যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের চূড়ান্ত দুই প্রার্থী বাছাই হয়ে গেছে। এদের একজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন, যিনি শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাইতে বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিলেন। অন্যজন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট, যাঁর সঙ্গে পরিবেশ-বিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল গোভের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার দলীয় আইনপ্রণেতাদের সর্বশেষ ভোটাভুটিতে টিকে থাকেন বরিস ও হান্ট।
এর মধ্যদিয়ে ওয়েস্টমিনস্টারর গণ্ডি পার হলো নেতা নির্বাচন। এখন তৃণমূল সদস্যদের রায় দেওয়ার পালা। কনজারভেটিভ দলের ১ লাখ ৬০ হাজার সদস্যের সরাসরি ভোটে বরিস অথবা হান্টের মধ্য থেকে একজন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। সোমবার থেকে ডাকযোগে সদস্যদের ভোট গ্রহণ শুরু হবে। চলবে ২২ জুলাই পর্যন্ত। ওই দিনই জানা যাবে কে হলেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী।
গুঞ্জন রটেছে, কৌশল করে গোভকে ছুড়ে ফেলেছেন বরিস জনসন। এর মাধ্যমে ২০১৬ সালের নেতা নির্বাচনে বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশোধ নিয়েছেন। সেই সঙ্গে চূড়ান্ত পর্বে মুখোমুখি বিতর্কের জন্য অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী হান্টকে তুলে এনেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে।
এ নেতা নির্বাচনের প্রার্থী ছিলেন মোট ১০ জন। নিয়ম অনুযায়ী দলটির সাংসদেরা বারবার ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রার্থী সংখ্যা দুজনে নামিয়ে আনেন। প্রতি পর্বে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থী বাদ পড়েন। দলের তৃণমূল সদস্যদের ভোটে শেষ দুজনের একজন নেতা নির্বাচিত হন। গতকাল বৃহস্পতিবার আইনপ্রণেতাদের পঞ্চম দফা ভোটাভুটিতে প্রার্থী সংখ্যা দুজনে নেমে আসে। ভোট দেন দলটির ৩১৩ জন আইনপ্রণেতা।
চূড়ান্ত পর্বে বরিস জনসন পেয়েছেন ১৬০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেরিমি হান্ট পান ৭৭ ভোট। মাত্র ২ ভোটের ব্যবধানে (৭৫ ভোট) প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েন মাইকেল গোভ।
বরিস জনসন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী। মাইকেল গোভও তাই। সে কারণে গোভকে বরিসের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছিল। এ ছাড়া ২০১৬ সালের নেতা নির্বাচনে বরিসকে সমর্থন দিয়েছিলেন গোভ। কিন্তু পরে তিনি নিজেই প্রার্থী হন। তখন প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন বরিস। সে কারণেও গোভের মুখোমুখি হওয়া বরিসের জন্য বিব্রতকর ভাবা হচ্ছিল।
কিন্তু বরিস কি করে গোভকে হারিয়ে দিলেন এবং নিজের পছন্দমতো প্রতিদ্বন্দ্বী বেছে নিলেন? বিশ্লেষকেরা বলছেন, বরিস শুরু থেকেই এত বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিলেন যে, তিনি ভোট ধার দিয়ে অন্যদের ফলাফল প্রভাবিত করেছেন। যেমন ব্রেক্সিটপ্রশ্নে নমনীয় প্রার্থী রোরি স্টুয়ার্ট প্রথম দফায় পেলেন ১৯ ভোট। পরের ধাপে তাঁর ভোট বেড়ে হলো ৩৭। ফলে ২৭ ভোট পাওয়া ব্রেক্সিট বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ডোমিনিক রাব বাদ পড়ে গেলেন। বরিসের কিছু সমর্থক রোরিকে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় দফা ভোটাভুটিতে রোরি স্টুয়াটের ভোট কমে হলো ২৭ এবং তিনি বাদ পড়ে গেলেন। একইভাবে জনসনের সমর্থকেরা জেরেমি হান্টকেও ভোট দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে বলে গুঞ্জন রটেছে।
বরিসের একজন সমর্থক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেছেন, বরিস সমর্থন কিছু আইনপ্রণেতা কৌশল করে ভোট দিয়েছেন।
বরিস কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী। বড় ব্যবধানে দলীয় আইনপ্রণেতাদের বাধা পার হয়েছেন। দলের তৃণমূলেও তাঁর সমর্থন বিপুল। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী জেরেমি হান্ট ২০১৬ সালের গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ব্রেক্সিট নিয়ে তাঁর অবস্থান অনেকটা উদার। তবে দুজনেই অক্সফোর্ড পড়ুয়া। একজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্যজন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আগামী এক মাসে দলীয় নেতা কর্মীদের সামনে তাঁরা ১৬টি মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেবেন। প্রথমটি অনুষ্ঠিত হবে শনিবার। এসব বিতর্কে দক্ষতা প্রমাণের ওপর নির্ভর করবে তাঁদের ভাগ্য।