‘মেটাভার্স’ মূলত ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া। এটি এমন এক ত্রিমাত্রিক দুনিয়া, যেখানে অনেক মানুষ একসঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হতে পারেন। চোখে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) প্রযুক্তির হেডসেট পরে বাসার ড্রয়িংরুমে বসেই দূরের কোনো বন কিংবা হিমালয় চূড়ায় ওঠা যায়। রিয়েল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা ক্লাবের উত্তেজনাকর খেলা মাঠে বসে দেখার অনুভূতি পাওয়ার পাশাপাশি চাইলে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ার জন্য বাড়ি-গাড়ি কেনারও সুযোগ আছে। তবে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মেটাভার্সে নানা ধরনের অপরাধ বাড়ছে। এ ধরনের অপরাধকে সমাজবিজ্ঞানীরা মেটাক্রাইম বলছেন।
মেটাভার্সে সংগঠিত মেটাক্রাইম ও সাইবার অপরাধ এক নয় বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা। যদিও বিভিন্ন গবেষণায় মেটাভার্সে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে প্রচলিত সাইবার অপরাধের মিল দেখা যাচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রেই অনলাইনে বা ভার্চ্যুয়াল জগতে অপরাধ ঘটছে। মেটাভার্সের প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সঙ্গে অপরাধের পরিধি সাইবার অপরাধের মতো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। বেনামি অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে। নানা কারণে অপরাধীদের ধরা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মেটাক্রাইমের ক্ষেত্রে ‘ইমার্সিভ ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি অ্যাটাক’ দেখা যায়। স্নায়ুর মাধ্যমে বাস্তবে এই আক্রমণ অনুভব করা হয়। দৃশ্য, শব্দ ও হ্যাপটিক (স্পর্শ) প্রযুক্তির হেডসেটে মানবিক সংবেদনশীলতা তৈরি করা হয়। ফলে মেটাভার্সে ঘটা যেকোনো যৌন সহিংসতা ও হয়রানির মতো নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে বাস্তব মনে করেন ব্যবহারকারীরা। এসব আক্রমণ হেডসেটের মাধ্যমে সংরক্ষণ বা রেকর্ড না করলে অপরাধের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হারিয়ে যায়।
মেটাভার্স এরই মধ্যে নারীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে বলে মনে করা হচ্ছে। মেটাভার্স ব্যবহারকারীদের বড় একটা অংশ শিশু-কিশোর। ফলে দ্রুত এই অপরাধের শিকার হবে বিপুলসংখ্যক শিশু-কিশোর। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের পুলিশের কাছে মেটা অপরাধের একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, মেটাভার্সে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি গেম (ভিআর গেম) খেলার সময় ‘দলবদ্ধ ধর্ষণের’ শিকার হয়েছেন যুক্তরাজ্যের এক কিশোরী। অভিযোগের বিষয়ে দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী কিশোরী বাস্তব বা শারীরিক জগতের আক্রমণের শিকার না হলেও মানসিক আক্রমণের শিকার হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
অ্যাপল, মেটা ও মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটাভার্সে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। গবেষণা সংস্থা গার্টনারের হিসাবে ২০২৬ সালে ২৫ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা বিভিন্ন কাজ, কেনাকাটা, শিক্ষা, সামাজিক মাধ্যম ও বিনোদনের জন্য মেটাভার্সে ব্যয় করবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তব বলা যায়।
সূত্র: টেক এক্সপ্লোর