নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই অভিবাসী। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁদের মধ্যে অনেকেই শরণার্থী ছিলেন, যাঁরা পরিবার নিয়ে শান্তিতে বাঁচতে নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিলেন। যাঁরা নিহত হয়েছেন এবং যাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁদের একটি তালিকা বিবিসি ও নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে।
নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান, সিরিয়া, মিসর, জর্ডান, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও সোমালিয়ার নাগরিক রয়েছেন।
হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান ভূঁইয়া। নিহত বাংলাদেশিরা হলেন স্থানীয় লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আবদুস সামাদ ও গৃহবধূ হোসনে আরা ফরিদ। হোসনে আরা স্বামীকে খুঁজতে গিয়ে নিহত হন বলে জানিয়েছেন তাঁর পরিবার।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিন বছর বয়সী এক শিশু রয়েছে। নাম মুকাদ ইব্রাহিম। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ওই দিন আল নুর মসজিদে গিয়েছিল ছোট্ট মুকাদ। ঘটনার সময় বাবা ও তার ভাই পালিয়ে আসতে পারেন। তবে তাকে এখনো খুঁজে পায়নি পরিবারের সদস্যরা। মুকাদের ভাই আবদি জানিয়েছে, ‘ধারণা করছি, মসজিদের ওই হামলায় মুকাদ নিহত হয়েছে। পুলিশও জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছোট্ট তিন বছরের একটি শিশু রয়েছে।’
ক্রাইস্টচার্চের ক্যাশমেরি হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের তিনজন শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে। একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে আফগান বংশোদ্ভূত দাউদ নবী (৭১) রয়েছেন। ১৯৮০ সালে নিউজিল্যান্ডে যান দাউদ। তিনি প্রকৌশলী ছিলেন।
সায়াদ মিলনে (১৪) বড় হয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। ঘটনার দিন মায়ের সঙ্গে আল নুর মসজিদে গিয়েছিল সে। হয়তো তার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নের সেখানেই সমাপ্তি ঘটেছে।
পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ থেকে আসা নাইম রশিদ (৫০) ক্রাইস্টচার্চে শিক্ষকতা করতেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বন্দুকধারীকে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন নাইম রশিদ। গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাঁর ছেলে তালহা রশিদও (২১) নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির মন্ত্রণালয়। ১১ বছর আগে বাবার সঙ্গে নিউজিল্যান্ড আসেন তালহা। সম্প্রতি নতুন চাকরি পেয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, কিছুদিনের মধ্যে তালহার বিয়ে করার কথা ছিল।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় নাগরিক ফারহাজ আহসান (৩০)। হায়দরাবাদ থেকে নিউজিল্যান্ডে এসেছিলেন। পেশাগত জীবনে তড়িৎ প্রকৌশলী ছিলেন। তাঁর সাত মাস বয়সী ও তিন বছর বয়সী দুই শিশুসন্তান রয়েছে।
নিউজিল্যান্ডে সিরিয়ান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনার দিন আল নুর মসজিদে দুই ছেলেসহ নামাজ আদায়ে গিয়েছিলেন সিরিয়ার নাগরিক খালেদ মোস্তফা। খালেদ সিরিয়া যুদ্ধে শরণার্থী হয়ে গত বছর পরিবার নিয়ে নিউজিল্যান্ড আসেন। শান্তিতে বাঁচতেই এখানে এসেছিলেন তাঁরা। তাঁর এক কিশোর ছেলে ঘটনার পর নিখোঁজ রয়েছে। গুরুতর আহত আরেক ছেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সিরিয়ার নাগরিক আমজাদ হামিদ (৫৭) নিখোঁজ রয়েছেন। ক্যান্টেবেরি হাসপাতালের এই চিকিৎসক ঘটনার দিন আল নুর মসজিদে ছিলেন বলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। ২৩ বছর আগে পরিবার নিয়ে নিউজিল্যান্ড আসেন তিনি। তাঁর দুই ছেলে আছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে নিউজিল্যান্ডে এসেছিলেন হুসাইন আল ওমারি (৩৫) ও জান্নাহ ইজাত। ঘটনার পর থেকে তাঁরা নিখোঁজ।
লিলিক আবদুল হামিদ নামের এক ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনার দিন লিলিকসহ আরও সাতজন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক আল নুর ও লিনউড মসজিদে ছিলেন। পাঁচজন নিরাপদে পালিয়ে আসতে পারেন। বাকিদের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।