নতুন কোনো ধরন আসার আগেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গতকাল শুক্রবার সংস্থাটি জানায়, করোনার ডেলটা ধরন একটি সতর্কবার্তা। ডেলটার ধরনের ভয়াবহতা থেকে বোঝা যায়, সামনের দিনগুলোয় করোনার আরও ভয়াবহ ধরন ছড়িয়ে পড়তে পারে। খবর এএফপির।
মহামারি শুরুর পর থেকে করোনার ধরনগুলোর মধ্যে ডেলটা সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। এটি আগের যেকোনো ধরনের চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩২ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া এ ধরন।
এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের প্রধান মাইকেল রায়ান বলেন, ‘ডেলটা একটা সতর্কবার্তা। আরও ভয়াবহ ধরন আসার আগে আমাদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এটি একটি ইশারাও।’
ডেলটা ধরনের ভয়াবহতা অনেক বেশি হলেও তা নিয়ন্ত্রণে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরিধান ও বারবার হাত ধোয়ার মতো বিষয়গুলো এখনো কার্যকর বলে জানিয়েছেন মাইকেল রায়ান। তিনি বলেন, ‘এই সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো ডেলটা ধরনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। টিকা নেওয়া থাকলে এগুলো আরও কার্যকর হচ্ছে।’
মাইকেল রায়ান আরও বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া আগের পদক্ষেপগুলো এখনো কার্যকর আছে। তবে এখন সেগুলো আরও দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, গত চার সপ্তাহে সংক্রমণ ৮০ শতাংশ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত করোনার চারটি ধরন ছড়িয়েছে। আরও নতুন নতুন ধরন আসবে।’
করোনা নিয়ন্ত্রণে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্বের সব দেশে কমপক্ষে ১০ শতাংশ মানুষকে টিকাদানের আওতায় আনতে চাইছে ডব্লিউএইচও। এ বছরেই দেশগুলোতে ৪০ শতাংশ এবং ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ৭০ মানুষকে টিকা দেওয়ার আশা করছে সংস্থাটি। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশ দূরে আছে বলে উল্লেখ করেছেন তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস।
এএফপির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত ৪০০ কোটির বেশি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে এর বেশির ভাগই পেয়েছে উচ্চ আয়ের দেশগুলো। উন্নত এ দেশগুলোতে প্রতি ১০০ জনে ৯৮ ডোজ টিকা পেয়েছেন। অন্যদিকে, নিম্ন আয়ের ২৯টি দেশে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৬ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আয়ের ভিত্তিতে দেশগুলোর শ্রেণিবিভাগ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। দেশগুলোর মধ্যে টিকাদানের এই অসমতাকে ‘নৈতিক অনাচার’ বলে উল্লেখ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
চীনের উহানে ২০১৯ সালে প্রথম করোনা শনাক্তের পর তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৯ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ।