করোনাভাইরাসের মহামারির গ্রবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত সোমবার এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি আরও বলেন, মহামারির কারণে কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলো তরুণদের হতাশা ও ক্ষোভকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। এর ফলে একটি প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা সামাল দিতে পারবে না বিশ্ব।
এই পরিস্থিতির কারণও উল্লেখ করেছেন গুতেরেস। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্বের প্রতি পাঁচজন তরুণের মধ্যে একজন বেকার বসে আছেন। তাঁদের পড়াশোনা নেই, কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো চাকরি বা কাজ। এ ছাড়া প্রতি চারজন তরুণের মধ্যে একজন সহিংসতা অথবা সংঘাতের শিকার।
সোমবার ওই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশগুলোর উদ্দেশে বক্তব্য দেন গুতেরেস। এ সময় তিনি বলেন, করোনার এই সংকট শুরু হওয়ার আগেও সারা বিশ্বের তরুণেরা অবিশ্বাস্য এক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা বিষয়টি চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এর ফলে তরুণেরা প্রচলিত রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন।
গুতেরেস বলেন, এই ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, তখন তরুণদের হতাশা ও ক্ষোভকে কাজে লাগানো সহজ হয়ে যায় উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর জন্য। ফলে উগ্রবাদের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, 'আমরা ইতিমধ্যেই লক্ষ করেছি, উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের কারণে লকডাউনের সুযোগ নিচ্ছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। এসব প্ল্যাটফর্মে ঘৃণা ছড়াচ্ছে তারা। ফলে মহামারির কারণে লকডাউনের ফলে যেসব তরুণ ঘরে বসে থাকছেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তাঁদের নিজেদের দলে ভেড়াচ্ছে এই উগ্রবাদীরা।'
প্রায় পাঁচ বছর আগে তরুণ, শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর একটি ঐতিহাসিক প্রস্তাব পাস হয়েছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে। সেই প্রস্তাবের পর্যালোচনা করতে গিয়ে এসব মন্তব্য করেন জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস। তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে এই তরুণেরা পিছিয়ে যাচ্ছেন। করোনা মোকাবিলায় তরুণদের শক্তি ও মেধাকে কাজে লাগানোর জন্য জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মহাসচিব এমন সময়ে এই বক্তব্য দিলেন, যখন জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ জানিয়েছে, এই করোনার মহামারিতে ১৫৪ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তরুণদের প্রশংসা করে গুতেরেস বলেন, এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তরুণেরা করোনা মোকাবিলার লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছেন, সম্মুখসারির যোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। বর্তমান অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করছেন তরুণেরা।