ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ প্রশ্নে সম্পাদিত চুক্তি যুক্তরাজ্যের সংসদে পাস হবে না বলেই ধরে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদের প্রস্তুতি নিতে শুরু হয়েছে তোড়জোড়।
গতকাল বুধবার ইউরোপীয় কমিশন পারস্পরিক পণ্য ও সেবার পরিবহন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সচল রাখাসহ মোট ১৪টি পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। এর আগের দিন মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদও চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদের প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ইইউ বলছে, যুক্তরাজ্য চুক্তি ছাড়াই ছিটকে পড়লে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যান্য আদান-প্রদানে যে আকস্মিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে—তার পুরোটা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে গৃহীত ব্যবস্থা সেই ক্ষতি কমিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।
ইউরোপীয় কমিশনের বুধবার ঘোষিত প্রস্তুতির মধ্যে পরিবহন, শুল্ক ব্যবস্থাপনা (কাস্টমস), তথ্য সুরক্ষা (ডেটা প্রোটেকশন), প্রাণী স্বাস্থ্য, জলবায়ুসংক্রান্ত নীতি এবং গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সেবাসহ মোট ৮টি খাতের উল্লেখ রয়েছে। প্রায় সব ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বর্তমান ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে, যাতে কোনো কিছু হুট করে স্থবির হয়ে না পড়ে।
ইইউ বলছে, চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ হলে মৌলিক যাতায়াত বজায় রাখার স্বার্থে ১২ মাস পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে এবং ব্রিটিশ বিমান ইইউর আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে। সড়কপথে পণ্যের পরিবহন অব্যাহত থাকবে ৯ মাস পর্যন্ত। যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবা খাতের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে দুই বছর পর্যন্ত ইইউর সমকক্ষ বলে বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ইইউ নাগরিকদের যেভাবে বিবেচনা করবে ঠিক সেভাবেই ব্রিটিশ নাগরিকদের বিবেচনার কৌশল নিয়েছে ইইউ। আর ব্রিটিশ নাগরিকেরা ৯০ দিনের জন্য ইইউভুক্ত দেশে ভিসা ছাড়াই যাতায়াত করতে পারবেন।
ইইউ বলছে, এসব ঘোষণা কোনো চুক্তি নয়। এসবের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য সদস্য হিসেবেও বিবেচিত হবে না। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই ইইউ যেকোনো সময় এসব সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবে। বিবিসির ব্রাসেলস প্রতিনিধি অ্যাডাম ফ্লেমিং ইইউর ঘোষণাকে বেশ ইতিবাচক এবং প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি নমনীয় বলে মন্তব্য করেছেন।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্য সরকার চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকারি দপ্তরগুলোকে অতিরিক্ত দুই বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছে। আছে সাড়ে তিন হাজার সেনা প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত। সম্ভাব্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো সচল রাখতে এসব সেনাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া ১ লাখ ৪০ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছে সরকার চিঠি দিয়েছে, যাতে তারা চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এর আগে যুক্তরাজ্য সরকার প্রতিটি খাতে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের প্রভাব উল্লেখ করে আলাদা আলাদা নির্দেশিকা প্রকাশ করে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইইউর সঙ্গে যে বিচ্ছেদ চুক্তি সম্পাদন করেছেন, সেটিকে যুক্তরাজ্যের স্বার্থবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির অনেক এমপি। বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি সরকারি দলের অনেক এমপি এই চুক্তির বিরোধী। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থন না পেলে এ চুক্তি কার্যকর হবে না।
১১ ডিসেম্বর এই চুক্তি নিয়ে সংসদে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তিটি পাস হবে না—এমন আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী মে শেষ মুহূর্তে সেই ভোট পিছিয়ে দেন। চুক্তি বদলের অনুরোধ নিয়ে তিনি ইইউতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেও ফিরেছেন শূন্য হাতে। এসব নিয়ে যুক্তরাজ্যের রাজনীতি এখন সরগরম। আগামী ১৪ জানুয়ারি চুক্তির ওপর ভোটাভুটির নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন মে। তবে চুক্তি পাস না হওয়ার শঙ্কা রয়েই গেছে।
এই কারণে চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদ প্রস্তুতির পাশাপাশি বিকল্প কোনো চুক্তি করা যায় কি না, সেটি নিয়েও আছে আলোচনা। আছে নতুন করে গণভোট আয়োজনের দাবিও। তবে বিচ্ছেদের সময় ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে। আগামী ২৯ মার্চ এই বিচ্ছেদ কার্যকর হবে বলে দিনক্ষণ ঠিক করা আছে।