তারকাদের সন্তানদের নিয়ে সারা পৃথিবীতেই আগ্রহ দেখা যায়। তাঁরা কি মা-বাবার পথেই হাঁটেন? নাকি অন্য কোনো পেশায় নিজেকে জড়ান। প্রযুক্তির দুনিয়ার আলোচিত ব্যক্তিত্ব ও উদ্যোক্তাদের সন্তানদের নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই। প্রযুক্তির অনেক দিকপালই ব্যক্তিগত জীবন বেশ গোপন রাখার চেষ্টা করেন। তবে কেউ কেউ সন্তানদের নিজের প্রতিষ্ঠানে যুক্ত করেন। আলোচিত কয়েকজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তার সন্তানেরা কে কোথায় আছেন? কী করছেন? চলুন জেনে নিই—
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও তাঁর সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের তিন সন্তান। তিনজনের কেউই বাবার পথ ধরে প্রযুক্তি দুনিয়ায় হাঁটেননি। নিজেরা পড়াশোনা শেষ করে যাঁর যাঁর আগ্রহের দিকে ছুটে গেছেন। বিল ও মেলিন্ডা গেটসের বড় সন্তান জেনিফার গেটসের বয়স ২৭। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেনিফারের প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। বিল গেটস এখন নানা হিসেবে বেশ গর্বিত বলে বিভিন্ন বক্তব্যে উল্লেখ করছেন। একটি ভিডিও সাক্ষাত্কারে বিল বলেন, ‘আমি আমার নাতি-নাতনিদের জন্য একটি অ্যাডভেঞ্চার তৈরির পরিকল্পনা করছি।’ জেনিফার গেটস ১৯৯৬ সালের ২৬ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর আগে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানব জীববিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেন। ইনস্টাগ্রামে জেনিফার নিজেকে একজন অশ্বারোহী ও বইপড়ুয়া হিসেবে লিখেছেন। ঘোড়ার বিশেষ কসরতের খেলা ‘শো জাম্পার’-এ বছরের পর বছর প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নিয়েছেন জেনিফার। জেনিফার ২০২১ সালে আরেক অশ্বারোহী নাসারকে বিয়ে করেন।
বিল গেটসের ছেলের নাম ররি গেটস। ররি ১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২২ সালের জুনে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হয়েছেন। মাত্র চার বছরে একটি ডবল মেজর ও একটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০১৭ সালে ছেলে ররিকে নিয়ে মা মেলিন্ডা টাইমস সাময়িকীতে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তিনি ররিকে সহানুভূতিশীল, কৌতূহলী ও বুদ্ধিমান হিসেবে বর্ণনা করেন।
বিল গেটসের ছোট কন্যার নাম ফোবি গেটস। ২০০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন ফোবি। বর্তমানে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ফোবি।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একরোখা ছিলেন অ্যাপল ইনকরপোরেটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। প্রথম থেকেই ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবারকে সবার সামনে থেকে সরিয়ে রাখেন স্টিভ। স্টিভ জবসের চার সন্তান সব সময়ই প্রযুক্তিপ্রেমীদের আড্ডার বিষয় ছিল। তারুণ্যে নিজের পরিবার নিয়ে তেমন মনোযোগী না হলেও পরের দিকে নিজেকে ভালো বাবা হিসেবে তৈরির চেষ্টা করেছেন জবস।
স্টিভ জবসের জ্যেষ্ঠ কন্যার নাম লিসা ব্রেনান-জবস। লিসা ব্রেনান-জবসের জন্ম ১৯৭৮ সালে। তাঁর মা ক্রিসান ব্রেনান। লিসা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে কিংস কলেজেও পড়েছেন। হার্ভার্ড থেকে স্নাতক হয়ে ম্যানহাটানে চলে আসেন তিনি। ভোগ, ম্যাসাচুসেটস রিভিউ, দ্য অপরাহ ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে লেখালেখি করেন। তাঁর স্বামী বিল একজন সফটওয়্যার ডিজাইনার। লিসার একটি ছেলে রয়েছে। শৈশব-কৈশোরে লিসা স্টিভ জবসের কাছ থেকে দূরে ছিলেন। খুব স্বাভাবিক বাবা-মেয়ের সম্পর্ক ছিল না লিসা ও স্টিভ জবসের।
রিড স্টিভ জবসের ছেলে। ১৯৯১ সালে জবসের সঙ্গে রিডের মা লরিন পাওয়েলের বিয়ে হয়। রিড স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৫ সাল থেকে রিড তাঁর মায়ের প্রতিষ্ঠান এমারসন কালেক্টিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। সামগ্রিকভাবে অভিবাসন সংস্কার থেকে শুরু করে পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন রিড। রিডের বেশি আগ্রহ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে।
স্টিভ জবসের আরেক মেয়ের নাম ইরিন সিয়েনা জবস। ইরিনের সম্পর্কে প্রকাশিত তথ্য খুবই কম। জবসের নিজের আত্মজীবনীতে ইরিনকে শান্ত, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও সংবেদনশীল বলে লিখেছেন। অন্যদিকে স্টিভ জবসের কনিষ্ঠ কন্যার নাম ইভ জবস। ইভ জবসের জন্ম ১৯৯৮ সালের ৯ জুলাই। ইভ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং একজন দক্ষ অশ্বারোহী। ২০১৯ সালে শো-জাম্পার খেলায় বিশ্বজুড়ে ২৫ বছরের কম বয়সী শীর্ষ পাঁচ অশ্বারোহীর তালিকায় ৫ নম্বরে ছিলেন ইভ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ইভ।
কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডেল টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল এস ডেল। তাঁর চার সন্তান আলেক্সা ডেল, জুলিয়েট ডেল, জ্যাকারি ডেল ও কিরা ডেল। বাবার পথেই পা রাখার চেষ্টা করেন সবাই। কেউ ডেল টেকনোলজিসে যুক্ত হয়েছেন, আবার কেউ নিজের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছেন।
কিরা ডেল মাইকেল ও সুসান দম্পতির বড় মেয়ে। পারিবারিক ব্যবসার আশপাশেও নেই কিরা। স্নাতক হওয়ার পরে কিরা ডেল বেশ কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন। বেশ কয়েকটি সামাজিক ও ন্যায়বিচারকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানের পণ্য পরিচালনায় কাজ করেন। পরামর্শক হিসেবে নিজের মতো করে কাজ করেন কিরা।
মাইকেল ডেলের আরেক মেয়ে আলেক্সা ডেল। আলেক্সা ২০১৩ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউট হয়ে পড়াশোনা বাদ দেন। একটি ডেটিং–বিষয়ক কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। পরে নিজের প্রযুক্তি পরামর্শক সংস্থা চালু করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিন্ডারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শন রাডের সঙ্গে প্রেম করেছেন। ২০১৬ সালে আলেক্সা বাম্বলে যোগ দেন কোম্পানির উপদেষ্টা ও ব্র্যান্ডিং পরামর্শদাতা হিসেবে। আবাসন বিনিয়োগকারী আরশিয়া হ্যারিসন রেফুয়ার সঙ্গে আলেক্সা ডেলের বাগ্দান হয়েছে।
জুলিয়েট ডেল মাইকেল ডেলের আরেক মেয়ে। তিনি প্রযুক্তি জগতে নেই। ২০১৬ সালে ডেল টেকনোলজিসে গ্রীষ্মকালীন বিপণন ও যোগাযোগে শিক্ষানবিশী করেন। ফ্যাশন নিয়ে কাজ করেন জুলিয়েট। জুলিয়েট ডেল ফ্যাশন ডিজাইনার রিম অ্যাক্রার সঙ্গে কাজ করেন। এর আগে জুলিয়েট ফ্যাশন হাউস হার্মেসে শিক্ষানবিশি করেছিলেন। জুলিয়েট ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করেন।
মাইকেল ডেলের ছেলে জ্যাচারি ডেল থ্রাইভ ক্যাপিটালে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠান্টি ইন্টারনেট, সফটওয়্যার ও প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে। জ্যাচারি ডেল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকস্টোনে প্রাইভেট-ইকুইটি বিশ্লেষক হিসেবে এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেন। জ্যাচারি ডেল ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াতে পড়াশোনা করেছেন। তিনি পড়েছেন মনোবিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাবার প্রতিষ্ঠান এসডি ক্যাপিটালে গ্রীষ্মকালীন শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেছেন। জ্যাচারি হাইস্কুলে পড়ার সময় থ্রেড নামের টিন্ডারের মতো একটি ডেটিং অ্যাপ চালু করেছিলেন।
অ্যাপলের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক। ওজনিয়াক চারবার বিয়ে করেন। তাঁর তিন সন্তান। কন্যা সারা নাদিন ওজনিয়াক আর স্টিফেন গ্যারি ওজনিয়াক জুনিয়র ও জেসি জন ওজনিয়াক তাঁর দুই ছেলে। জেসি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। সারা আইনপেশায় জড়িত। স্টিফেন সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি।
দক্ষিণ কোরীয় ব্যবসায়ী লি ব্যুং-চুল স্যামসাং গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৩৮ সালে স্যামসাং ট্রেডিং কোম্পানি চালু করেন। লি দুবার বিয়ে করেন। তাঁর ছয় সন্তান। লির সব সন্তানই ব্যবসায়ে যুক্ত হন। স্যামসাং দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান। অনেক কাজে যুক্ত। স্যামসাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা লির সন্তানেরাও বাবার দেখানো ব্যবসার পথে পা রেখেছেন। ১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া ছেলে লি কুন-হি স্যামসাং গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০২০ সালে মারা যান। স্যামসাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা লির ৮০ বছর বয়সী মেয়ে লি মিয়ুং-হি কোরীয় ডিপার্টমেন্ট স্টোর ফ্র্যাঞ্চাইজি শিংসেগেইয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও সাবেক স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি স্কটের চার সন্তান—তিন ছেলে ও এক মেয়ে। জেফ এক কন্যাসন্তানকে চীন থেকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। বড় ছেলে প্রেস্টন বেজোসকে জনসমক্ষে দেখা যায়। প্রেস্টনের জন্ম ২০০০ সালে। প্রেস্টন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন বলে জানা যায়। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন জেফ বেজোস। বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুমান প্রেস্টনই হবে জেফ বেজোসের উত্তরাধিকার। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বেজোসের সঙ্গে তাঁর ছেলে প্রেস্টনকে দেখা যায়। অন্য সন্তানদের তথ্য জনসমক্ষে কখনোই প্রকাশ করেন না জেফ বেজোস।
কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিউলেট প্যাকার্ড-এইচপির সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল হিউলেট ও ডেভিড প্যাকার্ড। বিল হিউলেটের পাঁচ সন্তান—এলিনর, ওয়াল্টার, জেমস, উইলিয়াম ও মেরি। এইচপি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান। সহপ্রতিষ্ঠাতাদের সন্তানেরা কোনো না কোনোভাবে এইচপি–সংশ্লিষ্ট কাজেই যুক্ত ছিলেন। আবার কেউ কেউ বিজ্ঞানের অন্য দুনিয়ায় পেশা গড়েছেন। হিউলেটের ছেলে ওয়াল্টার ব্যবসায়ী। তিনি এইচপির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও ভারমন্ট টেলিফোন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। হিউলেটের সন্তানেরা নানা সময়ে এইচপির প্রশাসনিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
ডেভিড প্যাকার্ডেরও চার সন্তান। ডেডিভ, ন্যান্সি, সুজান ও জুলি। ছেলে ডেভিড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। প্যাকার্ডের মেয়ে সুজান বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত আছেন। টেলোসা নামের একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন সুজান। আরেক মেয়ে জুলি প্যাকার্ড জলবায়ুকর্মী হিসেবে আলোচিত। তাঁর নামে শৈবালের একটি প্রজাতির নামকরণও করা হয়েছে।
হাল আমলের আলোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের অনেকেই পরিবারকে আড়ালে রাখেন। আবার কেউ কেউ ইলন মাস্কের মতো সারাক্ষণই গণমাধ্যমে আলোচনায় থাকছেন। টুইটারের (বর্তমানে এক্স) প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডর্সির সন্তানদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের এখন পর্যন্ত ১১ সন্তানের নাম জানা যায়। ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের তিন কন্যা—ম্যাক্সিমা, আগস্ট ও অরেলিয়া। ইয়াহুর সহপ্রতিষ্ঠাতা জেরি ইয়াংয়ের দুই সন্তানের কথাও জানা যায়।
গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজের দুই সন্তান। ল্যারি ও তাঁর স্ত্রী লুসিন্ডা সাউথওর্থের প্রথম সন্তান ২০০৯ সালে জন্মগ্রহণ করে। দ্বিতীয় সন্তান ২০১১ সালে। গুগলের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিনের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ২০০৭ সালে ব্রিন বায়োটেক উদ্যোক্তা অ্যান ওজস্কিকে বিয়ে করেন। ২০০৮ সালে সের্গেইয়ের ছেলে ও ২০১১ সালে মেয়ের জন্ম হয়।
গুগলের বর্তমান সিইও সুন্দর পিচাইয়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে। কাব্য পিচাই ও কিরণ পিচাই স্কুলে পড়াশোনা করে। অন্যদিকে মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তাঁর ছেলে জেইনসেরেব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে মারা যায়। সত্য নাদেলার দুই কন্যা—তারা নাদেলা ও দিব্যা নাদেলা বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত আছেন।
অনেক প্রযুক্তি উদ্যোক্তা আবার একাকী জীবন যাপন করেন। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেন অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর কোনো সন্তান ছিল না। চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা ও তাঁর স্ত্রী ঝাং ইংয়ের তিনটি সন্তান রয়েছে। জ্যাক মার ছেলের নাম মা ইউয়ানকুন। তিনি ১৯৯২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। জ্যাক মার অন্য দুই সন্তানের নাম কখনোই গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়নি।
ওরাকল, ইন্টেল, টয়োটা বা ইনফোসিসের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি দুনিয়ায় আলোচিত। ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন। তাঁর দুই সন্তান মেগান এলিসন ও ডেভিড এলিসন। মেয়ে মেগান এলিসন চলচ্চিত্রে কাজ করেন। অন্নপূর্ণা পিকচার্স নামের প্রোডাকশন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ‘জিরো ডার্ক থার্টি’, ‘হার’, ‘আমেরিকান হাসল’সহ বেশ কয়েকটি অস্কার মনোনীত সিনেমা প্রযোজনা করেন। ছেলে ডেভিড এলিসনও সিনেমায় কাজ করেন। স্কাইড্যান্স মিডিয়ার প্রধান ডেভিড। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। মিশন: ‘ইমপসিবল-ফলআউট’, ‘টার্মিনেটর জেনেসিস’সহ বিভিন্ন আলোচিত সিনেমা প্রযোজনা করেছেন।
ইন্টেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা রবার্ট নয়েস। গর্ডন মুরের সঙ্গে ১৯৬৮ সালে ইন্টেল প্রতিষ্ঠা করেন। রবার্টের চার সন্তান—ছেলে উইলিয়াম বি ও তিন মেয়ে পেনড্রেড, প্রিসিলা ও মার্গারেট। পেনড্রেড পেশায় চিকিৎসক ও বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষক। একই সঙ্গে বিজ্ঞান লেখক হিসেবে আলোচিত। নয়েসের বাকি ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে তেমন বিস্তারিত জানা যায়নি। ইন্টেলের সহপ্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুরের দুই সন্তান—কেনেথ মুর ও স্টিভেন মুর। স্টিভেন মুর সাহিত্যিক। সাহিত্য সমালোচক হিসেবে স্টিভেন মার্কিন সমাজে সমাদৃত। অন্যদিকে তাঁর ছোট ভাই কেনেথের বিষয়ে তেমন তথ্য জানা যায়নি।
ভারতের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ইনফোসিস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সাতজন। এন আর নারায়ণ মূর্তি অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা। তাঁর কন্যা আকশাতা মূর্তি। আকশাতার স্বামী বর্তমানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। আকশাতা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ক্ল্যারেমন্ট ম্যাকেনা কলেজ থেকে অর্থনীতি ও ফরাসি ভাষায় পড়াশোনা করেন। পরবর্তী সময়ে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
নারায়ণ মূর্তির ছেলে রোহান মূর্তি যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। রোহান ইনফোসিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে হার্ভার্ড সোসাইটি অব ফেলোতে গবেষণার জন্য করপোরেট দায়িত্ব থেকে ছুটিতে আছেন রোহান।
বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটার প্রতিষ্ঠাতা কিচিরো টয়োডা। তাঁর দুই ছেলে শোইচিরো টয়োডা ও তাতসুরো টয়োডা। শোইচিরো টয়োডা টয়োটা মোটর করপোরেশনের চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাতসুরো টয়োটা ফাউন্ডেশনের অনারারি চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তথ্যসূত্র: পিপল ও উইকিপিডিয়া