আজ মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা ফেসবুকে সমস্যা দেখা গেছে। বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকের টাইমলাইন ফাঁকা দেখা গেছে। বাংলাদেশ সময় বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে এই সমস্যার সমাধান হতে দেখা যায়।
সাধারণভাবে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সমস্যা, সার্ভারে ব্যবহারকারীদের চাপ কিংবা নিরাপত্তাঝুঁকির জন্য ফেসবুকে ত্রুটি দেখা যায়। এর ফলে ব্যবহারকারীরা জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার থেকে সাময়িকভাবে বঞ্চিত হন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুসারে মেটার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম চলতি বছর ৩৩ বারের মতো ত্রুটি দেখা গেছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ত্রুটির সংখ্যা ছিল ১৩ বার।
শুধু ফেসবুক নয়, একই কারণে মেটার মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম আর হোয়াটসঅ্যাপেও ত্রুটি দেখা যায়। কখনো সারাবিশ্বে, আবার কখনো কখনো নির্দিষ্ট এলাকা বা দেশে ত্রুটিজনিত সমস্যায় পড়ে ফেসবুক। ইএসইটি অ্যান্টভাইরাসের সাইবার নিরাপত্তা পরামর্শক জ্যাক মুর বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া বা ত্রুটির ইতিহাস রয়েছে। অনেক কারণের জন্য এমনটা দেখা যায়। গত ৬ মার্চ সারাবিশ্বে ফেসবুক কিছু সময়ের জন্য ব্যবহার করা যায়নি। তখন ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার মুখপাত্র ‘ফোর্বস’ সাময়িকীকে বলেন, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে ব্যবহারকারীরা কিছু সেবা ব্যবহারে অসুবিধার মুখে পড়েন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যা সমাধান করার কাজ করা হচ্ছে।
নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান সিসকোর থাউজেন্ডআইস ইন্টারনেট ইন্টেলিজেন্স টিমের বিশেষজ্ঞরা ফেসবুকের বিভ্রাট নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। ৬ মার্চ সারা বিশ্বে ফেসবুক ব্যবহারে যে সমস্যা দেখা গিয়েছিল, সেই সমস্যার পুরোটাই ছিল কারিগরি ধরনের। অথেনটিকেশন কোডের জন্য কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবস্থায় ত্রুটি বড় এই সংকটের কারণ ছিল। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ত্রুটি বা সাময়িক বন্ধ থাকার কারণে অনেক ব্যবহারকারী খুদে ব্লগ লেখার সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রতিক্রিয়া জানান। এক্সের মালিক ইলন মাস্ক লেখেন, ‘আপনি যদি এই পোস্ট পড়েন, তার কারণ হলো আমাদের সার্ভার কাজ করছে।’
ফেসবুক সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর। ফেসবুকসহ মেসেঞ্জোর, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপে ত্রুটি দেখা গিয়েছিল তখন। ৭ ঘণ্টা ১১ মিনিট ধরে সেই ত্রুটি স্থায়ী হয়েছিল। প্রযুক্তির ভাষায় ‘বর্ডার গেটওয়ে প্রোটোকল’–সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সেই বার ত্রুটি দেখা যায়। ফেসবুক এই প্রোটোকল হালনাগাদ করার কারণে অনেক ব্যবহারকারী সমস্যায় পড়েন। সেই ত্রুটির কারণে প্রায় ১ কোটি অভিযোগ জমা পড়ে ডাউনডিটেক্টর সাইটে। ত্রুটির জন্য ফেসবুকের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাইক শ্রোয়েফার ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। সেই ত্রুটির কারণে ফেসবুকের শেয়ারের দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমে যায়। আর মার্ক জাকারবার্গের সম্পদের মূল্যমান কমে যায় প্রায় ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। ফরচুন সাময়িকীর হিসাবে ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকে ৬ কোটি মার্কিন ডলার আয় হারায় বলে জানা যায়।
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পরে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই প্রথম ফেসবুকের ত্রুটি সম্পর্কে জানা যায়। কারিগরি ত্রুটি পরীক্ষার জন্য সাময়িক সময়ের জন্য ফেসবুকের প্রকৌশলীরা ফেসবুক সার্ভার বন্ধ রাখেন। ২০১০ সালে দুই ঘণ্টার জন্য ফেসবুক ব্যবহার করা যায়নি। নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে বন্ধ ছিল ফেসবুক। ২০১৪ সালের ১৯ জুন ফেসবুক ৩১ মিনিটের জন্য বন্ধ ছিল। ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রায় ৫০ মিনিট ত্রুটিজনিত কারণে ফেসবুক ব্যবহার করা যায়নি।
সূত্র: ডেইলি মেইল