বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক রোয়াল্ড ডালের ‘দ্য আমব্রেলা ম্যান’ গল্পটি অনেকেই পড়েছেন। ১২ বছরের এক কিশোরী আর একটি ছাতার রোমাঞ্চকর গল্প ছিল সেটি। ছাতার ব্যবহার অনেক রকমের। সেই ছাতার ব্যবহারকে এবার কল্পনার সীমানার বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এত দিন যে ছাতা রোদ–বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাত, এবার সেই ছাতা ব্যবহার করা হবে পৃথিবীকে বাঁচাতে।
বিশ্বের উত্তর গোলার্ধের নানা দেশ আর শহরে কেমন জানি নজিরবিহীন মাত্রায় দাবদাহ চলছে। গরমে মানুষের অবস্থা বেশ খারাপই বলা যায়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন দেশের মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত। সে কারণে প্রায়ই দাবদাহ দেখা যাচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে মানুষের শরীরের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়। এতে পানিশূন্যতা, হিট স্ট্রোক, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গত গ্রীষ্মে ইউরোপে গরমের কারণে ৬১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালে গরমের মাত্রা আরও বেড়েছে। এখন এই তাপমাত্রার হাত থেকে বাঁচতে একদল গবেষক নতুন এক পথের সন্ধান করেছেন।
বিজ্ঞানীরা বিশাল এক ছাতাকে যুদ্ধক্ষেত্রের বর্মের মতো ব্যবহার করে পৃথিবীকে বাঁচানোর পরিকল্পনা করেছেন। এই ছাতা পৃথিবীকে সূর্যের অতিরিক্ত তাপ থেকে রক্ষ করবে বলে মনে করছেন তাঁরা। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ ইস্তভান জাপুদি এমনই এক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। সৌরবর্মের মাধ্যমে প্রথমে ধূমকেতু ধরার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। পরে পৃথিবীর তাপমাত্রার কথা বিবেচনা করে সেই বর্মকে ছাতায় পরিবর্তন করে নতুন করে ব্যবহারের কথা বলেছেন তাঁরা। এই ছাতা এখন শুধু ধূমকেতুর হাত থেকেই রক্ষা করবে না, তাপমাত্রার হাত থেকেও বাঁচাবে পৃথিবীকে। তাত্ত্বিকভাবে এখনো কাগজে–কলমে লেখালেখির মধ্যে আটকে আছে এই ধারণা। এই বর্ম তৈরি করার পেছনে অনেক চ্যালেঞ্জ দেখছেন গবেষকেরা। বর্মের ভরের কারণে পৃথিবীর সঙ্গে কীভাবে সমন্বয় করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আবার সৌর রশ্মিকে প্রতিরোধ করতে কোন ধরনের বস্তু ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে আরও গবেষণা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের এক গবেষণা জার্নালে এ বিষয়ে তথ্যাদি প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ‘পৃথিবীর দিকে অনেক ধূমকেতু ছুটে আসে। সেগুলো ব্যবহার করেই এই ছাতা বা বর্ম তৈরি করার সুযোগ আছে। হাওয়াইতে ছাতা দিয়ে সূর্যের আলো প্রতিরোধ করেন ব্যবহারকারীরা। তা দেখেই আমার মনে হয়েছে, আমরা পৃথিবীকে রক্ষায় একই কাজ করতে পারি কি না? এভাবে ছাতা ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমানোর সুযোগ বের করার চেষ্টা করছি আমরা।’ গবেষকদের তথ্য বলছে, ছাতা ব্যবহার করলে সৌর বিকিরণ পৃথিবীর ওপর যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, তা কমবে। সেই কমার হার প্রায় ১.৭ শতাংশ। বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমাতে এই ছাতা বেশ ভালোভাবে ব্যবহারের সুযোগ আছে।
এর আগে যে ছাতা বা বর্ম নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছিল, সেখানে বর্মের ভর নিয়ে সমস্যা ছিল। পৃথিবীর বাইরে অনেক ভরের ছাতা স্থাপন করার প্রকৌশলগত অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। ভাবুন তো ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন ওজনের ছাতা আপনার মাথার ওপর। এবারের গবেষণাপত্র অনুসারে জানা যাচ্ছে, ধূমকেতুর পুনর্ব্যবহারে সেই ছাতার ভর কমবে প্রায় ১০০ ভাগ। এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই। এখনকার সবচেয়ে বড় রকেটে টেনেটুনে ৫০ টন ওজন পরিবহন করা যায়। ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন কোন ট্রাকে পরিবহন করা হবে, সে প্রশ্নের উত্তর নেই। সেই সমস্যা থেকে ধূমকেতুকে ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে। এখন যে বর্ম পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে, তার ওজন ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার টন। এই বর্ম তৈরি করা সহজ আর নতুন কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কারের দরকার নেই বলে জানিয়েছেন গবেষক জ্যোতির্বিদ ইস্তভান জাপুদি।
সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট