প্রযুক্তির জগতে নারী-পুরুষের বৈষম্য নিয়ে অনেক তর্ক হয়। কর্মী হিসেবে নারীদের সংখ্যা যেমন কম, তেমনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ হাতে গোনা। ১৯৮৫ সালে বিশ্বের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে ৩৫ শতাংশ কর্মী ছিলেন নারী। প্রায় চার দশক পর ২০২৩ সালের হিসাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশে। প্রযুক্তি খাতে যুক্ত থাকা ৫০ শতাংশ নারী ৩৫ বছর বয়সে কাজ ছেড়ে দেন। কারিগরি ও প্রকৌশল খাতে ৩২ শতাংশ নারী ‘একমাত্র’ হিসেবে অফিসে কাজ করছেন। ২০২২ সালে নারীদের পরিচালনায় আছে এমন উদ্ভাবনী উদ্যোগ বা স্টার্টআপের মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ বিনিয়োগ (ভেঞ্চার ক্যাপিটাল) পায়। ২৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে মাত্র সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছে নারী পরিচালিত স্টার্টআপ।
যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ পাণ্ডব প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট (গুগলের মূল কোম্পানি), অ্যাপল, মেটা (ফেসবুকের মূল কোম্পানি), অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটে কখনোই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও পদে কোনো নারীকে দেখা যায়নি। জরিপে অংশ নেওয়া নারী কর্মীদের মধ্যে ৮ থেকে ৯ শতাংশ প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়ার তথ্য দেন। প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্বে থাকা নারীদের অনেক চ্যালেঞ্জ। ব্যবসায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাকিঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানি ও নারীদের সংগঠন লিনইন ২০২২ সালে একটি গবেষণা চালায়। ৩৩৩টি প্রতিষ্ঠান ও ৪০ হাজারের বেশি কর্মী গবেষণার জরিপে অংশ নেন। ৩৭ শতাংশ নারী নির্বাহীর কৃতিত্ব পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হয়েছে। নারী নির্বাহীরা কর্মক্ষেত্রে নানা মাত্রায় আগ্রাসনের সম্মুখীন হচ্ছেন। ফরচুন ৫০০ তালিকায় আছে, এমন প্রতিষ্ঠানের মাত্র ১০ শতাংশের নেতৃত্বে আছেন নারীরা। প্রযুক্তি খাতে নারীর নেতৃত্বের হার ৩৩ শতাংশ।
২০২৩ সালে প্রযুক্তি খাতের শীর্ষে থাকা দুজন নারী নির্বাহী পদ থেকে সরে যান। তাঁরা হলেন মেটার প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা মারনে লেভিন ও ইউটিউবের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা সুজান ওজসিস্কি। সুজান ১৯৯৮ সালে গুগল প্রতিষ্ঠার সময় যুক্ত ছিলেন। তাঁর গ্যারেজেই যাত্রা শুরু করে গুগল। ১৯৯৯ সালে গুগলের বিপণন ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০১৪ সালে সুজান ইউটিউবের নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে শেরিল স্যান্ডবার্গ ফেসবুক ও মেটার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) হিসেবে ২০২২ সাল পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন। তাঁর হাত ধরে ফেসবুক ২০০৮ সাল থেকে বড় আকারের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে। গুগল থেকে শেরিল ফেসবুকে যোগ দিয়েছিলেন।
গুগলে যোগ দেওয়া ২০তম কর্মী মারিসা মেয়ার ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইয়াহুর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে সানশাইন নামের একটি প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেছেন মারিসা।
আইভি রস বর্তমানে গুগলের হার্ডওয়্যার ডিজাইনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৪ সালে তিনি গুগলে যোগ দেন। গুগল গ্লাস তৈরিতে নেতৃত্ব দেন। গুগলের গ্লোবাল পার্টনারশিপের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন বনিতা স্টুওয়ার্ট। ২০০৬ সালে গুগলে যোগ দেন তিনি। গুগলে ১৯৯৯ সালে যোগ দেন প্রকৌশল জেন ফিৎজপ্যাট্রিক। তিনি বর্তমানে গুগল কোর সিস্টেমস অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। গুগলের প্রথম চারজন শিক্ষানবিশ কর্মীর একজন ছিলেন জেন। আর ৩০তম কর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন গুগলে। মারিসা মেয়ারের অধীনে কাজ করতেন জেন।
২০২৩ সালের ডিডিআই গ্লোবাল লিডারশিপ ফোরকাস্টের হিসাবে প্রযুক্তি খাতে নারীর নেতৃত্ব কমার হার ২৮ শতাংশের মতো বলে উল্লেখ করা হয়। ১৩ হাজার কর্মী ও ১ হাজার ৮০০ মানবসম্পদ কর্মকর্তার কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টার্টআপ জিনোমের চালানো জরিপে দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা কোনো নারী। অস্ট্রেলিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৫ শতাংশ স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা নারী। মধ্যপ্রাচ্যে এ হার মাত্র ১০ শতাংশ। উত্তর আমেরিকায় ২০২২ সালের হিসাবে ১৬ শতাংশ নারী নির্বাহী প্রকৌশলীর কাজে যুক্ত আছেন, যেখানে ২৭ শতাংশ নারী কারিগরি কাজে যুক্ত।
২০২৩ সালে টেক ওয়ার্কফোর্সের প্রতিবেদনে জানানো হয় প্রযুক্তিনির্ভর কাজে ২৬ শতাংশ নারী যুক্ত আছেন । যুক্তরাষ্ট্রের বড় ৫০টি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী পদে নারীর অংশ নেওয়ার হার মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ। ওরাকল করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী সাফরা এ ক্যাটজ এবং প্রসেসের নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান এএমডির সিইও ও চেয়ার লিসা সু শীর্ষ ৫০ প্রতিষ্ঠানে নারী হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শীর্ষ ৮ প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অ্যাপলে ৩৮, মাইক্রোসফটে ৩৪, অ্যালফাবেটে ৩৪, টেসলায় ২২ ও মেটায় ৪৪ শতাংশ নারী কর্মী রয়েছেন। স্ল্যাশডেটার হিসাবে, ২০২৩ সালে ১১ শতাংশ নারী ডেভেলপার কম বেতন পান বলে মনে করেন।সূত্র: টেকোপিডিয়া ডটকম