গ্যাভিন ও অ্যালিস মুনরো দম্পতির বাস ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ডস এলাকায়। দুই একর জমিতে অভিনব এক খামার তৈরি করেছেন তাঁরা। তাঁদের খামারে গাছ কেটে আসবাব বানানোর বদলে গাছকেই চেয়ার বা অন্য আসবাবের আদলে বাড়িয়ে তোলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, ডার্বিশায়ারে এই দম্পতির আসবাবের একটি খামার রয়েছে। সেখানে তাঁরা ২৫০টি চেয়ার, ১০০টি প্রদীপ ও ৫০টি টেবিলের আদলে গাছ বড় করে তুলছেন। আসবাবপত্র তৈরির জন্য পরিণত গাছ কেটে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ানোর বিকল্প হিসেবে এই পদ্ধতি বের করেছেন তারা।
গ্যাভিন বলেন, ‘৫০ বছর অপেক্ষা করে একটা গাছকে বড় করে তুলতে হবে। তারপর সেই গাছটিকে কেটে টুকরো টুকরো করতে হবে। তার চেয়ে বরং আপনি যে আকারে চান তা সেই আকারেই একটি গাছকে বড় করুন। এটিকে এক ধরনের থ্রি-ডি প্রিন্টিং বলা যেতে পারে।’
ছোটবেলায় চেয়ারের মতো দেখতে অতিবৃদ্ধ একটি বনসাই গাছে চোখ আটকে যায় গ্যাভিনের। তখনই এমন একটি উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা আসে তাঁর মাথায়।
জন্মগতভাবেই গ্যাভিনের মেরুদণ্ড বাঁকা ছিল। পিঠ সোজা করতে বেশ কয়েক বছর ধাতব ফ্রেম পরে থাকতে হয় তাঁকে। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাকর্মীরা দারুণ প্রতিভাবান ছিলেন। নার্স, চিকিৎসকদের মায়া আর দক্ষতা আমাকে সত্যিই খুব প্রভাবিত করেছিল। আমি যত্ন ও যোগ্যতা এক করতে চেয়েছিলাম। সেই কাজটিই আমরা এখানে করছি।’
৪৪ বছর বয়সী গ্যাভিন ২০০৬ সাল থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। মধ্য ইংল্যান্ডের পিক ডিসট্রিক্টে দুটি ছোট জমিতে চেয়ারের আদলে গাছ বড় করার চেষ্টা করেন তিনি। তবে ২০১২ সালে, বিয়ের এক বছর পরে গ্যাভিন ও অ্যালিস ‘ফুল গ্রোন’ নামের সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর থেকেই তাঁরা এ ধারণা নিয়ে পুরো দমে এগিয়ে চলেন।
চলার পথে অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে তাঁদের। খরগোশের গ্রাসে আর গরুর পদদলনে গাছ শেষ হয়েছে।
গাছের বৃদ্ধির ওপর জোর না খাটিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত আকৃতি দেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় আবিষ্কার করতে হয় এই দম্পতিকে। গাছগুলোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর না করে তাদের সঠিক দিকে বেড়ে ওঠার দিকনির্দেশনা দেওয়ার পদ্ধতি তাঁরা শিখে গেছেন।
জৈবিক পদ্ধতিতে বেড়ে ওঠে বলে এসব আসবাব দামে সস্তা—এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। বাড়তি শ্রম এবং সময়ের জন্য খরচটা একটু বেশি পড়ে যায়। এখানে প্রতিটি চেয়ার ১০ হাজার পাউন্ডে, প্রদীপ ৯০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ পাউন্ডে এবং টেবিলগুলো ২ হাজার ৫০০ থেকে সাড়ে ১২ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়।
চেয়ারের আদলে একটি গাছ বড় করে তুলতে গড়ে ছয় থেকে নয় বছর সময় লাগে। এরপর শুকানোর জন্য লাগে আরও এক বছর। সংস্থাটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রকল্প হাতে পেয়েছে ২০৩০ সালকে লক্ষ্য করে। অবসর নিতে যাওয়া এক গ্রাহকের জন্য একটি চেয়ার বানাচ্ছে তারা।
আমাজন ও কঙ্গো অববাহিকায় আগুন লাগার ঘটনায় সম্প্রতি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমির দুর্দশা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাভিন বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, আমরা বনজ সম্পদের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি করছি। আমরা কেবল এটি বুঝতে শুরু করেছি। তাই আমরা প্রস্তর যুগের অনুসরণে প্রাচীন কৌশল ব্যবহার করি।’ প্রাচীন রোম, চীন ও জাপানের অধিবাসীরা পছন্দসই আকারে গাছ বড় করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর আসবাবের আদলে গাছ উৎপাদন করতে পারবেন বলে আশা করছেন গ্যাভিন ও অ্যালিস।
গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য একটি খামার কিনতে চান তাঁরা। অন্যদের পরামর্শ দিয়ে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে চান। এটি তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এখনকার জন্য অ্যালিস একটি নতুন ডাইনিং সেট চান। এতেও অবশ্য কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগবে।