ভূমিকম্প, সুনামি, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে সুনামি, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম তথ্য জানার সুযোগ মিললেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানার কার্যকর পদ্ধতি এখনো আবিষ্কার হয়নি। আর তাই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। এবার কয়েক মাস আগে থেকে ভূমিকম্পের সতর্কতা দিতে সক্ষম নতুন এক পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করছেন। আলাস্কা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় দুটি বড় ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করার সময় তাঁরা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তাঁদের দাবি, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকার আগের নিম্ন-স্তরের টেকটোনিক অস্থিরতা শনাক্তকরণের মাধ্যমে বড় ধরনের ভূমিকম্প সম্পর্কে জানা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএএফ জিওফিজিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষণা সহকারী অধ্যাপক টারসিলো গিরোনা বলেন, মেশিন লার্নিংয়ের ওপর ভিত্তি করে ভূমিকম্প শনাক্তকরণ পদ্ধতি বের করেছেন তাঁরা। উন্নত পরিসংখ্যানগত কৌশল ব্যবহার করে ভবিষ্যদ্বাণী করা যাবে ভূমিকম্প। মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে অতীতের ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে বড় মাত্রার ভূমিকম্প চিহ্নিত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনে ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণীসংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের তথ্য অনুসন্ধান করার জন্য একটি কম্পিউটার অ্যালগরিদম তৈরি করেছেন। দুটি বড় ভূমিকম্পের তথ্যের মাধ্যমে এই অ্যালগরিদম তৈরি করা হয়। ২০১৮ সালে রিখটার স্কেলে ৭.১ মাত্রার অ্যাঙ্কোরেজ ভূমিকম্প ও ২০১৯ সালের ক্যালিফোর্নিয়া রিজক্রেস্টের ৬.৪ থেকে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পের তথ্য তাঁরা বিশ্লেষণ করেছেন। বিজ্ঞানীরা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, দক্ষিণ মধ্য আলাস্কা ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রায় তিন মাস সময়ের মধ্যে কম মাত্রার আঞ্চলিক ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে বড় ভূমিকম্পের আগের ছোট কম্পনের বেশির ভাগই মাত্রা রিখটার স্কেলে ১.৫-এর নিচে থাকে। অ্যাঙ্কোরেজ ভূমিকম্প ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর সকাল ৮টা ২৯ মিনিটে হয়। সেই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল শহর থেকে প্রায় সাড়ে ১০ মাইল উত্তরে। সেই ভূমিকম্পে কিছু সড়ক ও মহাসড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা অ্যাঙ্কোরেজ ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে আগের অনেক নিম্ন মাত্রার কম্পনের খোঁজ পান। এসব কম্পনকে বিশ্লেষণ করে অ্যালগরিদম ৯০ দিন বা তার কম সময়ের মধ্যে বড় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত জানাতে পারে।
বিজ্ঞানী গিরোনা বলেন, ভূমিকম্প গবেষণায় মেশিন লার্নিং একটি বড় প্রভাব তৈরি করছে। আধুনিক সিসমিক নেটওয়ার্ক প্রচুর ডেটা সেট তৈরি করে। এই ডেটা সেট সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে সিসমিক ক্রিয়া বা ভূমিকম্পের আগে কিছু তথ্য পাওয়ার সুযোগ আছে। মেশিন লার্নিং ও উচ্চ পারফরম্যান্সের কম্পিউটিং গবেষকদের আসন্ন ভূমিকম্পের সংকেত দিতে পারে। নতুন অ্যালগরিদম ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের জন্য সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করতে পারে। রিয়েলটাইম পরিস্থিতির তথ্য দিতে পারে। কোনো এলাকার তথ্য জানতে সেই এলাকা ঐতিহাসিক যত ভূমিকম্পের তথ্য আছে, তা দিয়ে অ্যালগরিদমকে প্রশিক্ষণ করা হয়। যদিও পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য ভূমিকম্পের পূর্বাভাস তৈরি নিয়ে বিতর্ক আছে। সঠিক পূর্বাভাস পেলে ভূমিকম্পের কারণে জীবন বাঁচানো যায়, অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র: সায়েন্স ডেইলি