মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায়—এ কথা এখন সারা বিশ্বের মানুষ জানে। কিন্তু রেস্তোরাঁর খাবারের মাধ্যমেও কি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে? বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা এত দিন পর এসে এই বিষয়টি আর একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে একটি গবেষণাও হয়েছে। সেই গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গবেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, মহামারির এই সময়ে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার বিষয়টি একটু সতর্ক হয়ে ভাবতে হবে। কারণ এর থেকেও করোনার সংক্রমণ হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।
সিএনএন ও নিউইয়র্ক পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা করেছে। ১০ সেপ্টেম্বর এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে যারা একবার করোনায় সংক্রমিত হয়ে সেরে উঠেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিতীয়বার করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। সংক্রমিত হওয়ার অন্তত ১৪ আগে তাঁরা রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে যারা একবার করোনায় সংক্রমিত হয়ে সেরে উঠেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিতীয়বার করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। সংক্রমিত হওয়ার অন্তত ১৪ আগে তাঁরা রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন।
গত জুলাইয়ে করোনায় সংক্রমিত ৩১৪ জন প্রাপ্ত বয়স্কের ওপর এই গবেষণাটি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ১৪৫ জনের আবার করোনা পজিটিভ এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, মেরিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, টেনেসি, ইউটাহ ও ওয়াশিংটনে এই গবেষণাটি চালানো হয়েছে।
গবেষকেরা রোগীদের যেসব প্রশ্ন করেছেন, সেগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ছিল—তাঁরা কখনো বার, জিম, সেলুন বা প্রার্থনালয়ে গিয়েছিলেন কিনা? তবে এর বাইরে গবেষকেরা দেখেছেন, যারা অসুস্থতাবোধ করেছেন বা যাদের করোনা পজিটিভ এসেছে, তাঁদের অধিকাংশই রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন। রেস্তোরাঁয় খেয়ে বাসায় ফেরার কয়েক দিন পর তাঁরা শরীরে উপসর্গ টের পেয়েছেন।
গবেষকেরা বলছেন, প্রাপ্ত বয়স্করা দ্বিতীয়বার করোনায় নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত হচ্ছেন রেস্তোরাঁয় গিয়ে। কারণ রেস্তোরাঁয় খেয়ে বাসায় ফেরার ১৪ দিনের মধ্যে তাঁরা করোনার উপসর্গ বুঝতে পারছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা আগে করোনায় সংক্রমিত হননি এবং যারা হয়েছিলেন, এ ক্ষেত্রে শপিং, অফিস, জিম বা সেলুনে গিয়ে তাঁদের সংক্রমিত হওয়ার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্যের কথা গবেষণায় বলা হয়নি। তবে যারা বাড়িতে ১০ জনের কম সদস্য নিয়ে থাকেন, গণপরিবহন ব্যবহার করেন এবং প্রার্থনালয়ে যান, তাঁদের ক্ষেত্রে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। রেস্তোরাঁর ভেতরে বসে বা বাইরে বসে খাওয়ার ক্ষেত্রে সংক্রমণ হওয়ার পার্থক্য কেমন তাও জানানো হয়নি গবেষণায়।
গবেষকেরা বলছেন, বর্তমান নির্দেশনা অনুযায়ী, সামাজিক দূরত্ব বজায় ও মাস্ক ব্যবহার করলেও রেস্তোরাঁর বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা ভাইরাসের সংক্রমণকে প্রভাবিত করে। শপিং বা অন্যান্য ইনডোর কাজে মাস্ক খোলা না লাগলেও খাওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবেই মানুষ মাস্ক পরে থাকতে পারে না। এটাও একটা কারণ হতে পারে।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গবেষণায় অংশ নেওয়াদের মধ্যে যারা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৪২ শতাংশ নিশ্চিত করেছেন, তাঁরা অন্তত অন্য একজন অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাঁদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ক্ষেত্রে ৫১ শতাংশ ছিল পরিবারের সদস্য। আর অংশ নেওয়াদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশের করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। করোনায় সংক্রমিতদের মধ্যে ৭১ শতাংশ ও করোনায় অসংক্রমিত ৭৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তাঁরা জনসমাগমস্থলে মাস্ক বা মুখ ঢেকে চলাচল করেছেন।
নির্দেশনা অনুযায়ী, বার ও রেস্তোরাঁয় এখন নানা সতর্কতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। করোনা প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগের মতো এসব স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার সুযোগ নেই, রাতে পার্টি করার সুযোগ নেই।স্টিভেন ম্যান্ডারনাক, অ্যাসোসিয়েশন অব ফুড অ্যান্ড ড্রাগের নির্বাহী পরিচালক
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসোসিয়েশন অব ফুড অ্যান্ড ড্রাগের নির্বাহী পরিচালক স্টিভেন ম্যান্ডারনাক এক বিবৃতিতে বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী, বার ও রেস্তোরাঁয় এখন নানা সতর্কতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। করোনা প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আগের মতো এসব স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার সুযোগ নেই, রাতে পার্টি করার সুযোগ নেই। গ্রাহকসংখ্যা কমিয়ে ব্যবসা চালানো হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নির্দিষ্ট দূরত্বে টেবিল সাজানো হয়েছে। তারপরও বলছি, রেস্তোরাঁয় এসে খাবার নিয়ে যাওয়া ও ডেলিভারি ব্যবস্থায় খাবার নেওয়ার ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক কম। যদি রেস্তোরাঁ বা বারে বসে কেউ খেতে চান, তা ভেতরে বা বাইরে যেখানেই হোক না কেন এবং সামাজিক দূরত্ব ছয় ফুট বজায় না রাখেন—সে ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।