জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সিরিয়ায় পাড়ি দেওয়া শামীমা বেগমকে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে দেওয়া হবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ এ কথা জানিয়েছেন। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
দ্য টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাজিদ জাভেদ বলেন, ‘আমার বক্তব্য পরিষ্কার। বিদেশি সন্ত্রাসী সংস্থাকে যদি আপনি সমর্থন করেন, তবে আপনার প্রত্যাবর্তন আমি প্রতিরোধ করব।’ তিনি বলেন, ‘১৯ বছরের শামীমা বেগম যদি ফিরে আসেন, তবে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যিনি আইএসে যোগ দিতে ব্রিটেন ত্যাগ করেছিলেন, তিনি আমাদের দেশকে পুরোপুরি ঘৃণা করেন। এখন যদি তিনি ফিরতেই চান, তবে তাঁকে প্রশ্ন, তদন্ত ও সম্ভাব্য বিচারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। গুরুতর হুমকি এসব নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাজ্য।’
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের দ্য টাইমসের সাংবাদিক অ্যান্টনি লয়েড সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় একটি শরণার্থীশিবিরে সাক্ষাৎ পান শামীমার। ওই সাংবাদিককে শামীমা বলেন, তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখন যেকোনো দিন তাঁর সন্তানের জন্ম হতে পারে। এর আগে অপুষ্টি আর রোগে ভুগে তাঁর দুই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। নবাগত সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান। তবে আইএসে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি অনুতপ্ত নন বলে জানান।
বিবিসির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সম্পাদক ডমিনিক কাসসিনি বলেন, লন্ডনে নিরাপত্তাপ্রধানরা সাময়িক বহিষ্কার আদেশের মাধ্যমে শামীমা বেগমের প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী, দেশটির এ ধরনের কোনো নাগরিক যদি তদন্ত, নজরদারিতে সম্মত থাকেন, তাহলে তাঁকে দেশে ফিরে আসতে বাধা দেওয়া হয় না। সন্ত্রাসবাদবিষয়ক পর্যবেক্ষক লর্ড চার্লি বলেন, শামীমা বেগম যদি অন্য কোনো দেশের নাগরিক না হয়ে থাকেন, তবে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে আসতে পারবেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কোনো মানুষকে দেশহীনভাবে ছেড়ে দেওয়া যায় না।
২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি গেটউইক বিমনবন্দর দিয়ে তুরস্কে পাড়ি দেন তিন মেয়ে শামীমা বেগম, আমিরা আবাসি ও খাদিজা সুলতানা। সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়া যান। আইএস জঙ্গিরা সিরিয়া ও ইরাকের বিশাল একটি অংশ দখল করে ইসলামি খেলাফত রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল। যার রাজধানী ছিল সিরিয়ার রাক্কা শহর।
রিয়ায় পাড়ি দেওয়ার সময় বেথনাল গ্রিন একাডেমির তিন ছাত্রীর মধ্যে শামীমা বেগম ও আমিরা আবাসির বয়স ছিল ১৫ বছর। অপর ছাত্রী খাদিজা সুলতানা ছিলেন ১৬ বছর বয়সী। তাঁদের তিন মাস আগে একই বিদ্যালয়ের ছাত্রী শারমিনা বেগম সিরিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন। শারমিনার সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরেই তিন মেয়ে একসঙ্গে সিরিয়ায় পাড়ি দেন বলে ধারণা। শামীমা বেগম, খাদিজা সুলতানা ও শারমিনা বেগম—এই তিনজন বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান। খাদিজা সুলতানা ২০১৬ সালে বোমা হামলায় নিহত হন বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল।