নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের জনপ্রিয়তা সম্প্রতি অনেক কমে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ মানুষ এখন তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পছন্দ করেন। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এটি জেসিন্ডার সর্বনিম্ন জনপ্রিয়তার হার। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের টেলিভিশন নেটওয়ার্ক টিভিএনজেডের সংবাদ বিভাগ ওয়ান নিউজ এবং গবেষণা সংস্থা কান্টারের যৌথ জনমত জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এক হাজার ভোটারের মধ্যে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে হতাশ। মাত্র ২২ শতাংশ আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী ১২ মাসে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এদিকে জেসিন্ডা আরডার্নের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পঞ্চম অবস্থানে থাকা নেতা ক্রিস লুক্সনের জনপ্রিয়তায় কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৭ শতাংশ তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। তাঁর জনপ্রিয়তার এ হার আগে ১৩ শতাংশ ছিল। সম্প্রতি লুক্সনকে রক্ষণশীল ন্যাশনাল পার্টির নেতা করা হয়েছে।
অবশ্য ২০২৩ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কারা জয়ী হবে, সে প্রশ্নে জেসিন্ডার মধ্য–বামপন্থী জোট সরকারই এগিয়ে রয়েছে জরিপে। তবে জেসিন্ডার দল লেবার পার্টি ও লুক্সনের দল ন্যাশনাল পার্টির জনপ্রিয়তার ব্যবধান পাঁচ ধাপ কমেছে। জেসিন্ডার দলকে সমর্থন করে ৪০ শতাংশ মানুষ আর লুক্সনের দলকে সমর্থন করে ৩২ শতাংশ মানুষ।
২০১৯ সালের শেষের দিকে জেসিন্ডার জনপ্রিয়তা কমতে দেখা গিয়েছিল। তখন মাত্র ৩৬ শতাংশ মানুষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে পছন্দ করতেন। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনের তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়ে রেকর্ড ৬৩ শতাংশে পৌঁছায়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাফল্যের কারণে তখন বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।
সমালোচকদের অভিযোগ, করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ধরন ডেলটা ও অমিক্রন–সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথেষ্ট দ্রুত সময়ের মধ্যে নীতিমালা প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছেন জেসিন্ডা। কঠোর সীমান্ত নীতিমালা আরোপ নিয়েও তাঁর প্রতি অনেকের অসন্তোষ রয়েছে। এ ধরনের নীতির কারণে বিদেশে থাকা দেশটির নাগরিকদের বাড়িতে ফেরা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
জেসিন্ডা আরডার্নের সমর্থকেরা অবশ্য করোনা মহামারিতে কমসংখ্যক মৃত্যুর ঘটনাকে জেসিন্ডার সাফল্য হিসেবে বারবার সামনে নিয়ে আসতে চান। ৫০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ নিউজিল্যান্ডে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডে সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটিতে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ৫৯ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আবাসন বাজারে অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডে বাড়ির দাম ২৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এতেও জেসিন্ডার জনপ্রিয়তার ওপর প্রভাব পড়েছে। যাঁরা বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন থেকে জেসিন্ডাকে সমর্থন দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন।