পেটাবিট স্তরে তথ্যধারণের অপটিক্যাল ডিস্ক তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেটিতে ১৫ হাজারের বেশি ডিভিডির সমান তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে। এক পেটাবিট মানে হলো ১ লাখ ২৪ হাজার গিগাবাইট বা ১২৫ টেরাবাইট। নতুন ডিস্কটি এআইই-ডিডিপিআর নামের উপাদানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এতে মিশ্রণের অন্যান্য বিন্যাসের তুলনায় অনেক বেশি তথ্যধারণের ঘনত্ব রয়েছে। নতুন ধরনের এই অপটিক্যাল ডিস্কে পেটাবিট পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা রয়েছে। সর্বোচ্চ ১২৫ টেরাবাইট (১ টেরাবাইট = ১০২৪ গিগাবাইট) তথ্য ধারণ করতে পারে নতুন এই ডিস্ক। বিভিন্ন রকমের অপটিক্যাল ডিস্কের কথা আমরা জানি। ডিভিডি ও ব্লু–রে ডিস্ক টেকসই ও সস্তা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। একটি আদর্শ একক স্তরের ব্লু–রে ডিস্ক ২৫ গিগাবাইট তথ্যধারণ করতে পারে। সাধারণভাবে কিছু ইউএসবি ফ্ল্যাশড্রাইভ ১ টেরাবাইট তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। কিছু হার্ডডিস্ক ড্রাইভ ১৬ টেরাবাইট তথ্য ধরে রাখতে পারে।
ডিজিটাল তথ্যধারণের ক্ষমতাকে আরও বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীদের একটি দল একটি নতুন ধরনের উপাদান তৈরি করেছে। ডাই-ডোপড ফটোরেসিস্ট উইথ অ্যাগ্রিগেশন-ইনডিউসড এমিশন লুমিনোজেন বা এআইই-ডিডিপিআর নামে পরিচিত এই উপাদান। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রফলের উচ্চ ঘনত্বের ডেটা সংরক্ষণ করা যায় এই উপাদানের মাধ্যমে।
তাত্ক্ষণিক বার্তা থেকে শুরু করে ভিডিও স্ট্রিমিং—প্রতিদিন অনেক বেশি পরিমাণ ডেটা তৈরি হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন উপাদানের মাধ্যমে তৈরি অপটিক্যাল ডিস্কে ডেটা সংরক্ষণ করে নতুন তথ্যবিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে। অপটিক্যাল ডিস্কে বর্তমান স্টোরেজ পদ্ধতির তুলনায় কম জায়গা দেখা যায়। নেচার জার্নালে নতুন ডিস্ক নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ন্যানোস্কেল স্তরে তথ্য ধারণ করতে পারে এই ডিস্ক। আণবিক স্তরে অপটিক্যাল ডিস্কে তথ্য রেকর্ড করতে নতুন ডিস্কে ২-আইসোপ্রোপাইলথিওক্সানথোন (আইটিএক্স) ও ডিপেন্টেরিথ্রিটল পেন্টা-অ্যাক্রিলেট (ডিটিপিএ) নামের দুটি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। আইটিএক্স বেশ কার্যকর ফটোইনিশিয়েটর, যা আলোর সংস্পর্শে এলে প্রতিক্রিয়া দেখায়। লেজাররশ্মি থেকে দ্রুত তথ্য ধারণ করে। অন্যদিকে ডিটিপিএ হলো একটি মনোমার বা ছোট অণু। উচ্চ আলোক সংবেদনশীলতার এই অণু আলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। কার্যত দুই উপাদান একত্র হয়ে তথ্যকে আগের চেয়ে আরও বেশি ঘনত্বে সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়।
ন্যানোস্কেল পড়ার জন্য হেক্সাফেনিলসিলোল (এইচপিএস), এআইই লুমিনোজেনস (এআইইজেনস) নামের নতুন উপাদান ডিস্কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এআইইজেনস অবিশ্বাস্যভাবে উচ্চ ফ্লুরোসেন্স ক্ষমতার উপাদান। এই পদার্থের তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণের শোষণের হার বেশি। এক ফেমটোসেকেন্ড বা সেকেন্ডের ১০ কোটি ভাগের কম সময়ে ফোকাসড লেজাররশ্মি ব্যবহার করে আরও উন্নত করা হয়। ফলে অপটিক্যাল ডিস্কে তথ্য সঞ্চয় করা যাচ্ছে আরও ভালোভাবে।
ডিস্কের তথ্যধারণের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীরা আণবিক স্কেলে একাধিক স্তরে তথ্য সংরক্ষণ করেছেন। স্তরের মধ্যে দূরত্ব এক মাইক্রোমিটার, যা এক মিলিমিটারের এক হাজার ভাগ কম। বিজ্ঞানীরা ১০০টি স্তরে ডেটা সংরক্ষণ করতে পেরেছেন। ডিস্কের দুই পাশে তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে স্টোরেজের ক্ষমতা বাড়ানো যায়। এই ডিস্ক অনেকটা ভিনাইল রেকর্ডের মতো কাজ করে। বিজ্ঞানীরা ডিস্কে এক পেটাবিটের বেশি ডেটা সংরক্ষণ করতে সমর্থ হয়েছেন, যা পাঁচ হাজার ব্লু-রে ডিস্কের ক্ষমতার চেয়ে বেশি। এখন বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর করার জন্য কাজ চলছে।
২০০১ সালে অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস বিখ্যাত একটি ঘোষণা দিয়েছিলেন। গান শোনার জন্য আইপড উন্মোচনের অনুষ্ঠানে ‘আপনার পকেটে ১ হাজার গান’ নিয়ে আইপড বাজারে আনার ঘোষণা দেন। ৫ গিগাবাইটের আইপড এক হাজার গান ধারণ করতে পারত। আর সাধারণ যেকোনো সিডিতে ৬৫০ মেগাবাইট ধারণক্ষমতায় তিন মিনিট দৈর্ঘ্যের ২৫টির মতো গান সংরক্ষণ করা যায়। অন্যদিকে ব্লু-রে ডিস্ক ৬৬ থেকে ১০০ গিগাবাইট ধারণক্ষমতার হয়। নতুন ডিস্কে ১২৫ টেরাবাইট তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে। ১ টেরাবাইট ডিস্কে ৩ লাখ ৭৫ হাজার গান সংরক্ষণ করা যায়। সেই হিসাবে নতুন ডিস্কে সাড়ে চার কোটির বেশি গান ধারণ করা যাবে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স