কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারের গোপন শিবির ‘ক্যাম্প–সেভেন’ বন্ধ করেছে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। ওই শিবিরের সব বন্দীকে কারাগারের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্প–সেভেন শিবির বন্ধ করা নিয়ে আজ সোমবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সাউথ কমান্ড গতকাল রোববার একটি বিবৃতিতে বলেছে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই বন্দী স্থানান্তর সম্পন্ন হয়েছে। কারাগার পরিচালনার ব্যয় কমাতে এবং পরিচালনা কার্যক্রমের সক্ষমতা বাড়ায় কারাগারটি তিন ইউনিট থেকে কমিয়ে দুটি ইউনিট করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আটক ‘কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের’ বন্দি করে রাখা হতো এই ক্যাম্প-সেভেনে। গোপনে পরিচালিত এই ক্যাম্পে বন্দীদের ওপর চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে পুরো গুয়ানতানামো বে কারাগারেই চলত অমানবিক নির্যাতন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিষয়টি ফাঁস হলে ওই সময় কারাগারটি বন্ধের জোরালো দাবি ওঠে।
তবে ক্যাম্প–সেভেনের অবস্থান এবং এর নির্মাণকালসহ বিভিন্ন তথ্যের বিস্তারিত প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। সাংবাদিকদের কোনো দিন শিবিরটি পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়নি এবং ওই গোপন স্থানটিতে যাওয়ার জন্য আইনজীবীদের আদালতের আদেশ প্রয়োজন হতো।
মার্কিন কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ক্যাম্প–সেভেনের অবকাঠামোগত সমস্যা ছিল। পয়োনিষ্কাশনের নালার পানিতে ভরে যেত এবং বারবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।
পেন্টাগন শিবিরটি সংস্কারের অর্থের বরাদ্দ না পেয়ে সংস্কারের আশা ছেড়ে দেয়।
রোববার মার্কিন সেনাবাহিনী বলেছে, ৪০ জন বন্দীর সবাইকে সুরক্ষিত গুয়ানতানামো বে কারাগারের ক্যাম্প ৬ ও ৭–এ স্থানান্তর করা হয়েছে। বন্দীদের মধ্যে ১১ জন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। এ ছাড়া অন্য বন্দীদের মধ্যে ৯/১১ হামলার মূল হোতা খালিদ শেখ মোহাম্মদ এবং পেন্টাগনে প্রাণঘাতী হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সমর্থনকারী পাঁচজন বন্দী রয়েছেন।
ক্যাম্প–সেভেন থেকে বন্দীদের সরিয়ে অন্য শিবিরে নিয়ে যাওয়া সিদ্ধান্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রশাসনের সময়ে। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন পুরো গুয়ানতানামো বে কারাগারটিই বন্ধ করে দিতে চায়। তবে এ জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।
কারাগারটি বন্ধের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি রোববার বলেছেন, বিষয়টির সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার অনেক নীতিগত বিষয় জড়িত। ফলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।
৯/১১-এ যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ‘শত্রু যোদ্ধাদের’ আটক রাখতে ২০০২ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এ কারাগার চালু করেন। কিউবার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটিতে এ কারাগার অবস্থিত। ১৯০৩ সালের হাভানা চুক্তির আওতায় কিউবা থেকে ইজারা নিয়ে মার্কিন ওই ঘাঁটি তৈরি করা হয়।