তরুণদের পাশাপাশি প্রবীণদের শরীরেও কাজ করছে অক্সফোর্ডের টিকা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে জটিলতার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি প্রবীণদের। সেই প্রবীণদের শরীরেও প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার সম্ভাব্য টিকাটি। শুধু তা–ই নয়, তরুণদের শরীরেও কাজ করছে টিকাটি। অ্যাস্ট্রাজেনেকা আজ সোমবার এই দাবি করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চলমান মহামারি মোকাবিলায় একটি কার্যকর ও নিরাপদ টিকার প্রত্যাশা করছে পুরো বিশ্ব। এই খবরে সেই আশা আরও উজ্জ্বল হলো।
এদিকে লন্ডনের একটি হাসপাতালের কর্মীদের জানানো হয়েছে, আগামী নভেম্বরেই ওই হাসপাতালে অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার সম্ভাব্য টিকার প্রথম সরবরাহটি পৌঁছাবে। এ জন্য তাঁদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য সান।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা আজ বলেছে, তাদের সম্ভাব্য টিকাটির কার্যকারিতার প্রমাণই শুধু পাওয়া যাচ্ছে না, প্রবীণদের মধ্যে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক কম দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র বলেন, এটা আশাব্যাঞ্জক যে প্রবীণ ও তরুণদের মধ্যে সম্ভাব্য টিকাটি একই রকম রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবীণদের শরীরে টিকা প্রয়োগের পর প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার খবরটি ইতিবাচক। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং করোনার সংক্রমণে প্রবীণদের জটিলতা ও মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।
এদিকে দ্য সান আজ এক প্রতিবেদনে জানায়, লন্ডনের একটি বড় হাসপাতালের কর্মীদের জানানো হয়েছে, আসছে নভেম্বরেই তাদের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সম্ভাব্য টিকার প্রথম সরবরাহ পৌঁছে যাবে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই টিকার সরবরাহ পৌঁছাবে জানিয়ে ওই হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
তবে এর আগে ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বিবিসিকে বলেছিলেন, এখনো করোনার কোনো টিকা প্রস্তুত হয়নি। তবে তাঁরা ২০২১ সালের প্রথমার্ধে সম্ভাব্য সরবরাহের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। চলতি বছরই জনসাধারণকে টিকা দেওয়া শুরু হতে পারে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টিকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে এটি আপাতত আমাদের পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে নেই।’
করোনাভাইরাসের মহামারি নিয়ে অস্থির সময় কাটাচ্ছে পুরো বিশ্ব। এই মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্যপ্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪ কোটি ৩৪ লাখের বেশি করোনা সংক্রমিত মানুষ শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১১ লাখের বেশি রোগী। সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ করোনা সংক্রমিত রোগী।
করোনা ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি টিকা উদ্ভাবন নিয়ে কাজ চলছে। ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত হালনাগাদ করা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) খসড়া তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১৯৮টি সম্ভাব্য টিকা নিয়ে কাজ চলছে। এর মধ্যে মানবদেহে পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে ৪৪টি টিকা। এগুলোর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে অক্সফোর্ডের টিকা, চীনের সিনোভ্যাক, সিনোফার্ম ও ক্যানসিনো, রাশিয়ার গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার, মডার্না ও নোভাভ্যাক্স এবং জার্মানির কিওরভ্যাক। এই টিকাগুলো মানবদেহে পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে।