যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর মধ্য দিয়ে কনজারভেটিভ দলের প্রধান হিসেবে থেরেসা মে’র দায়িত্বের অবসান ঘটল।
তবে থেরেসা মে’র উত্তরসূরি নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকছেন মে। জুলাই মাসের শেষের দিকে কনজারভেটিভ দলের নতুন নেতা নির্বাচন সম্পন্ন হবে। সেই নতুন নেতা একই সঙ্গে হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) নিয়ে সৃষ্ট গৃহবিবাদের জের ধরে গত ২৪ মে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন মে। সেই ঘোষণায় ব্রেক্সিট কার্যকর করতে না পারার ব্যর্থতা মেনে নিয়ে মে বলেছিলেন, ব্রেক্সিট গণভোটের রায় কার্যকরে তিনি চেষ্টার সবটুকুই করেছেন, কিন্তু সফল হতে পারেননি। এখন নতুন কারও উচিত ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেওয়া। সেদিন তিনি ঘোষণা দেন, ৭ জুন দলীয় প্রধানের পদ ছাড়বেন। আর নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর কাছে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন।
১৯৯৭ সালে থেরেসা মে ইংল্যান্ডের বার্কশায়ারের মেইডেনহেড আসন থেকে প্রথমবারের মত সাংসদ নির্বাচিত হন। দলের মধ্যে বেশ দ্রুতই তিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। ২০১০ সালে লিবারেল ডেমোক্র্যাটের সঙ্গে জোট করে কনজারভেটিভ দল ক্ষমতায় এলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর (হোম সেক্রেটারি) মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান মে। ৬ বছর তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের জুনে ব্রেক্সিট গণভোটে হারের দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তখন দৃঢ় মনোবলের অধিকারী মে প্রতিযোগীদের ডিঙিয়ে নাটকীয়ভাবে দলীয় প্রধান নির্বাচিত হন এবং একই সঙ্গে ক্যামেরনের উত্তরসূরি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।
ব্রেক্সিট গণভোটে ইইউর সঙ্গে থাকার পক্ষেই প্রচার চালিয়েছেন মে। কিন্তু সেই গণভোটে জনগণ বিচ্ছেদের পক্ষে যে রায় দিয়েছে, তা কার্যকরের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন মে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেরেসা মে’র মেয়াদের পুরোটাই ছিলে ব্রেক্সিট নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বিভাজনে উত্তাল। দলীয় অনৈক্যের কারণেই বারবার চেষ্টা করেও ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে পারেননি মে। চলতি বছরের ২৯ মার্চ ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। বিচ্ছেদের দিনক্ষণ দুই দফা পিছিয়ে আগামী ৩১ অক্টোবর করা হয়েছে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া আবেগঘন বক্তৃতায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন মে। আর শুক্রবার সেই পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন অনেকটা নীরবেই। কনজারভেটিভ দলের সংসদীয় কমিটি পদত্যাগ ও নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। শুক্রবার বিকেলে ‘১৯২২ কমিটি’ নামে ওই কমিটির ভারপ্রাপ্ত দুই প্রধান-চার্লস ওয়াকার ও ডেইম শেরিল গিলানের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগপত্র জমা দেন মে। এর পর পরই নতুন নেতা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ওই কমিটি।
দলের বিদ্রোহীরা থেরেসা মে’র পদত্যাগে সমাধান দেখছিলেন। কিন্তু নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের যে বাদানুবাদ শুরু হয়েছে, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।