হ্যাকারের হাত থেকে স্মার্টফোন নিরাপদ রাখার ৫ কৌশল

প্রতীকী ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

রোজকার জীবনে স্মার্টফোন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বন্ধু, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ, ছবি তোলা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট বিনিময়, ওয়েবসাইট দেখা, ব্যাংক হিসাবে প্রবেশ, অনলাইন লেনদেনসহ নানা কাজে স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ স্মার্টফোনে আপনার ব্যক্তিগত কথোপকথন, পাসওয়ার্ড, ব্যাংকের বিস্তারিত ও ব্রাউজিং ইতিহাস থাকে। আর এই স্মার্টফোনের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি কেবল হ্যাকিংয়েই সীমাবদ্ধ নয়, ফোনটি চুরি হয়ে গেলেও সেখান থেকে তথ্য চুরি করে তার অপব্যবহার হতে পারে। স্মার্টফোন নিরাপদ রাখুন এই পাঁচ উপায়ে।

১. সফটওয়্যার ও সুরক্ষা ব্যবস্থার হালনাগাদ

স্মার্টফোন, তা অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোন, যা-ই হোক না কেন, প্রথম কাজ হলো সেটআপ করা। সেটআপের সময় অপারেটিং সিস্টেমের সর্বশেষ সংস্করণ ইনস্টল করা উচিত। এটি সম্ভাব্য সাইবার হামলা থেকে স্মার্টফোনকে সুরক্ষা দেবে। অনেক ক্ষেত্রে এটি খুব সহজ। কারণ, স্মার্টফোন নিজেই হালনাগাদের কথা জানিয়ে দেয়। এ ছাড়া স্মার্টফোনে ব্যবহৃত সব অ্যাপের হালনাগাদ সংস্করণ ব্যবহার করতে হবে। এতে অ্যাপও অনেকদিন ব্যবহার করা যাবে এবং অপ্রত্যাশিত যেকোনো বিষয় থেকে সুরক্ষা দেবে।

২. পাসওয়ার্ড, পিন বা বায়োমেট্রিক সুরক্ষা ব্যবহার করা

ই-মেইলের সুরক্ষার জন্য পাসওয়ার্ড ও অনলাইন লেনদেন তথ্যের সুরক্ষার জন্য পিন ব্যবহার করুন। এই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্তরের সুরক্ষা ব্যবহার করা উচিত। যদিও অনেকে স্মার্টফোনে থাকা তথ্যের সুরক্ষায় সবচেয়ে মৌলিক সুরক্ষার ব্যবস্থাই ব্যবহার করেন না। আপনি হয়তো ভাবছেন, বন্ধুরা আপনার স্মার্টফোনে কী আছে, তা দেখায় কোনো উদ্বেগ নেই।  তবে ফোন চুরি হলে তাতে পিন বা যাচাইকরণ ব্যবস্থা না থাকলে যে কেউ সব তথ্য দেখতে পাবে। পাসওয়ার্ড, পিন বা বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ ব্যবস্থা সচল থাকলে ফোনটি ভুল মানুষের হাতে পড়লেও তথ্যে প্রবেশাধিকার পাবে না। পাসওয়ার্ড হতে হবে স্বতন্ত্র এবং ফোনের লক করায় যে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়, সেটি যেন অ্যাপে ব্যবহার করা না হয়।

৩. বহুমাত্রিক যাচাইকরণের ব্যবস্থা

সাইবার অপরাধীদের কাছে পাসওয়ার্ড হলো সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয়। আর পাসওয়ার্ড পেলে অপরাধীরা ব্যবহারকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করেন। আপনার মোবাইলের অ্যাপে যদি ব্যাংকের বিস্তারিত থাকে, তবে তারও অপব্যবহার করবেন হ্যাকাররা। পাসওয়ার্ড দুর্বল বা শক্তিশালী, যা-ই হোক না কেন, হ্যাকাররা তা পাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাই স্মার্টফোনের বহুমাত্রিক যাচাইকরণের (মাল্টি ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন) ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে। এতে আক্রমণকারী পাসওয়ার্ড পেলেও সরাসরি অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারবেন না। কারণ, আপনার কাছে তার নোটিফিকেশন চলে আসবে। আরও বেশি সুরক্ষিত করতে চাইলে বাড়তি যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।

৪. অ্যাপের উৎস

যেকোনো ধরনের স্মার্টফোনের জন্য অনেক অ্যাপ নামাতে হয়। আপনি যদি আইফোন ব্যবহার করেন, তাহলে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ নামিয়ে নিন। আর অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করলে গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ নামিয়ে নিন। অধিকাংশ অ্যাপই বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। তবে কিছু কিছু অ্যাপের গ্রাহক হতে হয়। ফি দিতে হয়, এমন অ্যাপের বিনা মূল্যের সংস্করণ নামাতে চেষ্টা করেন অনেকে। মনে রাখতে হবে, ফ্রি বা বিনা মূল্যের কোনো সংস্করণ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া যায় না। এটি ঝুঁকি বাড়ায়। প্রতারক ও সাইবার অপরাধীরা এই সুযোগ নিয়ে তৃতীয় পক্ষের ভুয়া সাইটের লিংক পাঠায়। লিংক দেখে মনে হতে পারে, প্রয়োজনীয় অ্যাপ, এটি থেকে নামানো যাবে। ওই সাইটে ক্লিক করলেই বিপদ। এ ছাড়া ভুয়া ই-মেইল দিয়েও প্রতারণার মাধ্যমে তথ্য হাতিয়ে নেন হ্যাকাররা।

৫. নেটওয়ার্ক ব্যবহারে সতর্কতা, ভিপিএন ব্যবহার

অনেকে মোবাইল ফোন সংযোগদাতার ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু তা অনেকের চাহিদার বিপরীতে যথেষ্ট নয়। তাই সুযোগ পেলেই গণ ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের চেষ্টা করেন। অনেক পাবলিক ওয়াই-ফাইয়ের সংযোগ বৈধ। তবে সেটি গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকিমুক্ত নয়। যে কেউ সেই সংযোগ ব্যবহার করতে পারেন। আর সেটিতে তথ্য স্থানান্তর নিরাপদ নয়। আবার ব্যস্ত এলাকায় প্রতারকেরাও বিনা মূল্যে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক চালু করে রাখতে পারেন। আর নেটওয়ার্কে সংযোগ যুক্ত হলে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত সব তথ্য চুরি হতে পারে। নিতান্তই যদি ওই রকম সংযোগ ব্যবহার করতে হয়, তাহলে সেখানে স্পর্শকাতর অ্যাকাউন্টগুলো (ব্যাংক, অনলাইন ওয়ালেট বা যেকোনো ধরনের লেনদেন) লগইন করা যাবে না। এ ছাড়া তথ্যের সুরক্ষায় মোবাইল ভিপিএন ব্যবহার করা যেতে পারে।

সূত্র: জেডডিনেট