এ বছরই দুই কোটি করোনার টিকা আনছে মডার্না

টিকা তৈরিতে কাজ করছেন গবেষকেরা
ছবি: রয়টার্স

চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই পরীক্ষামূলক করোনার টিকার দুই কোটি ডোজ তৈরির পথে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মডার্না। ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা তৈরি লক্ষ্য ঠিক করে রেখেছে তারা। গতকাল শুক্রবার মডার্নার পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, টিকা ও চিকিৎসাকেই কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। শিগগিরই এ মহামারি শেষ হওয়ায় কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে এ মহামারিতে বিশ্বে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৪৯৩ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। সংক্রমণের শিকার হয়েছেন ৩ কোটি ৪ লাখ ৬ হাজার ১৯৭ জনের বেশি মানুষ।

ইতিমধ্যে কয়েকটি টিকার বড় আকারের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে রয়েছে ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও। গত বুধবার মডার্নার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা ২৫ হাজার ২৯৬ জন স্বেচ্ছাসেবীকে টিকা দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে টিকাটির পরীক্ষা চালানো।

যুক্তরাষ্ট্রকে সবার আগে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার চুক্তি করে রেখেছে মডার্না। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে টিকা সরবরাহের জন্য আলোচনা সেরে রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সুইজারল্যান্ডের লোনজা গ্রুপ ও স্পেনের ল্যাবরেটরিজ ফার্মাকের সঙ্গে টিকা তৈরিতে কাজ করছে মডার্না।

যুক্তরাষ্ট্রকে সবার আগে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার চুক্তি করে রেখেছে মডার্না। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে টিকা সরবরাহের জন্য আলোচনা সেরে রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে দুটি কোম্পানি থেকে সাড়ে তিন কোটি থেকে চার কোটি ডোজ টিকা ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেতে পারে।

মডার্নার পক্ষ থেকে জরুরি অনুমোদন পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টার কথা বলা হচ্ছে। তাদের টিকা যদি কমপক্ষে ৭০ শতাংশ কার্যকর হয়, তবে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা মানুষের ওপর জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে গত বৃহস্পতিবার মডার্নার প্রধান নির্বাহী স্টেফান ব্যানসেল বলেন, তাঁদের টিকা কার্যকর কি না, এর ফলাফল নভেম্বরের মধ্যেই জানা যাবে। হয়তো অক্টোবরেই জানা যেতে পারে; তবে এতে কিছুটা সংশয় রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের হার কমতে থাকায় তাত্ত্বিকভাবে টিকা পরীক্ষার ফল পেতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

এফডিএর পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো টিকা যদি কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের কম সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়, তবে তার অনুমোদন দেওয়া হবে না।

করোনা প্রতিরোধে টিকা তৈরির দৌড়ে এখন বিশ্বের বড় বড় জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। কার্যকর টিকা পেতে তৃতীয় ধাপ বা চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষায় পৌঁছে গেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। চূড়ান্ত পরীক্ষায় থাকা নয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবার আগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মডার্না। সম্প্রতি মডার্না তাদের গবেষণার সম্পূর্ণ প্রতিচিত্র (ব্লুপ্রিন্ট) প্রকাশ করেছে।

গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আটজন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে মডার্নার টিকা নিরাপদ কি না, তা পরীক্ষার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাঁদের শরীরে দুই ডোজ করে টিকা দেওয়া হয়েছিল।

মডার্নার দাবি, টিকা পাওয়া স্বাস্থ্যকর স্বেচ্ছাসেবকেরা অ্যান্টিবডি তৈরি করেছিলেন, যা তারপর ল্যাবে মানবকোষে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তা ভাইরাসটিকে প্রতিলিপি তৈরি করা থেকে আটকাতে সক্ষম হয়েছিল। কার্যকর টিকা তৈরির জন্য ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি ঠেকানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

যাঁরা ভাইরাসের সংক্রমণের পরে সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের অ্যান্টিবডির সঙ্গে পরীক্ষায় পাওয়া নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডির মাত্রাগুলোর মিল রয়েছে।