নতুন দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে হিমকম্পন।
নতুন দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে হিমকম্পন।

নতুন দুর্যোগের নাম হিমকম্পন

শীতে ত্বক ফেটে যাওয়ায় সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। শুধু ত্বক নয়, শীতে মাটিও ফেটে যায়। সম্প্রতি এক গবেষণায় উত্তর মেরুর আশপাশের বিভিন্ন দেশে হিমকম্পন বা তুষারকম্পন নামের নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা জানিয়েছেন গবেষকেরা। আমরা দুর্যোগ বলতে সাধারণত ঘূর্ণিঝড়, বজ্রপাত, খরাসহ ভূমিকম্পকে বুঝে থাকি। সেই তালিকায় নতুন একটি দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে হিমকম্পন।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, হিমকম্পনের কারণে পানি দ্রুত ঠান্ডা হয়। আর তাই ভেজা মাটি হিমকম্পনের কারণে দ্রুত জমে যাচ্ছে। ২০১৬, ২০১৯ ও ২০২২ সালে উত্তর ফিনল্যান্ডে বড় মাত্রায় হিমকম্পনের ঘটনা শনাক্ত করা হয়। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ও ২০২২ সালে কানাডার অটোয়াতে ঘটা হিমকম্পনকে এরই মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

ভূপদার্থবিদ অধ্যাপক এলেনা কোজলভস্কায়া বলেন, ‘আগে মনে করা হতো রাস্তা থেকে হিমকম্পনের উৎপত্তি হয়। নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে জলাভূমি ও পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন চ্যানেলের প্রভাবে হিমকম্পন তৈরি হচ্ছে। আমরা দেখেছি ২০২২-২০২৩ সালের শীতকালে ফিনল্যান্ডের ওলুতে হিমকম্পনের প্রধান উৎস ছিল জলাভূমি ও পানিতে জমে থাকে স্থানগুলো।’

প্রবল বৃষ্টি বা তুষারগলা পানি মাটির ভেতরে জমা থাকে। হিমকম্পনের কারণে এসব পানি দ্রুত জমে প্রসারিত হয়। এতে ভূমিতে ফাটল দেখা দেয়। ফাটলের কারণে কম্পন ও শব্দ হওয়ায় হিমকম্পনের ঘটনা সহজেই অনুভব করা যায়।

হিমকম্পন নিয়ে যৌথভাবে গবেষণা করছে ফিনল্যান্ডের ওলু ইউনিভার্সিটি ও ফিনল্যান্ডের জিওলজিক্যাল সার্ভে (জিটিকে)। হিমকম্পন বিষয়ে এ গবেষণার ফলাফল শিগগিরই ইজিইউস্পেয়ার জার্নালে প্রকাশ করা হবে। গবেষকদের তথ্যমতে, হিমায়িত স্তরের পুরুত্ব ৫ সেন্টিমিটার বা তার বেশি হলে হিমায়িত মাটিতে ফাটল দেখা যায়। কম্পনের মাত্রা বেশি হলে এই ফাটল আরও গভীরে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে উঁচু ভবন, বেজমেন্ট, পাইপলাইন ও রাস্তার মতো অবকাঠামোর ক্ষতি হতে পারে।

এ বিষয়ে বিজ্ঞানী কারি মোইসিও বলেন, ‘তীব্রতা কম হলেও হিমকম্পনের প্রভাব সুদূরপ্রসারী বলা যায়। ২০১৬ সালে ওলুতে শক্তিশালী হিমকম্পনের ঘটনা ঘটে, এর ফলে সেই স্থানের বিভিন্ন রাস্তায় ফাটল দেখা দেয়। প্রথমবারের মতো সিসি ইনস্ট্রুমেন্টেশন ব্যবহার করে হিমকম্পন নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। সাধারণত তুষারের আস্তরণ মাটিকে ঠান্ডায় জমে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তুষার গলে মাটির ভেতরে প্রবেশ করে। শীতকালে তাপমাত্রা দ্রুত কমে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে হিমকম্পনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ওলুতে সিসমিক স্টেশনের কাছাকাছি অনেক জলাভূমি রয়েছে, যেগুলো হিমকম্পনের প্রধান উৎস বলে শনাক্ত করা হয়েছে।’

জানুয়ারি মাসে তুষারকম্পনের ঘটনা খুব বেশি টের পাওয়া যায়। এ সময়ে ভূপৃষ্ঠের কম্পন শত শত মিটার দূরে থেকেও অনুভব করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক এলেনা কোজলভস্কায়া। ফিনল্যান্ডের দুটি স্থানে হিমকম্পনের ঘটনা শনাক্ত করা হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এই কম্পন হচ্ছে বলে সবাইকে সতর্কও করেছেন তিনি।

সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ