ঝুঁকিতে দেশের ভবিষ্যৎ

মিসরের চলমান সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে এবং দেশটির ভবিষ্যৎ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এ ধারণা সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষেরই। আর তাদের এই ধারণা অনেকটাই ঠিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন, কায়রোর রাজপথসহ মিসরজুড়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার জের টানতে হবে দেশটির পরবর্তী প্রজন্মকেও। আরব বসন্তের তোড়ে মাত্র ২০১১ সালেই প্রায় তিন দশকের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতন হলে জনগণের মধ্যে আনন্দের ঢেউ বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সুদূর-অতীতের গল্প বলে মনে হচ্ছে। এখন দেশটিতে ‘শুধু জয়ীরাই সব কিছু পাবে’—এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে যে যুক্তি দেওয়া হয় তা হলো, মুরসি তাঁর প্রতিশ্রুতিমতো ‘সবার প্রেসিডেন্ট’ হতে পারেননি। তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তাঁর অনুসারী ও সমর্থকদের।
ব্রাদারহুড ১৯২৮ সাল থেকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ ছিল দলটি। এত দিনে ক্ষমতায় যাওয়ার পর ইসলামপন্থী মুরসি ও ব্রাদারহুড জাতীয় মতৈক্য প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে মিসরের কাঠামো পরিবর্তন করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। এর জবাব এসেছে তাহরির স্কয়ার থেকে। মোবারকবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল পরিণত হয়েছিল মুরসিবিরোধী আন্দোলনের ঘাঁটিতে। এর ওপর ধারাবাহিকতায়ই ৩ জুলাই মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী।
এখন সার্বিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, মিসরের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং তাঁর সমর্থকেরা সেই মুরসির পথেই হাঁটা শুরু করেছেন। তাঁরা দাবি করছেন, মিসরে গণতান্ত্রিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করাই তাঁদের লক্ষ্য। কিন্তু মুরসিকে পুনর্বহালের দাবিতে আল-নাহদা ও রাব্বা আল-আদাবিয়া স্কয়ারে অবস্থানরতদের হটাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র অভিযানে এটা মনে হচ্ছে যে তাঁরা আসলে রাজনৈতিক শক্তি হিসেকে আবির্ভূত ব্রাদারহুডকে নির্মূল করতে চাইছেন।
আরব দেশগুলোসহ পুরো বিশ্বই মিসরের পরিস্থিতি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। ১৮ মাস আগে ব্রাদারহুড ও অন্য দেশে তার মিত্ররা আরব বসন্তের বড় বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই এই বিজয় অর্জন করে তারা।
কিন্তু এখন যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর মিসরে মুরসির সমর্থক ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদের হটিয়ে দিতে যে রক্তক্ষয়ী অভিযান চালানো হয়েছে, তাতে দেশটির চলমান সংকটের সমাধান হবে না। বরং এই অভিযান দেশটির সংকট আরও ঘনীভূত করবে। ঝুঁকির মুখে পড়বে দেশটির ভবিষ্যৎ। বিবিসি।