জর্ডানের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) করোনাভাইরাসে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় চিকিৎসকদের ম্যালেরিয়া রোগের ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের অগ্রবর্তী অবস্থায় অন্যান্য অ্যান্টিভাইরালের সঙ্গে এই ওষুধ দেওয়া যাবে।
সম্প্রতি ফ্রান্সের গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন অ্যান্টিভাইরালের সঙ্গে ব্যবহার করলে সেটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কার্যকর হতে পারে। কয়েক দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করা হয়।
জর্ডানের এফডিএর প্রধান চিকিৎসক হায়েল ওবেদাত আল-জাজিরাকে বলেছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান গতকাল রোববার হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা উদ্ধৃত করে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের আইনি বৈধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
হায়েল ওবেদাত বলেন, চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে অন্যান্য অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসার সঙ্গেই কেবল হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করা যাবে। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত স্টেজ-২-এর রোগীরা অথবা যাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাঁদের ক্ষেত্রেই এই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
ওবেদাত বলেন, তিনি বিভিন্ন ওষুধের দোকানে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, যাতে যেসব রোগীর এই ওষুধ নিতান্ত প্রয়োজন, তাঁরা তা পেতে পারেন। ওবেদাত বলেন, কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় সবার ক্ষেত্রে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
জর্ডানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাদ জাবের গতকাল রাতে টেলিভিশনে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, করোনাভাইরাসে আরও ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১১২। জর্ডানের রাজধানী আম্মান ও ডেড সি এলাকার হোটেলগুলোয় পাঁচ হাজার মানুষকে সরকারিভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত বৃহস্পতিবার জর্ডান সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। দেশটিতে গত শনিবার কারফিউ জারি করা হয়েছে।
জর্ডানের নামকরা হাসপাতাল কিং হোসেন ক্যানসার সেন্টারের প্রধান চিকিৎসক আসেম মনসুর বলেন, ফ্রান্সের গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা পুরোপুরি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। যা-ই হোক, একেবারে শেষ উপায় হিসেবে রোগীর ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।
জর্ডানের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিষয়ের এক অধ্যাপকের আশঙ্কা, দেশটিতে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অধ্যাপক বলেন, সরকার এখনো করোনাভাইরাস শনাক্তে যথেষ্ট পরীক্ষা করতে পারছে না। তিনি বলেন, জর্ডানে এখন পর্যন্ত কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। তবে বয়স্ক যাঁরা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা ঝুঁকিতে আছেন।
কিং হোসেন ক্যানসার সেন্টারের প্রধান চিকিৎসক মনসুর বলেন, তাঁর আশা, জর্ডান দ্রুত এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারবে। কারণ, দেশটির বেশির ভাগ জনগোষ্ঠী তরুণ। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে না।