২০ আগস্ট আকস্মিকভাবে দেশে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। দ্রুতই ফেনী, নোয়াখালী ও খাগড়াছড়ি জেলার বেশির ভাগ উপজেলা তলিয়ে যাওয়ার সংবাদ আসে। যথাসময়ে পূর্বাভাসবিহীন এ বন্যায় আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দারা একদমই অপ্রস্তুত অবস্থায় পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বন্যার ভয়াবহতা দেখে বানভাসি মানুষের জন্য ত্রাণ তৎপরতায় নেমে পড়ে দেশের ছাত্র–জনতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (আইআইটি) সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা বন্যার্তদের সহায়তার উপায় খুঁজতে সরব হয়ে ওঠেন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার বিকেলে এই শিক্ষার্থীরা বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রকাশ করেছে একটি ওয়েবসাইট।
ওয়েবসাইটটির অন্যতম উদ্যোক্তা আইআইটির প্রাক্তন ছাত্র ফাহমিদ আহমেদ জানান, কাজের ক্ষেত্র তথ্যপ্রযুক্তি বলেই যে তাঁরা ওয়েবসাইট দিয়ে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ব্যাপারটি তা নয়। বরং কাজ করতে করতে একটি গোছানো ডিজিটাল মাধ্যমের প্রয়োজন অনুভব করতেই এ ওয়েবসাইটের সৃষ্টি।
একদম ওপরে রয়েছে একটি সার্চবার। এখানে জেলা, উপজেলা, নাম, ফোন নম্বর বা অন্য কোনো কি-ওয়ার্ড দিয়ে তথ্য খোঁজা যাবে। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষার মাধ্যমে তথ্য খোঁজা সম্ভব। বাঁ দিকে রয়েছে উপজেলাভিত্তিক তথ্য। এখানে উপজেলাভিত্তিক পাওয়া সাহায্যের অনুরোধ দেখানো হয়েছে। কমলা রং দিয়ে কমসংখ্যক অনুরোধ বোঝানো হয়েছে, আর অনুরোধের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রং লালের দিকে গাঢ় হয়েছে।
সার্চবারের নিচেই অনেক ডেটা কার্ডে দেখা যাবে কাদের সাহায্য লাগবে। কখন সাহায্যের অনুরোধ এসেছে, অনুরোধের ধরন (উদ্ধার নাকি ত্রাণ), ঠিকানা, ফোন নম্বর, জেলা, উপজেলা, গুগল ম্যাপসে ঠিকানা, অন্যান্য তথ্য ও তথ্যের উৎস রয়েছে এখানে। আলাদা চারটি ট্যাব দিয়ে অনুরোধের ধরন ভিত্তিতে ফিল্টার করা যাবে।
সার্চবারের নিচে ‘রিচ আওয়ার ভলান্টিয়ার্স’ ট্যাবে ক্লিক করে স্বেচ্ছাসেবীদের অবস্থান ও যোগাযোগের তথ্যসংবলিত ডেটা কার্ড মিলবে। সার্চবারের নিচে নতুন আসা ‘ভিউ কারেন্ট রেসকিউ অ্যান্ড রিলিফ স্ট্যাটাস’ ট্যাবে ক্লিক করে আগের পাতায় ফিরে যাওয়া যাবে।
শুরুতে কেবল এই বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থীরা তথ্য সংগ্রহ, যাচাই ও ডেটাবেজ তৈরির কাজে করছিলেন। তবে গতকাল এখন সারা দেশের স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্যোগটিতে যুক্ত হচ্ছেন।
ফাহমিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাঁতার ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না জানা থাকলে উদ্ধার করতে গিয়ে উল্টো বাড়তি বিপদ সৃষ্টি হয়, তাতে ক্ষতি আরও বাড়ে। অন্যদিকে সবাই উদ্ধার করতে গেলে সমন্বয় করবে কে? এ জন্য যে কেউই আমাদের পেজে বার্তা পাঠিয়ে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, শুধু তা–ই নয়, তারা সাদরে আমন্ত্রিতও বটে।’
ওয়েবসাইটটি তৈরিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন চারজন সাবেক শিক্ষার্থী—হাসনাইন ইকবাল, কাজী মুক্তাদির আহমেদ, তাসমিয়া জেরিন ও মুস্তাহিদ হাসান। হাসনাইন ইকবালের ‘ফ্যাক্টরাইজ’ নামের সফটওয়্যার তৈরির একটি উদ্যোগ রয়েছে। কাজী মুক্তাদির আহমেদ ‘ব্রেইন স্টেশন ২৩’, তাসমিয়া জেরিন ‘সেফালো বাংলাদেশ লিমিটেড’ ও মুস্তাহিদ হাসান ‘স্যামসাং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
দলনেতা ফাহমিদ আহমেদ কাজ করছেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় অ্যামেচার ক্রিকেট লীগ ‘লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডস’-এ সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে। এ ছাড়া এই দলে আবদুল্লাহ আল জাহিদ, আহনাফ মুবাশ্বির, সাদিয়া তাবাসসুম সহায়তা করেছেন। রাকিবুল ইসলাম, নোশিন তাহসিন ও মো. আরিফ হাসান পরিকল্পনা, তহবিল সংগ্রহ, প্রচারণা ও কনটেন্ট বা আধেয় তৈরিতে কাজ করছেন।
হাসনাইন ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সময় কম থাকায় ১০ মিনিটে পরিকল্পনা করে আমরা কাজে লেগে যাই। এক দিনের মধ্যে ওয়েবসাইট দাঁড় করাই জরুরি সুবিধাগুলো দিয়ে। আপাতত কোথায় কী প্রয়োজন হিসাব করে তথ্য দেখানো হচ্ছে এই ওয়েবসাইটে। উপজেলাভিত্তিক আলাদাভাবে তথ্য দেখা যাচ্ছে। আর তথ্য যাতে খুব সহজে শেয়ার করা যায়, এ রকম কিছু ব্যবস্থাও দেওয়া আছে সাইটে। চলমান বন্যা পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে ওয়েবসাইটটা তৈরি করা। কিন্তু এটাকে আমরা আস্তে আস্তে এমনভাবে গড়ে তুলব, যাতে ভবিষ্যতের যেকোনো দুর্যোগে আমরা এটাকে ব্যবহার করতে পারি।’
বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবকেরা হাতে-কলমে তথ্য সংগ্রহ করলেও সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল দাঁড় করানোর পরিকল্পনা আছে বলে ওয়েবসাইট দল থেকে জানা গেছে। তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাৎক্ষণিক তথ্য ডেটাবেজে চলে আসবে। উদ্ধারকারী, ত্রাণ সরবরাহকারী ও সাহায্যপ্রার্থীদের তথ্য জানাতে যোগাযোগ করা যাবে এই ফেসবুক পেজে।
এ ছাড়া বন্যাসংক্রান্ত তথ্য ফেসবুকে প্রকাশ করার সময় #bangladeshflood2024 হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করছে তরুণদের এই স্বেচ্ছাসেবক দল।