বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও খারাপ হচ্ছে। এখন সবার প্রত্যাশা একটি কার্যকর টিকা। এ জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা কাজ করছেন দিন–রাত। অগ্রগতিও বেশ ভালো। বেশ কিছু টিকা পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আগামী দু–তিন মাসের মধ্যে টিকা মানুষের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছে দু–তিনটি কোম্পানি। কিন্তু এরপরও সতর্ক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলেছে, আগামী বছরের শুরুর দিকেই হয়তো কোনো টিকা ব্যবহারের উপযোগী হতে পারে। তার আগে এমন প্রত্যাশা না করাই ভালো।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি পরিষেবা কর্মসূচির প্রধান মাইক রায়ান এমন সতর্কতার কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের নিরাপদ ও কার্যকর টিকা উদ্ভাবনের পর তা সমহারে বণ্টন নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। তবে সেই টিকা আসার আগ পর্যন্ত সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো ভাইরাসের সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরা।
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খসড়া তালিকার তথ্যানুসারে, বিশ্বজুড়ে এখন করোনার ১৬৬টি টিকা উদ্ভাবন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা মানবদেহে পরীক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে ২৪টি সম্ভাব্য টিকা। বাকি সম্ভাব্য ১৪২টি টিকা প্রাক্-পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে।
যে টিকাগুলো মানবদেহে পরীক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্যের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকাটি সবচেয়ে আলোচিত। এ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে ব্রাজিলে। এরই মধ্যে গত সোমবার চিকিৎসাবিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী ল্যানসেট টিকাটির প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল–সম্পর্কিত নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এতে গবেষকেরা দাবি করেছেন, টিকাটি নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা।
ল্যানসেট–এ সোমবারই চীনের একটি টিকা সম্পর্কেও নিবন্ধ প্রকাশ হয়। এতেও সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা তাঁদের উদ্ভাবিত সম্ভাব্য টিকা নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন। এ নিবন্ধও রচিত হয়েছে প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। তবে চীনের সম্ভাব্য টিকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় রয়েছে সিনোভ্যাক কোম্পানির টিকা। বাংলাদেশে এ টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জৈব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মডার্নার উদ্ভাবিত সম্ভাব্য টিকাটিও আলোচনায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী আরেক প্রতিষ্ঠান ফাইজারও দাবি করেছে, তাদের সম্ভাব্য টিকাটি করোনা মোকাবিলায় কার্যকর ও নিরাপদ বলে প্রমাণ পেয়েছে তারা। একই দাবি করেছে জার্মানির জৈব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক। তবে এ দুই প্রতিষ্ঠানের টিকার পরীক্ষা–সম্পর্কিত গবেষণার নিবন্ধ এখনো কোনো সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি। এদিকে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি দাবি করেছেন, তাঁরা আগস্টের মধ্যেই কার্যকর ও নিরাপদ টিকা আনবেন, যা হবে বিশ্বের প্রথম করোনার টিকা।
শুধু রাশিয়ার গবেষকেরাই নয়, উপরোক্ত সব প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের মধ্যেই করোনার টিকা আনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তবে অক্সফোর্ডের গবেষকেরা ল্যানসেট-এ প্রকাশিত নিবন্ধে বলেছেন, তাঁদের উদ্ভাবিত টিকা নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়া গেলেও আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এখনো বাকি। এগুলোর মধ্যে টিকাটি কী মাত্রায় প্রয়োগ করলে সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়া যাবে, মানবদেহকে তা কত দিন সুরক্ষা দিতে পারবে, ইত্যাদি অন্যতম।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি পরিষেবা কর্মসূচির প্রধান মাইক রায়ান বলেন, ‘আমাদের অগ্রগতি বেশ ভালো। বেশ কিছু সম্ভাব্য টিকা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষাধীন রয়েছে। নিরাপদ কিংবা মানবদেহে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রশ্নে এখন পর্যন্ত কোনো টিকাই ব্যর্থ প্রমাণিত হয়নি। তবে বাস্তবতা হলো আমরা হয়তো আগামী বছরের প্রথমদিকে মানুষকে করোনার টিকা পেতে দেখব।’
করোনার টিকা উদ্ভাবিত হলে তা বিশ্বজুড়ে সমহারে বণ্টন নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে মাইক রায়ান বলেন, ‘টিকা শুধু ধনীদের জন্য নয়, আবার তা কেবল গরিবদের জন্যও নয়। টিকা সবার জন্য।’