মানবসভ্যতার যাত্রা শুরুর বহু আগে পৃথিবী ছিল বিশাল দেহী ডাইনোসরদের দখলে—এ কথা প্রায় সবারই জানা। তবে এই প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের উৎপত্তি পৃথিবীর ঠিক কোথায়, তা নিয়ে গবেষণা এখনো চলছেই। এক দল বিজ্ঞানী সম্প্রতি দাবি করেছেন, উত্তর গোলার্ধে হয়তো এদের উৎপত্তি। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, সম্ভবত আজকের যুক্তরাজ্যই হলো ডাইনোসরদের ‘জন্মভূমি’।
নেচার জার্নালে চলতি সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে ডাইনোসরদের নিয়ে প্রচলিত কিছু তত্ত্ব ‘ভুল’ বলেও দাবি করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথিউ ব্যারনের নেতৃত্বে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এত দিন যে ধারণা প্রচলিত আছে, তার চেয়েও প্রায় দেড় কোটি বছর আগে ডাইনোসরের উৎপত্তি। ধারণা মিলেছে, পৃথিবীর যে অংশে ডাইনোসরদের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়, তারও উত্তরে এদের জন্ম। সম্ভবত বর্তমানের যুক্তরাজ্যেই তা ঘটেছিল।
ডাইনোসরদের বংশলতিকার প্রচলিত সংস্করণটি ১৩০ বছর আগে তৈরি। লন্ডনের কিংস কলেজের জীবাশ্মবিদ হ্যারি গোভিয়ের সিলি এটি তৈরি করেছিলেন। বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসরের জীবাশ্মে এসবের আকার, আকৃতি এবং হাড়ের বিন্যাস দেখে এবং বিবর্তনের বিষয়টি তুলনা করে তিনি একটি তত্ত্ব দেন। সিলি বলেছিলেন, ডাইনোসররা মূলত প্রধান দুটি গ্রুপে বিভক্ত ছিল। যেসব ডাইনোসরের নিতম্বের হাড় বর্তমান সময়ের পাখিদের মতো, সিলি সেগুলোর নাম দেন অরনিথিসকিয়া। আর যেগুলোর নিতম্বের হাড় সরীসৃপের মতো, সেগুলোর নাম দেন সওরিসকিয়া।
এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, সম্ভবত ২৩ কোটি বছর আগে প্রাচীন মহাদেশ গন্ডোয়ানা এলাকায় ডাইনোসরদের উৎপত্তি।
নতুন গবেষণার নেতৃত্বে থাকা ম্যাথিউ ব্যারন বলেন, ‘ডাইনোসরদের বিবর্তনে উত্তরাঞ্চলীয় মহাদেশগুলোর ভূমিকা আমাদের বর্তমান ধারণার চেয়েও বেশি ছিল। আর ডাইনোসরদের উৎপত্তি সম্ভবত যুক্তরাজ্যেই।’
উত্তর গোলার্ধ, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ডাইনোসরদের উৎপত্তির যে যুক্তি বিজ্ঞানীরা দিচ্ছেন, তার ভিত্তি হচ্ছে স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে পাওয়া দুটি গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্ম। বহুদিন এ জীবাশ্মগুলোকে অন্য প্রাণীর বলে উপেক্ষা করা হয়েছিল। তবে ডাইনোসরের নতুন বংশলতিকায় এগুলোকে এই প্রাণী পরিবারেই স্থাপন করা হয়েছে। গবেষণার পর বিজ্ঞানীদের ধারণা জন্মেছে, সম্ভবত সাড়ে ২৪ কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে ডাইনোসরদের যাত্রা শুরু।