ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারি কানাডায় স্ত্রী মেগান ও ছেলে অর্চির কাছে পাড়ি জমিয়েছেন। রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার পর তাঁর এই যাওয়াকে ‘প্রতীকী প্রস্থান’ বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করা থেকে প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগানের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে ধাক্কা খায় শতাব্দী–প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠান।
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফকে উদ্ধৃত করে আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, গতকাল সোমবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্য-আফ্রিকা বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগদান শেষে প্রিন্স হ্যারি কানাডার ভ্যানকুভারের উদ্দেশে রওনা হন। লন্ডনের সম্মেলনটি রাজপরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর শেষ আনুষ্ঠানিক রাজকীয় দায়িত্ব বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর এই চলে যাওয়াকে ‘প্রতীকী প্রস্থান’ বলা হচ্ছে। বাকিংহাম প্রাসাদ হ্যারি-মেগানের রাজকীয় উপাধি সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণার দুদিন পর প্রিন্স হ্যারি যুক্তরাজ্য ছেড়ে কানাডায় চলে গেলেন।
লন্ডনের সম্মেলনে যোগ দিলেও বাকিংহাম প্রাসাদে আফ্রিকার নেতাদের সম্মানে তাঁর ভাই উইলিয়ামের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেননি হ্যারি। এর আগে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে ২০ মিনিট অনানুষ্ঠানিক ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ করেন।
হ্যারি-মেগান দম্পতি ৮ জানুয়ারি আকস্মিক এক ঘোষণায় রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে স্বনির্ভর জীবনযাপনে যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি কানাডায় বসবাসের কথা জানান। তাঁদের ওই ঘোষণায় ব্রিটিশ রাজপরিবারে তোলপাড় শুরু হয়। তাঁদের ওই সিদ্ধান্ত থেকে ফেরাতে ১৩ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের নরফক কাউন্টির স্যান্ড্রিংহ্যাম প্রাসাদে হ্যারির সঙ্গে বৈঠক করেন রানি এলিজাবেথ ও তাঁর উত্তরাধিকারীরা। বৈঠকে রানি হ্যারি ও মেগানের নতুন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাঁর ‘পূর্ণ সমর্থন’ থাকার কথা জানান। তবে রানি জানান, তিনি চাইছেন হ্যারি-মেগান রাজপরিবারের সদস্য হিসেবেই পুরো সময় দায়িত্ব পালন করুন। এরপরও হ্যারি-মেগান তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসায় গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বাকিংহাম প্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাজ্যের ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেল তাঁদের রাজকীয় উপাধি আর ব্যবহার করতে পারবেন না। চলতি বছরের বসন্ত থেকেই এটি কার্যকর হবে।
এদিকে হ্যারির চলে যাওয়া নিয়ে ব্রিটিশ পত্রিকাগুলোতে বেশ নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
দ্য ডেইলি এক্সপ্রেসের কলাম লেখক লিও ম্যাককিনস্ট্রি লিখেছেন, ‘এই ব্যবস্থাই সবচেয়ে সংবেদনশীল, গঠনমূলক হয়েছে, যা হতে পারত।’
দ্য ডেইল টেলিগ্রাফে টিম স্ট্যানলি লিখেছেন, ‘এই ব্যবস্থাই ভালো হয়েছে রাজতন্ত্রের জন্য। কারণ এটা তার সীমানা নির্ধারণ করছে।’
দ্য ডেইলি মেইল বলেছে, ‘রাজকীয় জীবনের সঙ্গে যাঁরা বেমানান, তাঁদের জন্য মার্জিত পলায়নের ব্যবস্থা করে রানি সত্যিকারভাবে রাজতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছেন।’
দ্য সান ‘মেগান ও হ্যারিকে দরজা দেখিয়ে দেওয়ায়’ প্রাসাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ‘অর্ধেক এখানে (যুক্তরাজ্যে), অর্ধেক বাইরে (কানাডা) থাকার তাঁদের পরিকল্পনা চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং এটা বাজে নজির স্থাপন করতে পারত।’
পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার পর গত রোববার সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন প্রিন্স হ্যারি। সেন্টেবালে নামের ওই দাতব্য সংস্থার আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের এইচআইভি-আক্রান্ত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে তিনি পদ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘সত্যিই আর কোনো উপায় ছিল না।’ তিনি স্পষ্ট করেন, জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ ছাড়লেও তিনি ও মেগান দূরে সরে যাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্য আমার ঘর এবং এমন একটি স্থান, যা আমি ভালোবাসি, এটা কখনো পরিবর্তন হবে না।’ হ্যারি বলেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী মেগান সরকারি তহবিলের অর্থ ছাড়াই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হয়ে তাঁদের কাজ অব্যাহত রাখার আশা করেছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
হ্যারি বলেন, ‘আমি জেনেবুঝেই এটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমি কে, আমার কী করা উচিত, সেই দায়িত্ববোধের কোনো পরিবর্তন হবে না। আমি এটাও মনে করি, কী জন্য দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে অধিকতর শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের আশায় নতুন পথ বেছে নিতে হয়েছে, তা আপনারা বোঝেন।’