অস্ট্রেলিয়ার ভয়াবহ দাবানলের মধ্যে প্রচণ্ড গরম ও খরার কারণে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ১০ হাজার উটকে গুলি করে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিবিসির খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় বুধবার থেকে হত্যার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সেখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো জানিয়েছে, উটের বিশাল দল শহর ও ভবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কানিপি সম্প্রদায়ের একজন মারিতা বেকার বিবিসিকে বলেন, ‘উটগুলো পানির জন্য শহরের রাস্তায় বিচরণ করছে। আমরা আমাদের ছোট শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।’
হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়ে এগুলোকে হত্যা করা হবে। এ কাজে সহায়তা করছে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ ও পানি ডিপার্টমেন্ট। এএফপির খবরে বলা হয়, তারা এক বিবৃতিতে জানায়, খরার কারণে ‘প্রাণিকল্যাণ বিষয়গুলো’ জটিল হয়ে পড়েছে। পানির তৃষ্ণায় অনেক উট মারা যাচ্ছে অথবা পানি খোঁজতে গিয়ে একে অপরকে মাড়িয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মৃত প্রাণীরা গুরুত্বপূর্ণ জলের উৎস ও সাংস্কৃতিক স্থানগুলো দূষিত করে তুলছে।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার আনানজু পিতজানৎজাতজারা ইয়ানকুনিৎজাতজারা (এপিওয়াই) এলাকায় কয়েকটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজন বাস করে। তাদের সংখ্যা ২ হাজার ৩০০। তারা থাকেও ছড়িয়ে–ছিটিয়ে। এই এলাকাতেই এ হত্যাযজ্ঞ চালানো হবে।
এপিওয়াইয়ের জেনারেল ম্যানেজার রিচার্ড কিং এক বিবৃতিতে বলেন, এপিওয়াই ল্যান্ডসে দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে। তাদের গবাদিপশুর খামারে পানির জন্য ঢুকে পড়ছে উটগুলো।
এপিওয়াইয়ের নির্বাহী বোর্ড মেম্বার মারিতা বেকার বলেন, ‘চলমান এ খরার মধ্যে উটের পাল এপিওয়াইয়ের প্রধান সম্প্রদায়গুলোর জন্য ও অবকাঠামোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাৎক্ষণিক এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আমরা নিজেরাই গরম ও দুর্গন্ধের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিবেশে আটকা পড়ে আছি। উটের দল বেরিয়ে এসে পানির সন্ধানে বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে।’
কয়েক মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানল চলছে। কিন্তু খরা চলছে কয়েক বছর ধরে। দাবানলে এরই মধ্যে অন্তত ২৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। পুড়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও গাছপালা, প্রাণ গেছে অনেক নিরীহ প্রাণীর। দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
১৮৪০–এর দশকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম উট আনা হয়। পরের ছয় দশকে ভারত থেকে ২০ হাজারের বেশি উট আমদানি করা হয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি বন্য উট রয়েছে বলে মনে করা হয়। সরকারি হিসাবে বলা হয়, ১০ লাখেরও বেশি উট দেশটির মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ায়।