মিয়ানমারে ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা ‘এনইউজি’ নামে যে ছায়া সরকার গঠন করে, তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন জি মা অং। গত ১৭ জুন মিয়ানমারের গোপন অবস্থান থেকে বাংলাদেশের একদল গবেষক ও সাংবাদিকের সঙ্গে সে দেশের পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা প্রশ্নে বিস্তারিত কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাত্কার গ্রহণকারী দলে ছিলেন আশফাক রণি, আলতাফ পারভেজ, আশফাক আনুপ ও শফিকুল আলম।
প্রশ্ন: মিয়ানমার সেনাবাহিনী এনইউজিকে অবৈধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন বলছে। এ অবস্থায় আপনারা কীভাবে কাজ করছেন সেখানে?
জি মা অং: মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রথমে ২০২০ সালের সুষ্ঠু নির্বাচনের ফল ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রত্যাখ্যান করে। তারপর তারা প্রথম সংসদীয় অধিবেশন আটকে দিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। অন্যদিকে, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা এনইউজি ২০২০ সালের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। আপনারা কাকে অবৈধ মনে করেন? যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত, তাদের? নাকি যারা জনগণের ওপর সহিংস আক্রমণ ও উত্পীড়ন চালাচ্ছে, তাদের? কে অবৈধ ও কে জনগণের ওপর উত্পীড়ন চালাচ্ছে, তা সবার কাছে পরিষ্কার। আপনার প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশে আসি। এনইউজি মিয়ানমার সীমানায় প্রতিষ্ঠিত। আমাদের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য দেশের অভ্যন্তরে জনগণের সঙ্গে রয়েছে। তবে খুব গোপনে কাজ করতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: কিন্তু এনইউজি কূটনৈতিক স্বীকৃতি অর্জনে বেগ পাচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর এখন পর্যন্ত কয়টি দেশ আপনাদের স্বীকৃতি দিয়েছে?
জি মা অং: স্বভাবিক অবস্থায় একটি রাষ্ট্রে নতুন সরকার গঠিত হলে অন্য দেশ স্বীকৃতি দেয়। সেই অর্থে আমরা এখনো কূটনৈতিক স্বীকৃতি পাইনি। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমরা রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত। কূটনৈতিক স্বীকৃতি না পেলেও আমরা রাজনৈতিক স্বীকৃতি পাচ্ছি, যা সামরিক জান্তা পাচ্ছে না। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো না হলেও মিয়ানমারের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা আমন্ত্রিত হয়েছি। বেশ কয়েকজন আসিয়ান নেতার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নিয়েছি। গত ছয় মাসে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের তাত্পর্যপূর্ণ অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বেড়েছে। কিছু দেশের সঙ্গে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবেও জড়িত।
প্রশ্ন: পশ্চিমা সরকারগুলো সামরিক সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে, কিন্তু এনইউজির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও সন্দিহান মনে হচ্ছে—
জি মা অং: আমরা তাদের সন্দেহের কারণগুলো অনুধাবন করি। এনইউজির পরিকল্পনা ও কাজের কৌশল সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণে এমন হতে পারে। গত বছর মহামারির কারণে আমরা কোথাও যেতে পারিনি। সামনাসামনি বসে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সুযোগ হয়নি। পশ্চিমা দেশগুলো আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কৌশল সম্পর্কে কম অবগত।
জাতিগত, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু সমস্যা বিদ্যমান। আমরা সব জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ভবিষ্যৎ মিয়ানমার গঠনের ব্যাপারে আলোচনা করছি। ফেডারেল ডেমোক্রেসির ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক রোডম্যাপ তৈরির কাজ চলছে। অতীতে আমরা মিয়ানমারের সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছি—রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সবকিছুতে সামরিক বাহিনীর একচ্ছত্র আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। সে কারণে সফল হইনি। আমরা এখন চলমান বিপ্লবের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে রাজনীতি থেকে চিরতরে সরাতে চাই। তারপর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে জাতি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই। আমাদের পরিকল্পনাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাব। তখন তাদের সন্দেহের অবসান ঘটবে।
প্রশ্ন: গত মাসে আপনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। পশ্চিমারা বারবার ‘মিয়ানমারের জনগণ’কে সহযোগিতার কথা বলছে, কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে এনইউজিকে সহায়তার ব্যাপারে কিছু বলছে না। সামরিক সাহায্যের ব্যাপারে কি পশ্চিমের কাছ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি পেলেন?
জি মা অং: ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের বিপ্লব শুরু। কোনো দেশ আশা করেনি আমাদের সংগ্রাম এত দিন টিকবে। ধারণা করা হয়েছিল প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিবাদকারীদের সামরিক বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে থামিয়ে দেবে। কিন্তু এবারের বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। গত ৫ থেকে ১০ বছরে জনগণ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বাক্স্বাধীনতায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠায় সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যাপারে জনসাধারণের এবারের যে প্রতিক্রিয়া, তা সামরিক বাহিনীর হিসাবে মেলেনি।
আমরা নিজেদের ‘সরকার’ বলে দাবি করছি—আমাদের শক্তির উত্স তাই জনগণ বলেই মনে করি। আমাদের প্রধান সমর্থন দরকার জনগণের কাছ থেকে। সে সমর্থন আমরা এনইউজি এবং আমাদের বাহিনী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স বা পিডিএফ পাচ্ছে। মিয়ানমারের প্রবাসীরা লাখ লাখ ডলার পাঠাচ্ছে আমাদের। বিদেশি সমর্থন ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে অনেক দেশ কূটনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে নির্দিষ্টভাবে আমাদের নাম উল্লেখ না করে ‘মিয়ানমারের জনগণ’-এর পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছে। আমরা তাদের বাস্তবতা বুঝি। তবে আমাদের সুনির্দিষ্ট সহযোগিতা প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে। তার মধ্যে আছে সামরিক পরামর্শ। অস্ত্র বা যুদ্ধ সরঞ্জামের চাহিদার ব্যাপারে এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে পিডিএফকে পেশাদার, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা সচেষ্ট। সেখানে আন্তর্জাতিক সহায়তাও প্রয়োজন।
প্রশ্ন: পিডিএফের দখলে কি এই মুহূর্তে মিয়ানমারের কোনো ভূখণ্ড আছে?
জি মা অং: হ্যাঁ, মিয়ানমারের ভেতরে আমাদের দখলকৃত ভূখণ্ড আছে। অনেক জেলা আমাদের দখলে আছে। এই জেলাগুলো আমাদের ঘাঁটি হিসেবে কাজ করে। সেসব জায়গায় আমরা বিদ্যালয় চালাই। প্রশাসনও আছে। বিচারকাজসহ বহু কিছু চলে। যদিও রাজধানী ও কাছের এলাকাগুলো এখনো সেনাবাহিনীর দখলে আছে, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব এলাকায় অস্থায়ী ক্লিনিকও আছে আমাদের। আমরা এই মুহূর্তে চেষ্টা করছি এসব অঞ্চলে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে। মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে আমাদের ভূখণ্ডগত নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী। এসব অঞ্চলে সেনাবাহিনী মাঝেমধ্যে ঝটিকা আক্রমণ করে গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, ফসল পুড়িয়ে দেয়। তবে শেষমেশ তাদের পিছু হটতে হয়।
প্রশ্ন: চীন অতীতে এনএলডি সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখত। অথচ এই মুহূর্তে তারা সামরিক সরকারকে সহায়তা করছে! এটা কেন হলো?
জি মা অং: আমরা যদি মিয়ানমারের আগের সেনা অভ্যুত্থানগুলোর সঙ্গে তুলনা করি, চীন এবার প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর প্রতি নিজেদের সমর্থন ঘোষণা করেনি। তারা বুঝতে পারছে, এটা কেবল দুটি রাজনৈতিক শক্তির সংঘাত নয়। এই সংঘাত সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারে বাদবাকি সব রাজনৈতিক শক্তির। তাই নিকট প্রতিবেশী হিসেবে চীন মিয়ানমারের স্থিতিশীলতার জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেলেও তারা বুঝতে পারছে, শুধু সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ এখনো এনইউজি সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এনইউজি কেন এই স্বীকৃতি অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে?
জি মা অং: প্রতিবেশী সবার সঙ্গে যোগাযোগে আমরা মিয়ানমারে অবস্থিত দূতাবাসগুলোকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করি। আমাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরুর পরপর আমরা এখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করি। যেহেতু আমরা ই–মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করি, এমনটা হতে পারে আমাদের বার্তাটি প্রযুক্তিগত কারণে বা স্প্যাম ফোল্ডারে চলে যাওয়ায় দূতাবাসের দৃষ্টিগোচর হয়নি। কিন্তু আমাদের কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত অনুসারে আমরা সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। যদিও আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্তর পাইনি, তারপরও আমরা ওয়াশিংটনে অবস্থানরত আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমেও বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। আমরা মনে করি, তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী।
প্রশ্ন: আপনার মন্ত্রণালয় থেকে কি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল?
জি মা অং: না, হয়নি। আমরা চেষ্টা করেছি কূটনৈতিক প্রটোকল মেনে চলতে। এ কারণে সরাসরি যোগাযোগের পরিবর্তে দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছে।
প্রশ্ন: ভারত কি সামরিক সরকারের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আছে?
জি মা অং: সব দেশ উভয় দিকে ভারসাম্য রক্ষা করে কাজ করছে। রাজনৈতিক নীতিবাক্যের পরিবর্তে বোধগম্য কারণেই বিভিন্ন দেশ, বিশেষত আঞ্চলিক শক্তিগুলো বাস্তববাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাগুলো দেখছে। এক পক্ষকে প্রকাশ্য সমর্থনদান অন্য পক্ষকে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে ঠেলে দিতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে তারা সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে সতর্ক।
ভারতের ব্যাপারে বলব, তারা আঞ্চলিক শক্তি এবং যেহেতু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা থাকা তাদের জন্যও দরকার, তাই তারা বিভিন্ন উপায়ে সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে মনে করি।
প্রশ্ন: আসিয়ানের সর্বশেষ অবস্থান কী?
জি মা অং: আসিয়ান সদস্যদের কেউ সেনাবাহিনীকে সমর্থন করছে, কেউ করছে না। তবে এই দেশগুলোর একটি প্রধান মিলের জায়গা আসিয়ান সনদ। সামরিক জান্তা আসিয়ান সনদের মূলনীতি লঙ্ঘন করেছে বলেই আসিয়ান সদস্যরা সামরিক জান্তাকে রাজনৈতিক স্বীকৃতি না দেওয়ার মতো অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপরও আমি বলব, আসিয়ান সনদের ভিত্তিতে মিয়ানমারের ব্যাপারে যে পাঁচ দফা ঐকমত্য হয়েছিল, তাতে জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে, সেটা কাজও করেনি।
প্রশ্ন: আপনি মিয়ানমারের জাতিগত বৈচিত্র্যের ব্যাপারে বারবার বললেন। বর্তমানে সেখানে ১৩৫টি স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা সেই তালিকায় নেই। এনইউজি কীভাবে এ সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা করছে?
জি মা অং: এনইউজি এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একটা বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার করেছে। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমাদের বেশ কিছু আইন বাতিল করতে হবে, সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষত, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন একটি বৈষম্যমূলক আইন, যা কেবল সংখ্যালঘু নয়, বরং সবার জন্য নেতিবাচক। আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। আমরা ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করব, সংবিধান সংশোধন করব এবং নতুন অন্তর্ভুক্তিমূলক আইন করব। বর্তমানে মধ্যবর্তী সময়ে আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদে ফেরার জন্য রাখাইন অঞ্চলের স্থানীয় অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছি।
প্রশ্ন: রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করার একটি প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় তরফ থেকে। এভাবে রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ নামে পরিচিত করার প্রবণতাকে এনইউজি কীভাবে দেখে?
জি মা অং: আমরা তাদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবেই উল্লেখ করি। আমরা বিশ্বাস করি, তাদের আত্মপরিচয় নির্ধারণের অধিকার আছে। যে নামে তারা নিজেদের পরিচয় দিতে চায়, সে নামেই তাদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। আপনারা নিশ্চই জানেন, এর আগে সংসদে সেনাসমর্থিত দলটি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। তার পরিবর্তে ‘বাঙালি’ শব্দ ব্যবহারের দাবি করেছিল। যে কারণে আমাদের এমন একটি পরিভাষা গ্রহণ করতে হয়, যা কি না এই দুই শব্দের কোনোটিই নয়। কিন্তু বর্তমানে আমরা সেই অস্পষ্ট অবস্থান থেকে সরে এসেছি।
প্রশ্ন: কিন্তু মিয়ানমারের ভেতরে বাঙালিবিদ্বেষী মানসিকতা বিদ্যমান বলে মনে হয়?
জি মা অং: এই বাঙালিবিদ্বেষ ক্রমে তৈরি হয়েছে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর আমলে। আমরা এ–ও দেখেছি, এটাকে কাঠামোগতভাবে সামাজিকীকরণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন: অর্থাৎ আপনি অস্বীকার করছেন না, মিয়ানমারের জনসমাজে ‘বাঙালিবিদ্বেষী ঘৃণা’ আছে?
জি মা অং: যখন আমি পূর্ববর্তী সরকারগুলোর কথা বলেছি, আমি বুঝাতে চেয়েছি, পূর্ববর্তী ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও সামরিক সরকারগুলোর কথা। সমাজতান্ত্রিক ও সামরিক সরকারগুলো ওসব করেছে। তবে ইতিমধ্যে সামাজিক প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে যাওয়ায় বেসামরিক সরকারের পক্ষেও এই প্রবণতার বিরুদ্ধে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে গেছে।
বাঙালিবিদ্বেষী পরিভাষাগুলো অতীতে রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়মিত ব্যবহৃত হয়েছে। তা শিক্ষায় ঢোকানো আছে, ইতিহাস বইতে আছে। এমনকি সমাজতান্ত্রিক সরকারের সময় সামরিক অভিযান হয়েছে এর ভিত্তিতে। তা ছাড়া এর পেছনে উন্নয়ন, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক কারণ বিদ্যমান। রাখাইন প্রদেশ দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল, যা একই সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্নও বটে। সেখানে কী হচ্ছে, ইয়াঙ্গুনের জনগণের পক্ষে তা জানা সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমরা চেষ্টা করছি এ রকম অঞ্চলগুলোর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবোধের সমাধান করতে। তবে এটা সত্যি, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের পরও সেখানে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর ওপর নিপীড়ন হয়েছে।
প্রশ্ন: রাখাইন বা আরাকানে আমরা অনেক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আপনার মতে এই অঞ্চলের প্রধান সংকট কোথায়?
জি মা অং: সবচেয়ে বড় সমস্যা যোগাযোগব্যবস্থার অভাব, দুর্গম ও জবাবদিহির অভাব। উদাহরণস্বরূপ বলছি, আমি সংসদে থাকার সময় রাখাইন প্রদেশে সীমান্তবেষ্টনী নির্মাণের জন্য বাজেট চাওয়া হলো। সেটা নির্মাণের দায়িত্ব ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সামরিক বাহিনীর। আমরা নির্বাচিত সংসদ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও আমাদের পক্ষে সেখানে যাওয়া বা তদারক করা বা কোনো ধরনের জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল না।
কাজগুলো সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত ছিল। দ্বিতীয়ত, আমাদের কোনো সাংবিধানিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের জায়গাও ছিল না, যা দ্বারা সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। আমাদের কাজ করতে হতো ২০০০ সালের সংবিধান অনুসারে, যা সেনাবাহিনীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয় এ ধরনের সিদ্ধান্ত ও কাজে। সুতরাং আমি বলব, রাখাইনে দুর্গমতা ও জবাবদিহির অভাব মূল চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন: সেখানে দুই জাতিগোষ্ঠী, রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের জায়গা স্পষ্ট। এ অবস্থায় আরাকানে টেকসই শান্তিরক্ষার ব্যাপারে আপনাদের কৌশল কী?
জি মা অং: দুই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এসব সম্প্রদায়ের নেতাদের এ বিষয়ে ভূমিকা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু রাখাইন প্রদেশের জন্য নয়, মিয়ানমারের সব প্রদেশের জন্য এই বাস্তবতা বিদ্যমান। রাজনৈতিক ও স্থানীয় নেতাদের সবাইকে এই সামাজিক সংহতির প্রয়োজনীয়তা মাথায় রাখা উচিত। এই সংহতি নির্মাণের জন্য শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যাতে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী একে অপরকে চেনে, একে অপরের পরিচয়ের ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল হয়। এই যোগাযোগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে পারস্পরিক বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়, যা কখনোই করা হয়নি আগে; বরং এই প্রয়োজনকে আড়াল করা হয়েছে।
প্রশ্ন: রোহিঙ্গারা এনইউজির ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সাবধানী। আপনার কি মনে হয়, রোহিঙ্গাদের হৃদয় ও মন জয় করতে এনইউজি যথেষ্ট কিছু করেছে?
জি মা অং: আমরা হয়তো এখনো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর হৃদয় ও মন জয় করতে শতভাগ সফল হইনি। আমরা এ–ও জানি, আমাদের প্রতি তাদের একটি বড় প্রত্যাশার জায়গা আছে। এ কথা সত্যি যে সামাজিক নিরাপত্তা, সমাজ ও জাতি গঠনের যেসব প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া দরকার, তার সব আমরা এখনো গ্রহণ করতে পারিনি। সেগুলো ক্রমে সফল করতে পারলে রোহিঙ্গারা আমাদের সমর্থন দেবে। আমি একই সঙ্গে এ–ও জানিয়ে রাখতে চাই, তাদের সমর্থন আমাদের জন্য খুব গঠনমূলক হবে।
প্রশ্ন: আপনি জানেন, অং সান সু চি নিজে রোহিঙ্গা গণহত্যা চলাকালে সহযোগী ভূমিকায় ছিলেন। এ রকম আরও ব্যক্তি আছেন এনইউজিতে। এ ধরনের সব ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভায় রাখা সত্ত্বেও আপনার কেন মনে হয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আপনাদের মানবাধিকার ও সমানাধিকার–বিষয়ক কথায় বিশ্বাস করবে?
জি মা অং: এ জন্যই আমি স্বীকার করেছি, রোহিঙ্গাদের আমাদের ব্যাপারে কিছু সন্দেহ থাকা স্বাভাবিক। সময়ই বলে দেবে আমরা তাদের কাছে নিজেদের উদ্দেশ্যের সততা প্রমাণ করতে পারব কি না। আমাদের সংবিধান সংশোধন, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়নের দিকে এগোতে হবে। তবে সেই সঙ্গে এ–ও মাথায় রাখতে হবে, আমরা সংসদে থাকাকালে মাঠপর্যায়ের যত প্রতিবেদন আমরা পেতাম, তার সবই সেনাচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে, যা হয়তো অনেকের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতে সাহায্য করেছে। আজ যখন আমরা দেখছি, একেবারে মূল ভূমিতেই সেনাবাহিনী চূড়ান্ত বর্বরতা দেখাচ্ছে, তখন বুঝতে বেগ পেতে হয় না, দূরবর্তী সীমান্ত অঞ্চলগুলোয় তারা কতটা নৃশংসতা চালাতে পারে।
প্রশ্ন: জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা নির্যাতনকে ‘গণহত্যা’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। আপনারা কি সত্যি বিশ্বাস করেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও এনএলডি সরকার রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত ছিল?
জি মা অং: যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি জাতিসংঘ স্বাধীন মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বীকৃতি দিয়েছে—মিয়ানমারেও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা হয়েছে। গণহত্যা সংঘটনের সব ধাপ সম্পন্ন হয়েছে—এমনটা বলা হয়েছে। তবে আমি বলব, এ গণহত্যা সংঘটিত করেছে সেনাবাহিনী। যুক্তরাষ্ট্র এমনটা বলেনি যে, এ গণহত্যার পেছনে মিয়ানমারের সমাজ বা জনসাধারণের ভূমিকা আছে। এ ব্যাপারে স্পষ্ট থাকা দরকার, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী’ এই গণহত্যা করেছে, মিয়ানমারের জনগণ নয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ডের অধীন যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই এ গণহত্যা ঘটানোর প্রক্রিয়ায় ছিলেন।
প্রশ্ন: পারস্পরিক বিশ্বাস স্থাপনের জন্য এনইউজি কি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে?
জি মা অং: রোহিঙ্গারা যেহেতু রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দা এবং রাখাইন প্রদেশে আমাদের ভূখণ্ডগত নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই আমরা চেষ্টা করছি রাখাইন সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে এক ধরনের ঐকমত্যে পৌঁছাতে। আমাদের সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তোলা। তাই রাখাইন প্রদেশের অন্যদের বাদ দিয়ে আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারি না। সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করলে তা শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, মাঠেও আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। তাই রাখাইনের সবার সঙ্গে আলোচনা না করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিতে যেতে পারছি না।
প্রশ্ন: সম্প্রতি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে নতুন করে আলাপ হচ্ছে। বাংলাদেশ আশা করছে, এ বছরের কোন এক সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। আপনারা কি মনে করেন বর্তমান অবস্থা এ কাজের জন্য অনুকূল?
জি মা অং: আমি মনে করি না সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের ফেরার নিশ্চয়তা দিতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে তারা রাজনৈতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। রাজনৈতিক লাভের জন্য তারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে পারে। মিয়ানমারের চলমান অস্থিতিশীল পরিবেশে রোহিঙ্গাদের তারা কীভাবে সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে আনবে? তাদের ফিরিয়ে আনলে জীবিকার কী ব্যবস্থা হবে? তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের জন্য কী ব্যবস্থা হবে? রোহিঙ্গারা মানুষ। তারা কোনো বস্তু নয় যে যেনতেনভাবে ফিরিয়ে আনা যায়। সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গারা তাদের কারণে পালিয়েছে। এখন তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত আনবে? এ কথা আপনারা বিশ্বাস করেন? এ ব্যাপারগুলো বাংলাদেশকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার। আমি মনে করি না জান্তা সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আন্তরিক।
প্রশ্ন: এনইউজি বাংলাদেশের কাছ থেকে কী আশা করে এবং আপনারা বাংলাদেশকে কী দিতে পারেন?
জি মা অং: মিয়ানমার সেনাবাহিনী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। তারা মিয়ানমারের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। আমরা আশা করব বাংলাদেশ তাদের স্বীকৃতি দেবে না। ২০২০ সালের নির্বাচন উন্মুক্ত ও সুষ্ঠু হয়েছে। সেনাবাহিনী সে নির্বাচনকে অস্বীকার করে ২০২৩ সালে নতুন নির্বাচন করতে চাইছে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ তাদের এই প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানাবে না। আমরা ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও বাণিজ্য বাড়াব। রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে আন্তরিক উদ্যোগ নেব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ সরকার আপনাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে, যদি সাহায্য করতে চায়?
জি মা অং: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা জরুরি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আর্থিক লেনদেন বন্ধ হওয়া জরুরি। তাই তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখা উচিত হবে না। আমরা চাই আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের সমর্থন করুক। বাংলাদেশ জাতিসংঘে আমাদের সমর্থন করতে পারে। জাতিসংঘে আমাদের স্থায়ী প্রতিনিধি চ ম তুকে তাঁর পদাধিকার ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। আমরা চাই বাংলাদেশ আঞ্চলিক সংস্থাগুলোয় জান্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করুক।
প্রশ্ন: রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ আরসা ও আরএসওর ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী?
জি মা অং: আমরা তাদের কাজের কৌশল ও লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত নই।
প্রশ্ন: যদি ক্ষমতা ফিরে পান, তখন কি বাংলাদেশকে বরাবরের মতো ‘দূরের প্রতিবেশী’ বিবেচনা করবেন?
জি মা অং: আমাদের বৈদেশিক নীতি স্বাধীন ও প্রগতিশীল। আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ভালো করছে! আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত ও নৌপথে বাণিজ্য বাড়াতে চাই। আমাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য বাণিজ্য জরুরি।
প্রশ্ন: ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আপনি কি তাদের দেখতে বাংলাদেশে আসবেন?
জি মা অং: এটা আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে। নিরাপত্তার কারণে এখনই বাংলাদেশে সফর করতে পারছি না। তবে আমরা কোনো এক সময় তাদের দেখতে যাব।