অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তুলে দেওয়ার আদেশ

অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে। তবে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা ১৪ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একটি আদালত। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাঁকে ওয়াশিংটনের কাছে প্রত্যর্পণের জন্য আজ বুধবার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেন দেশটির আদালত।

বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। এখন অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণ বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের অনুমতির প্রয়োজন। সরকার তথা দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে হবে অ্যাসাঞ্জকে। সেখানে তাঁর ১৭৫ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

এএফপি জানায়, অ্যাসাঞ্জকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের ওপর নির্ভর করছে। তবে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ১৪ দিনের মধ্যে নতুন করে আবেদন করতে পারবেন।

অ্যাসাঞ্জের মামলাটি যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আদালতের দেওয়া নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এই দীর্ঘ চলা মামলায় ইতি ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রীতির কাছে আবেদন জানাবেন বলেও জুলিয়ানের আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁরা মামলার অন্য বিষয়গুলো ধরেও আপিল করতে পারেন। অ্যাসাঞ্জের আইনি পরামর্শদাতা সংস্থা বার্নবার্গ পিয়ার্স সলিসিটরস গত মাসে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, জুলিয়ান এর আগে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানাননি।

অ্যাসাঞ্জকে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার অনুমতি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধসংক্রান্ত পাঁচ লাখ গোপন নথি ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছিল জুলিয়ানের বিরুদ্ধে। ২০১০ সালে গোপন নথি ফাঁস করায় বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে সাত বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকে ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল তাঁকে গ্রেপ্তার করে লন্ডন পুলিশ। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের একটি নিম্ন আদালত অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।

তখন আদালত বলেন, অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো যাবে না। মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করতে পারে।

তবে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যকে বলা হয়, যদি তারা অ্যাসাঞ্জকে হস্তান্তরে সম্মত হয়, তবে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা তাঁর জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায় যেকোনো মার্কিন কারাগারে সাজা ভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট এডিএক্স কারাগারে রাখা হবে না। তবে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা। এরপর যুক্তরাজ্যের নিম্ন আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে যুক্তরাষ্ট্র।

গত মাসে অ্যাসাঞ্জ কারাগারে তাঁর বাগ্‌দত্তা স্টেলা মরিসকে বিয়ে করেছেন। মরিস গত মাসে প্রীতি প্যাটেলের কাছে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক মামলা। প্রীতিই এর সমাপ্তি টানতে পারেন।