অবশেষে আলাদা হলো ১৫ মাস বয়সী জোড়া লাগানো যমজ বোন নিমা ও দাওয়া। ভুটানের এই জোড়া লাগানো যমজ শিশুকন্যাদের গত শুক্রবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করতে সক্ষম হন অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসকেরা।
জোড়া লাগানো অবস্থায় ভুটানে জন্মগ্রহণ করে যমজ বোন নিমা ও দাওয়া। তাদের বুক থেকে পেট পর্যন্ত জোড়া লাগানো ছিল। এমনকি তাদের দুজনের মাঝখানে ছিল একটি মাত্র যকৃৎ। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করার জন্য গত অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন তাদের মা বুমচু ঝ্যাংমো। মেলবোর্নের রয়্যাল চিলড্রেন হাসপাতালে তাদের ভর্তি করা হয়। সেখানেই তাদের অস্ত্রোপচার হয়।
গত শুক্রবার দীর্ঘ ছয় ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর আলাদা হয় নিমা ও দাওয়া। ১৮ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেয়। দলটির নেতৃত্ব দেন হাসপাতালের প্রধান সার্জন জো ক্রামেরি। তিনিসহ মোট চারজন সার্জন দুটি দলে বিভক্ত হয়ে অস্ত্রোপচার পরিচালনা করেন।
অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক ক্রামেরি বলেন, প্রথমত, তাদের আলাদা করাটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তার চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল আলাদা করার পর তাদের দুজনের পেটের অংশগুলো আবার বন্ধ করা। কেননা, ছুরি চালানোর আগ পর্যন্ত আমরা জানতাম না তাদের কোন কোন অঙ্গ জোড়া লাগানো।
সফল অস্ত্রোপচারের কথা জানিয়ে ক্রামেরি আরও বলেন, শিশুদের অস্ত্রোপচার অনেক সংবেদনশীল হয়। তবে তারা সুস্থ আছে। অস্ত্রোপচারের ধাক্কাটাও বেশ সামলে নিচ্ছে তারা।
নিমা ও দাওয়াকে এক দিন বয়সে প্রথম দেখেন ভুটানের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন কর্ম শিরাব। তিনিই অস্ট্রেলিয়ায় তাদের আলাদা করার ব্যবস্থা করেন। শিরাবও অস্ট্রেলিয়ায় অস্ত্রোপচারে অংশ নেন। অস্ত্রোপচারের পর খুশির সংবাদ নিয়ে ভুটানে ফিরে গেছেন শিরাব। তবে নিমা ও দাওয়াকে আরও এক মাস চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে অস্ট্রেলিয়াতেই রাখা হবে।
এই অস্ত্রোপচারে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার। এই অর্থের পুরোটায় অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্য সরকার বহন করার প্রস্তাব দিয়েছে।
২০০৯ সালে এই হাসপাতালে একসঙ্গে জোড়া লাগানো বাংলাদেশি যমজ তৃষ্ণা ও কৃষ্ণাকে আলাদা করা হয়। ওই সফলতার পর এ ধরনের চিকিৎসায় বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে রয়্যাল চিলড্রেন হাসপাতাল।