যুক্তরাজ্যে ইকুয়েডর দূতাবাসে অবস্থানকালে মার্কিন গোপন নথি ফাঁস করে হইচই ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দুই সন্তানের জনক হয়েছেন। সন্তানদের মা একজন আইনজীবী। আজ রোববার প্রকাশিত খবরে এ কথা জানানো হয়।
এএফপির খবরে জানানো হয়, ৪৮ বছর বয়সী এই অস্ট্রেলীয় নাগরিকের দুই বছর ও এক বছর বয়সী দুটি পুত্রসন্তান রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আইনজীবী স্টেলা মরিস তাঁদের মা বলে তথ্য প্রকাশ করেছে দ্য মেইল।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে শিশু দুটির ছবিও প্রকাশ করা হয়। এতে মরিসের সাক্ষাৎকার রয়েছে। সাক্ষাৎকারে মরিস বলেন, তাঁরা একে অপরের প্রেম পড়েন এবং বিয়ে করার পরিকল্পনা নেন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৭ সাল থেকে অ্যাসাঞ্জ ও মরিস জুটি প্রেম করছেন। পত্রিকাটির দাবি, গেল সপ্তাহে আদালতের ফাঁস হওয়া কাগজপত্র থেকে তাঁরা প্রথম এই খবর পান।
অ্যাসাঞ্জ এখন লন্ডনের কঠোর নিরাপত্তায় ঘেরা বেলমার্শ কারাগারে। চরবৃত্তির দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁর প্রত্যর্পণ চায়। যুক্তরাষ্ট্রের আনা অভিযোগের আইনি লড়াই চলছে এখন।
দ্য মেইল আজ বলেছে, মরিস তাঁদের সম্পর্ক ও সন্তানদের কথা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ তিনি ভয় পাচ্ছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বেলমার্শ কারাগারে অ্যাসাঞ্জের জীবন হুমকির মধ্যে রয়েছে। মরিস চান, কোভিড-১৯ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার অস্থায়ীভাবে যে কিছুসংখ্যক বন্দী মুক্তির যে পরিকল্পনা করেছে, অ্যাসাঞ্জ সেই সুবিধাটা পান।
অ্যাসাঞ্জ গত সপ্তাহে ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন—এই যুক্তিতে জামিন প্রার্থনা করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। ব্রিটিশ বিচারক তাঁর মুক্তি প্রার্থনার কোনো ভিত্তি নেই বলে জানান। তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্যের জন্য অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীদের পাওয়া যায়নি। উইকিলিকস টুইটারে জবাব দেয়।
ওই টুইটার বার্তায় বলা হয়, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সদ্য আবির্ভূত সঙ্গী এবং তাঁদের দুই সন্তানের মা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে অ্যাসাঞ্জ ও ঝুঁকিতে থাকা বন্দীদের মুক্তি প্রার্থনা করছেন, যেহেতু কারাগারগুলোয় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
এরপরই নাড়া দেওয়া ওয়েবসাইটটি মরিসের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে, যেখানে তিনি অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে তাঁর পাঁচ বছর ধরে চলা তথাকথিত প্রেমের সম্পর্কের বয়ান দেন।
অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রর প্রচলিত চরবৃত্তির আইনে করা মামলার আসামি। ২০১০ সালে আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন সেনাবাহিনীর অভিযান সম্পর্কিত গোপন নথি তিনি ফাঁস করে দেন। ২০১২ সালে তিনি ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন। কিন্তু সবশেষ গত বছর তাঁকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মেইল বলছে, তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম ২০১৬ সালে। এর আগের বছর তাঁরা সম্পর্কে জড়ান। মরিস তাঁকে আইনি সহযোগিতা দিচ্ছিলেন।
পত্রিকাটি বলেছে, অ্যাসাঞ্জ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দুই সন্তানের জন্মই প্রত্যক্ষ করেছেন। বড় ছেলে গ্যাব্রিয়েলকে লুকিয়ে দূতাবাসে নেওয়া হয়েছিল। দুই ছেলেই ব্রিটিশ নাগরিক এবং বাবার সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছে।
মরিস বলেন, তিনি জুলিয়ানকে ভীষণ ভালোবাসেন এবং বিয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। জুলিয়ান তাঁর জীবনের যত দুঃস্বপ্ন, সেখান থেকে তাঁকে (মরিস) সুরক্ষা দিয়ে এসেছেন। তিনি একা এবং খুব গোপনীয়তার সঙ্গে গ্যাব্রিয়েল ও তার ভাই ম্যাক্সকে বড় করছেন। আর কবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাকতে পারবেন, সেই দিনের অপেক্ষা করছেন।
মরিস বলেন, তাঁকে এখন মুখ খুলতে হচ্ছে, কারণ তিনি দেখতে পাচ্ছেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের জীবন বিপন্ন।