবেচনা করা হয়।
ওর্ড প্রতিটি ঝুঁকির বিষয় নিয়ে কাজ করেন এবং পরবর্তী শতকে বিশ্বের জন্য কী কী ঝুঁকি আসতে পারে, এর সম্ভাব্য দিক খতিয়ে দেখেন। বেশির ভাগ সময় সাধারণ মানুষ, সরকার ও অন্যান্য শিক্ষাবিদেরা এই ঝুঁকির বিষয়গুলো অবহেলা করেন।আমাদের মধ্যে খুব কম লোকই ভবিষ্যৎ ঘটনার ইঙ্গিত নিয়ে ভাবেন।
ওর্ড মনে করেন, আমরা এখন মহামারির মধ্যে জীবন যাপন করছি, ভবিষ্যতের বিপর্যয় এড়াতে কী কী করা যায়, তা নিয়ে ভেবে দেখার এটাই হয়তো যথার্থ সময়। মানবতার ইতিহাসের এক সংকটময় মুহূর্ত এটি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বা পারমাণবি যুগের ধ্বংসাত্মক প্রভাবে আমরা নিজেদের মুহূর্তে্ই যেমন নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারি, তেমনি সভ্যতার টিকে থাকার জন্য ভারসাম্য রাখার প্রশ্নটাও রেখে যেতে পারি।
কসমোলজিস্ট এবং রয়েল সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্টিন রিস মন বলেন, 'পৃথিবীতে গুরুতর বিপর্যয়ের মাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে। এ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। অনেকে এটা অস্বীকার করছেন।'