আগে আরও কয়েক দফায় গোপন অর্থ লেনদেনের তথ্য ফাঁস হয়েছে। তবে আগের যেকোনোটির চেয়ে এবার বিভিন্ন দেশের সাবেক–বর্তমান নেতাদের প্রায় তিন গুণ গোপন লেনদেনের তথ্য বের হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বেনামে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে কোটি কোটি ডলারের সম্পদ করছেন। এই প্রক্রিয়ায় তাঁরা বেছে নিচ্ছেন করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত পানামা, দুবাই, মোনাকো, সুইজারল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের মতো দেশ ও অঞ্চলের অফশোর কোম্পানিগুলো। নিজ দেশের জনগণকে ঠকিয়ে এভাবে অন্য দেশে সম্পদ করা ব্যক্তিদের তালিকায় সম্পদশালী দেশগুলোর মতো দরিদ্র দেশের নেতা–প্রভাবশালীরাও রয়েছেন। প্রচলিত বিশ্বব্যবস্থার আড়ালে বিপুল অঙ্কের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য বেরিয়ে এসেছে প্যান্ডোরা পেপারসে।
অর্থ ফিরিয়ে নেওয়ার সময় ওই কোম্পানিতে শচীন টেন্ডুলকারের শেয়ার ছিল ৯, অঞ্জলির ১৪ ও আনন্দ মেহতার ৫টি। টেন্ডুলকারের শেয়ারের মূল্য ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭০২, অঞ্জলির ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৪ এবং শ্বশুরের শেয়ারের দাম ছিল ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৮২ মার্কিন ডলার।
কর ফাঁকি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়ে চেক প্রজাতন্ত্রে ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রে বাবিস। এ বিষয়ে জনতার সঙ্গে রাস্তায়ও নেমেছিলেন তিনি, পেয়েছিলেন জনপ্রিয়তা। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তাও দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের একজন যোদ্ধা হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছিলেন। সব সরকারি কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে বলে ২০১৮ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এখন জানা গেল, তাঁদের দুজনেরই বিদেশে কয়েক কোটি ডলারের গোপন সম্পদ রয়েছে। আন্দ্রে বাবিস বেনামে ফ্রান্সের কান শহরের কাছে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার দিয়ে প্রাসাদ কিনেছেন। আর কেনিয়াত্তা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বেনামে অন্য দেশে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছেন।
বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) দুনিয়াজুড়ে গোপন অর্থ লেনদেনে জড়িত কোম্পানিগুলোর এক কোটির বেশি নথি বিশ্লেষণ করে তথ্য প্রকাশ করেছে। প্যান্ডোরা পেপারস নামে এসব তথ্য ফাঁস করেছে তারা। সেখানে চেক প্রজাতন্ত্র ও কেনিয়ার নেতাদের মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাবেক–বর্তমান মিলিয়ে অন্তত ৩৫ জন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের নাম এসেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, আমলা, জেনারেল ও নানা ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের অবৈধ লেনদেনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
আইসিআইজে বলছে, অধিকাংশ দেশে অফশোরে অর্থ রাখা বা শেল কোম্পানির মাধ্যমে দেশের বাইরে ব্যবসা করা অবৈধ নয়। আন্তর্জাতিক পরিসরের ব্যবসায়ীরা তাঁদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অফশোর কোম্পানির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তবে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সাধারণত যে দেশ থেকে টাকা আয় করা হয়, সে দেশে কর না দিয়ে শুধু কাগজে থাকা কম করের দেশে টাকাটা নিয়ে যাওয়া হয়।
এই তালিকায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইন, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মেকাতি, দুবাইয়ের শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল–মাকতুম, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট গুইলেরমো লাসো, মন্টেনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট মিলো জুকানোভিচ, চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট লুই আবিনাদের রয়েছেন। আছে শ্রীলঙ্কার সাবেক মন্ত্রী নিরুপমা রাজাপক্ষে ও তাঁর স্বামী থিরুকুমার নাদেসানের নাম। পাকিস্তানের একাধিক মন্ত্রী, ভারতের রিলায়েন্স কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যান অনিল আম্বানিসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক, এমনকি ক্রিকেট তারকা শচীন টেন্ডুলকারের নামও রয়েছে এই তালিকায়। বিভিন্ন দেশের মাফিয়ারাও এভাবে তাঁদের অর্থ বিনিয়োগ করছেন। তালিকায় থাকা ১৩০ জনের বেশি ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিলিয়নিয়ারের তালিকায় এসেছেন।
আইসিআইজে বলছে, বিশ্বে যখন কর্তৃত্ববাদী শাসন ও অসমতা বাড়ছে, সেই সময় প্যান্ডোরা পেপারস অনুসন্ধান একটি ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরেছে, যা একুশ শতকে অর্থ ও ক্ষমতা কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তার স্বরূপ উন্মোচন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ধনী দেশগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় আর্থিক গোপনীয়তার একটি ব্যবস্থা কীভাবে বিশ্বজুড়ে আইনের শাসন লঙ্ঘন করছে, তা এখানে উঠে এসেছে।
প্যান্ডোরা পেপারসে দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকেই অফশোর কোম্পানিতে টাকা আসছে। এই প্রক্রিয়ায় মুখ্য ভূমিকা রাখছে অভিজাত প্রতিষ্ঠানসমূহ—বহুজাতিক ব্যাংক, আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠান—যাদের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে।
করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত দ্বীপদেশ ও অঞ্চলভিত্তিক অফশোর সেবাদাতা ১৪টি ফার্মের ১ কোটি ১৯ লাখ গোপন নথি আইসিআইজের হাতে আসে। এসব ফার্ম বিভিন্ন দেশে শেল কোম্পানি গঠন করে গ্রাহকদের পরিচয় গোপন রেখে তাদের আর্থিক লেনদেন করে দেয়। শেল কোম্পানি হচ্ছে একটি বৈধ ব্যবসার খোলস। মূল অর্থের মালিক কে, তা গোপন রাখার পাশাপাশি ওই অর্থের ব্যবস্থাপনা করাই এ ধরনের কোম্পানির কাজ। আইসিআইজের উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের ১৫০টি সংবাদমাধ্যমের ছয় শতাধিক সাংবাদিক ওই সব নথি বিশ্লেষণ করেন। দুই বছর ধরে তাঁরা নথির উৎস, প্রাসঙ্গিক আদালতের নথি ও অন্যান্য সরকারি তথ্য অনুসন্ধান করেন। কয়েক ডজন দেশে তাঁরা এই অনুসন্ধান চালান। আইসিআইজে বলছে, এর আগে যে কয়েক দফায় গোপন অর্থ লেনদেনের তথ্য ফাঁস হয়েছে, তার যেকোনোটির চেয়ে এবার বিভিন্ন দেশের সাবেক–বর্তমান নেতাদের প্রায় তিন গুণ গোপন লেনদেনের তথ্য বের হয়েছে।
এখানে গ্রাহকদের গোপন সম্পদ ব্যবস্থাপনায় জড়িত ৯৫৬টি কোম্পানির নথি বিশ্লেষণ করা হয়। এসব নথিতে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ৩৩৬ ব্যক্তির গোপন অর্থ ব্যবস্থাপনার তথ্য উঠে এসেছে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী রাজনীতিকদের পাশাপাশি মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, রাষ্ট্রদূত, সরকারি কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তাসহ অন্যরা রয়েছেন। ওই কোম্পানিগুলোর দুই–তৃতীয়াংশের বেশি ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে গঠন করা হয়েছে। এটি হলো ক্যারিবীয় সাগরে ব্রিটিশ অধিকৃত অঞ্চল। এসব নথির বেশির ভাগই ১৯৯৬ থেকে ২০২০ সালের। তবে কিছু নথি ১৯৭০–এর দশকেরও রয়েছে।
অফশোর কোম্পানিগুলোয় ঠিক কী পরিমাণ অর্থ লুকানো আছে, তার হিসাব নিশ্চিত করে বলা কঠিন। প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ইকোনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ২০২০ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, অন্তত ১১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। তবে এই ব্যবস্থার গোপনীয়তার কারণে বস্তুত কত সম্পদ এই করস্বর্গে রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে, করস্বর্গের দেশ বা কোম্পানিতে ক্ষমতাবানদের বিনিয়োগের কারণে দেশগুলো বছরে ৬০০ বিলিয়ন ডলার হারাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির গবেষক লক্ষ্মী কুমার বলছেন, সম্পদশালীরা এভাবে পরিচয় গোপন করে অন্য দেশে অর্থ বিনিয়োগ করায় সমাজের বাকি অংশের ওপর তার প্রভাব পড়ে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘অর্থ গোপন রাখার সক্ষমতা থাকার মানে হলো আপনার জীবনযাত্রার ওপর সরাসরি প্রভাব পড়া। আপনার সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও থাকার জায়গার অধিকারের ওপর এর প্রভাব পড়ে।’
এই অনুসন্ধানে বিভিন্ন অফশোর কোম্পানি ও ছদ্মবেশী ব্যাংক হিসাবের মালিকদের নাম বেরিয়ে এসেছে। দেখা গেছে, এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ, ইয়ট, প্রাসাদ, এমনকি পিকাসো, ব্যাঙ্কসির মতো বিখ্যাত শিল্পীর চিত্রকর্মও এভাবে বেনামে কেনা হয়েছে। এই বিনিয়োগকারীদের তালিকায় ভারতের ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার ছাড়াও পপ তারকা শাকিরা, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী জার্মান সুপার মডেল ক্লডিয়া শিফার এবং ‘লেল দ্য ফ্যাট ওয়ান’ নামে পরিচিত ইতালিয়ান মাফিয়া ডন রাফায়েলে আমাতো রয়েছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডজনখানেক হত্যাকাণ্ডে জড়িত রাফায়েলে আমাতো যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত একটি শেল কোম্পানির মাধ্যমে স্পেনে জমি কিনেছেন। নিজস্ব অপরাধী বাহিনী গড়ে তোলার জন্য ইতালি থেকে পালানোর পরপরই এই জমি কিনেছিলেন তিনি। বর্তমানে ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন কুখ্যাত এই মাফিয়া ডন।
প্যান্ডোরা পেপারসের তথ্য অনুযায়ী, টেন্ডুলকারের পরিবার ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিল। ২০১৬ সালে সেই বিনিয়োগের টাকা তুলে নেওয়া হয়। টেন্ডুলকারের স্ত্রী অঞ্জলি টেন্ডুলকার ও শ্বশুর আনন্দ মেহতার নামও আছে এতে। অর্থ ফিরিয়ে নেওয়ার সময় ওই কোম্পানিতে শচীন টেন্ডুলকারের শেয়ার ছিল ৯, অঞ্জলির ১৪ ও আনন্দ মেহতার ৫টি। টেন্ডুলকারের শেয়ারের মূল্য ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭০২, অঞ্জলির ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৪ এবং শ্বশুরের শেয়ারের দাম ছিল ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৮২ মার্কিন ডলার।
প্যান্ডোরা পেপারসের একটি নথিতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত পানামার সাবেক এক রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বাধীন একটি ল ফার্মের সহযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহু ব্যাংক গ্রাহকদের অন্তত ৩ হাজার ৯২৬টি অফশোর কোম্পানি গঠনে সহযোগিতা করেছে। দেখা গেছে, এই ফার্ম আমেরিকান আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মর্গান স্ট্যানলির গ্রাহকদের জন্য ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে অন্তত ৩১২টি কোম্পানি গঠন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ল ফার্ম বেকার ম্যাকেঞ্জি কীভাবে আধুনিক অফশোর অর্থব্যবস্থা চালিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছে, তা–ও উঠে এসেছে এই অনুসন্ধানে।
আইসিআইজে বলছে, অধিকাংশ দেশে অফশোরে অর্থ রাখা বা শেল কোম্পানির মাধ্যমে দেশের বাইরে ব্যবসা করা অবৈধ নয়। আন্তর্জাতিক পরিসরের ব্যবসায়ীরা তাঁদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অফশোর কোম্পানির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তবে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সাধারণত যে দেশ থেকে টাকা আয় করা হয়, সে দেশে কর না দিয়ে শুধু কাগজে থাকা কম করের দেশে টাকাটা নিয়ে যাওয়া হয়।
রাজনৈতিক নেতাদের জন্য অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করাকে বিতর্কিত বলেছে আইসিআইজে। ব্যাখ্যায় তারা বলেছে, এটাকে তাঁদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচারণা হিসেবে কাজে লাগানোর সুযোগ থাকে বা জনগণের চোখে তা অবৈধ কর্মকাণ্ড হিসেবে সাব্যস্ত হতে পারে।
গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ‘ফিনসেন ফাইলস’ নামে আর্থিক লেনদেনের গোপন নথি প্রকাশ করে আইসিআইজে। ওই সব নথিতে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের তথ্য উঠে আসে। এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশের ৫ লাখ কোটি টাকার ৩৪টি বাজেট করা যায়।
২০১৭ সালের নভেম্বরে হইচই ফেলে প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারি। সেখানে উঠে আসে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, প্রিন্স চার্লস, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, কলম্বিয়ার রাজনীতিবিদ হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসের মতো ব্যক্তির নাম ছিল। এ ঘটনায় অনেকে কলঙ্কিত হন, অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়।
২০১৬ সালে পানামার আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার নথি ফাঁস হয়। পানামা পেপারস নামে পরিচিত ওই সব নথিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নিকটাত্মীয়দের নাম আসে। এ ছাড়া সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহমান আল সৌদ, মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের এক ছেলে এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দুই ছেলে ও এক মেয়ের নাম আসে। পাশাপাশি ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি, ভারতের খ্যাতিমান অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ও তাঁর পুত্রবধূ অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের নামও পাওয়া যায় ওই নথিতে। পানামা পেপারসের জের ধরে তদন্তের পর আদালতের আদেশে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ। এর পরের বছর নির্বাচনে জয়ী হয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান।
২০১৪ সালের নভেম্বরে বহুজাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্সের কিছু দলিল ফাঁস হয়। ‘লুক্সেমবার্গ লিকস’ নামে প্রকাশিত এসব নথিতে দেখা যায়, বড় বড় কোম্পানি লুক্সেমবার্গের কর ব্যবস্থাকে অবৈধভাবে ব্যবহার করছে, যাতে তাদের কর দেওয়ার অঙ্ক অনেক কমিয়ে আনা যায়। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা সঞ্চয় করেছে, কখনো কখনো ১ শতাংশের কম কর দিয়েছে। লুক্সেমবার্গে ১ হাজার ৬০০–এর বেশি বহুজাতিক সংস্থা ছিল।
তার আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ‘অফশোর লিকস’ নামে গোপন লেনদেনের তথ্য ফাঁস করে আইসিআইজে। রাশিয়া, চীন, আজারবাইজান, কানাডা, থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া ও পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নানা কর তথ্য ফাঁস হয় এতে।
তথ্যসূত্র: আইসিআইজে, গার্ডিয়ান, বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট