ডেসমন্ড টুটু: বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন নেতার বিদায়

ডেসমন্ড টুটু
ফাইল ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ আফ্রিকার ডেসমন্ড টুটু একজন আর্চবিশপ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। বর্ণবাদ-পরবর্তী আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) শাসকদের দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে সাহায্যে ব্যর্থ হওয়ার জন্য সমালোচনা করতে ছাড়েননি। খবর আল–জাজিরার।

শান্তিতে নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু রোববার মারা গেছেন। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই নেতার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। প্রস্টেট ক্যানসার এবং সংক্রমণের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে কেপটাউনে তাঁর মৃত্যু হয়।

ডেসমন্ড টুটু তাঁর প্রতিবাদ দক্ষিণ আফ্রিকার সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বর্ণবাদবিরোধী এই নেতার অন্য রকম ক্ষমতা ছিল। তিনি তাঁর প্রতি সব আঘাত প্রায়ই হাস্যরস ও উষ্ণতার সঙ্গে এড়িয়ে যেতেন।

টুটু নিজের গির্জার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি আচরণ, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ এবং তাঁর কট্টরপন্থীদের নিন্দা করেছিলেন। শান্তির সন্ধানে তাঁর সাধনা তাঁকে সাইপ্রাস, উত্তর আয়ারল্যান্ড, এমনকি কেনিয়া পর্যন্ত নিয়ে গেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করা স্কট ফিরসিং আল–জাজিরাকে বলেন, ‘তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার নৈতিকতার দিকনির্দেশক। বর্ণবাদী সরকারের বৈষম্যের পথের কাঁটা। একইভাবে বর্ণবাদ–পরবর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তিনি দুর্নীতি ও চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করার প্রতিবাদ করেছিলেন।’

স্কট ফিরসিং আরও বলেন, ‘টুটু ছিলেন একজন স্পষ্টভাষী আদর্শবাদী, সর্বদা ন্যায়ের পক্ষে, তা যত কঠিনই হোক না কেন। তিনি নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে কয়েক দশকের উত্তাল পরিবর্তনের সময় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছিলেন।’

দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯৮ সালে ডেসমন্ড টুটু ও নেলসন ম্যান্ডেলা

ডেসমন্ড টুটু ১৯৩১ সালে ট্রান্সভাল সোনার খনির শহর ক্লার্কসডর্পে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জাকারায়া ছিলেন শিক্ষক এবং মা আলেটা ছিলেন গৃহিনী। তিনি প্রাথমিকভাবে তাঁর বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের জন্য স্কুলে পড়ালেখার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।

টুটু বিশপ ট্রেভর হাডলস্টন এবং অন্য বর্ণবাদবিরোধী শ্বেতাঙ্গ পাদরিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে একজন গির্জার যাজক নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাংলিকান ডিন নির্বাচিত হন।

ম্যান্ডেলা কারাগারে থাকাকালে তাঁর আন্দোলন এগিয়ে নেন টুটুসহ অন্যরা। ১৯৭৬ সালে সোয়েটোতে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের বিক্ষোভে ব্যাপক হামলা চালায় পুলিশ। সে সময় টুটু বলেছিলেন, শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সরকার বর্ণবাদী, তাদের পতন অত্যাবশ্যকীয় এবং তারা ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অস্বীকার করছে।

টুটুর জীবনী লেখক স্টিভেন গিস আল–জাজিরাকে বলেন, টুটু ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মার্টিন লুথার কিং।

টুটু ১৯৮৬ সালে কেপটাউনের আর্চবিশপ নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্কের উদারীকরণ প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান। সে সময় তিনি ম্যান্ডেলার মুক্তি এবং এএনসি–বিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানান।