জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের নানা প্রান্তের হিমবাহ ও বরফখণ্ডের পুরুত্ব কমছে। সমুদ্রে ভাসমান অনেক বরফখণ্ড ও হিমশৈল গলে যাচ্ছে। রাতের আঁধারে গায়েব হয়ে যাচ্ছে অনেক বরফটুকরো। অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলের বিভিন্ন হিমবাহকে গলে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষায় কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা আর্কটিক সমুদ্রের বরফকে ঘন মানে মোটাতাজা করার একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন। আর্কটিক বরফের স্তর গত দশকের তুলনায় দ্রুত হারে কমছে বলে উদ্বেগ বাড়ছে। গত সপ্তাহে বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার বিশাল থোয়াইটস হিমবাহ সম্পর্কে তাঁদের অনুসন্ধানের তথ্য প্রকাশ করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফের স্তর ভয়াবহ মাত্রায় সরু হয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের আকারের সমান এই হিমবাহ। এই হিমায়িত বরফখণ্ডকে ‘পৃথিবী ধ্বংসের হিমবাহ’ বলে ডাকা হয়। এই হিমবাহ হারিয়ে গেলে পৃথিবীতে বিপর্যয়কর প্রভাব দেখা যাবে। যদি হিমবাহ গলতে থাকে, তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। এতে লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা প্রভাবিত হবে। এই হিমবাহের স্তর কিছু জায়গায় দুই হাজার মিটারের বেশি পুরু। বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্রুত পরিবর্তনশীল হিমবাহগুলোর মধ্যে একটি থোয়াইটস। থোয়াইটস ও তার প্রতিবেশী হিমবাহ থেকে সমুদ্রে উন্মুক্ত বরফের পরিমাণ ১৯৯০ থেকে ২০১০ দশকে দ্বিগুণ বেড়েছে। ব্রিটিশ ও মার্কিন বিজ্ঞানীরা ২০১৮ সাল থেকে থোয়াইটস হিমবাহকে পর্যবেক্ষণ করছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণের ফলাফল ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভেতে প্রকাশিত হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সমুদ্রের বরফ রক্ষায় বিকল্প পথ খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। কানাডিয়ান আর্কটিকের বরফের ওপর সামুদ্রিক পানি দিয়ে বরফকে আরও ঘন করার সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এই অঞ্চল আমুন্ডসেন সাগর উপকূল নামে পরিচিত। বছরে যে মাত্রায় বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, তার ৮ শতাংশের জন্য এই বিস্তৃত অঞ্চলকে দায়ী বলা হচ্ছে। যদি থোয়াইটস হিমবাহ সম্পূর্ণ ধসে পড়ে, তাহলে সমুদ্রের স্তর ৬৫ সেন্টিমিটার বাড়বে বলে মনে করেন গবেষকেরা। ইন্টারন্যাশনাল থোয়াইটস গ্লেসিয়ার কোলাবরেশনের বিজ্ঞানী রব লার্টার বলেন, ‘থোয়াইটস ৮০ বছরের বেশি সময় ধরে গলছে। গত ৩০ বছরে সবচেয়ে বেশি গলছে। আমাদের অনুসন্ধান ইঙ্গিত দেয় যে বরফের সরু হওয়ার কারণে হিমবাহটি দ্রুত গলছে।’
আগামী শতাব্দীর মধ্যে থোয়াইটস হিমবাহ পুরোপুরি গলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ত্রয়োবিংশ শতকের মধ্যে থোয়াইটস গ্লেসিয়ার ও পশ্চিম আর্কটিক বরফের স্তর অনেকটাই হারিয়ে যেতে পারে। থোয়াইটস হিমবাহ ব্যতিক্রমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ, এর বরফ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক নিচে একটি বিছানায় বিশ্রাম নেয় যা পশ্চিম আর্কটিক কেন্দ্রের দিকে ঢালু হয়ে যায়। আন্ডারওয়াটার রোবটের মাধ্যমে বরফের চলাচল ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা হিমবাহের বর্তমান অবস্থা জানার চেষ্টা করছেন। প্রাথমিক পরীক্ষায় আর্কটিক সমুদ্রের বরফ ঘন করতে সমুদ্রের পানি ব্যবহার করার কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষামূলকভাবে একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষার সময় সাফল্য দেখেছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাজ্যের উদ্ভাবনী উদ্যোগ রিয়েল আইস চলতি বছরের শুরুর দিকে বরফের স্তরের ওপর সমুদ্রের পানি পাম্প করে পর্যবেক্ষণ করেন। দেখা যায়, তখন বরফের স্তর কিছুটা মোটা হয়েছে। এই স্টার্টআপ বরফের মধ্য দিয়ে নিচের সমুদ্রে ড্রিলিং করে ওপরের বরফে পানি ছড়িয়ে দেয়। পানি হিমবাহের তুষারের মধ্যে বায়ুশূন্য স্থান পূরণ করে ধীরে ধীরে বরফে পরিণত হয়। রিয়েল আইসের প্রধান আন্দ্রেয়া সেকোলিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো, আর্কটিক সমুদ্রের বরফ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে কাজ করা। বরফ কীভাবে ঘন করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছি আমরা। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট রিপেয়ারের সহায়তায় ২৫ সেন্টিমিটার প্রাকৃতিক বরফ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
সূত্র: ইউরো নিউজ