অস্ট্রেলিয়ার দ্বীপ রাজ্য তাসমানিয়ার উপকূলে অন্তত ৯০টি তিমির মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধারকারীরা বলছে, উপকূলে ২৭০টির মতো তিমি এসেছে—যার এক-তৃতীয়াংশেরই প্রাণহানি ঘটল। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্ধারকারীরা আজ মঙ্গলবার উপকূল থেকে ২৫টি তিমি সাগরে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। আরও কিছু পাঠাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার দ্বীপের পশ্চিম উপকূলের বালুচর ও অগভীর পানিতে প্রথম এই তিমিগুলো চোখে পড়ে। এগুলোকে পাইলট তিমি বলা হয়। পাইলট তিমি হলো ডলফিনের গোত্রভুক্ত। এ প্রজাতির তিমি ৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে, ওজন হয় তিন টন পর্যন্ত।
তবে ঠিক কি কারণে এতগুলো তিমি উপকূলে ওঠে এসেছে তার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি সেখানকার প্রাণীবিদেরা। বন্যপ্রাণী বিষয়ক প্রাণীবিদ ক্রিস কার্লিয়নের ধারণা, পথ ভুলে এসব তিমি উপকূলে চলে এসেছে। দলবদ্ধ হয়ে বসবাসকারী এসব তিমি দলনেতাকে অনুসরণ করে চলাচল করে। হয়তো দুই-একটি তিমি পথ ভুল করেছে, আর স্বভাবজাত কারণে অন্যরাও পিছু নিয়েছে।
কার্লিয়ন বলেন, পাইলট তিমি সৈকতে তিন থেকে চার দিন বাঁচতে পারে, এ সময় এদের অনেকগুলোই স্থিতিশীল থাকে। আটকে পড়া তিমি গভীর জলে ফেরত পাঠাতে কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
তাসমানিয়ান মেরিটাইম কনজারভেশন প্রোগ্রামের ৪০ জন প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মী সোমবার সন্ধ্যা থেকে এই তিমি উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। তবে উদ্ধারকর্মীদের এই অভিযান মোটেও সহজ নয়। তাঁরা জানিয়েছেন, দ্বীপের ম্যাককুয়েরি হেডস এলাকাজুড়ে তিনটি দলে তিমিগুলোকে পাওয়া গেছে। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে যাওয়ার তেমন কোনো রাস্তা নেই, জলযানও সীমিত আকারে চলাচল করে। প্রায় ২০০টি তিমি একটি নৌঘাটের কাছে বালুচরে পাওয়া যায়। এর কয়েক শ মিটার দূরে পাওয়া যায় আরও ৩০টি। আরও ৩০টি তিমি পাওয়া যায় কাছাকাছি আরেকটি জায়গায়।
তিমিগুলোর শারীরিক অবস্থাও সাঁতার কাটার অনুকূলে নেই জানিয়ে ক্রিস কার্লিয়ন বলেন, সাধারণত তাঁরা সমুদ্র সৈকতের শুকনো স্থানে আটকে পড়া প্রাণীদের উদ্ধার করে থাকেন। কিন্তু ‘আধভেজা’ এই তিমিগুলোর শারীরিক অবস্থা পুরোপুরি ভাসতে সক্ষম নয়। ফলে তাদের ভাসিয়ে গভীর পানিতে নেওয়া ঝক্কির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই অঞ্চলে তিমি সৈকতে ওঠে আসা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবে এক সঙ্গে এত তিমি আসা এক দশেরও বেশি সময়ে দেখা যায়নি। তাসমানিয়ায় এর আগে ২০০৯ সালে ২০০ টির মতো তিমি সৈকতে আটকে পড়া রেকর্ড করা হয়েছিল। অবশ্য ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে এক সপ্তাহে ২০০টি বেশি পাইলট তিমির মৃত্যু হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উপকূলগুলোতে প্রতিবছরই বিভিন্ন ধরনের তিমির জায়গা বদল ঘটে থাকে। মৌসুমি এ জায়গা বদল করা এই তিমির সংখ্যা নেহাতই কম নয়—হাজার খানেক হবে।