বয়স্ক ব্যক্তিদের মতো করোনা (কোভিড–১৯) সংক্রমণের অতিঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের এই ভাইরাসের নানা ধরন থেকে সুরক্ষায় প্রতিবছরই টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার প্রয়োজন হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির এক অভ্যন্তরীণ নথিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
ওই নথি দেখেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। নথিটি একটি প্রতিবেদনের অংশ। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার টিকা বণ্টনের বৈশ্বিক জোট ‘গ্যাভি, দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স’–এর বোর্ড সভায় আলোচনা হওয়ার কথা। বিশ্বব্যাপী ডব্লিউএইচওর করোনা টিকা কর্মসূচি কোভ্যাক্সের যৌথ নেতৃত্বে রয়েছে এ জোট।
টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মডার্না ইনকরপোরেট ও ফাইজার ইনকরপোরেটের পাশাপাশি এটির জার্মান সহযোগী প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক জোরেশোরে বলে আসছে, উচ্চপর্যায়ের করোনা প্রতিরোধ সক্ষমতা (ইমিউনিটি) ধরে রাখতে হলে টিকার বুস্টার ডোজ প্রয়োজন। তবে এই বক্তব্যের পক্ষে এখনো তথ্যপ্রমাণ স্পষ্ট নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগামী বছর করোনার টিকা দেওয়া নিয়ে যে হতাশাজনক পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে ওই বছর ধনী ও দরিদ্র দেশের মধ্যকার এই বৈষম্য আরও বাড়তে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই নথিতে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের প্রতিবছর টিকার বুস্টার ডোজ ও সাধারণ মানুষের দুই বছরে একবার বুস্টার ডোজ দেওয়া প্রয়োজন বলে ধারণা করছে তারা।
কীভাবে এমন উপসংহারে পৌঁছানো হলো, নথিতে সে বিষয়ের উল্লেখ নেই। তবে কিছু মৌলিক ধারণার ভিত্তিতে ওই পূর্বাভাস দিয়েছে স্বাস্থ্য সংস্থা। যেমন করোনার নতুন নতুন ধরনের আবির্ভাব ঘটবে ও সেসব ধরন থেকে সৃষ্ট সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় টিকারও নিয়মিত হালনাগাদকরণের প্রয়োজন হবে।
অভ্যন্তরীণ এই নথির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতিসংঘের এই সংস্থা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে গ্যাভির এক মুখপাত্র বলেন, কোভ্যাক্সে করোনার ব্যাপক পরিসরের চিত্র বিবেচনায় নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
৮ জুনের ওই নথিতে আরও অনুমান করা হয়, বিশ্বজুড়ে আগামী বছর ১ হাজার ২০০ কোটি ডোজ করোনার টিকা উৎপাদিত হতে পারে। এটি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনসের (আইএফপিএমএ) অনুমানের চেয়ে বেশি। আগামী বছর ১ হাজার ১০০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদিত হতে পারে বলে ধারণা সংস্থাটির।
আগামী বছর পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎপাদনের সমস্যা, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অনুমোদন ইত্যাদি ইস্যু বিপত্তি হিসেবে দেখা দিতে পারে বলেও অনুমান করা হয়েছে নথিতে।
রয়টার্সের দেখা আরেকটি নথিতে গ্যাভি বলেছে, করোনার আগে–পরের চিত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক টিকা কর্মসূচির কৌশল নির্ধারণে কাজে লাগানো হবে। সেই সঙ্গে বুস্টার ডোজের ভূমিকা ও এর সুরক্ষা মেয়াদ থেকে যেসব নতুন তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যাবে, সেসবের ভিত্তিতে টিকাবিষয়ক পূর্বাভাসে পরিবর্তন আসতে পারে।
এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ২৫০ কোটি ডোজের মতো টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। এর অধিকাংশই প্রয়োগ করা হয়েছে ধনী দেশগুলোয়। দেশগুলোর অর্ধেকের বেশি মানুষ অন্তত টিকার একটি ডোজ গ্রহণ করেছেন। বিপরীতে অনেক দরিদ্র দেশে ১ শতাংশেরও কম মানুষ এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। গ্যাভি এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগামী বছর করোনার টিকা দেওয়া নিয়ে যে হতাশাজনক পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে ওই বছর ধনী ও দরিদ্র দেশের মধ্যকার এই বৈষম্য আরও বাড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ ওই নথির বাইরে সংস্থাটি যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে আগামী বছর ৬০০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদিত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। সংস্থাটি বলেছে, টিকার সুরক্ষা মেয়াদ খুব বেশি না হওয়ায় ও করোনার নতুন নতুন ধরনের উদ্ভব ঘটতে থাকায় প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে শুধু অতিঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরাই নয়, অন্যদেরও বুস্টার ডোজ দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে।
হতাশার বাইরেও আশার কথা, অনেকে ধারণা করছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর বলে বিবেচিত সব টিকাই সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেবে এবং চাহিদা মেটাতে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডোজ টিকা আগামী বছর উৎপাদিত হতে পারে, যা সমতার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশে বণ্টন করা হবে। এ ছাড়া বিদ্যমান টিকা করোনার নতুন নতুন ধরনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কার্যকারিতা দেখাতে সক্ষম হবে বলেও আশা করছেন তাঁরা। ফলে প্রতিবছর সবাইকে বুস্টার ডোজ দেওয়া না–ও লাগতে পারে।