পার্সিভিয়ারেন্স রোভারের তোলা মঙ্গল গ্রহের ছবি
পার্সিভিয়ারেন্স রোভারের তোলা মঙ্গল গ্রহের ছবি

মঙ্গল গ্রহে পার্সির হাজারতম দিন

প্রথমেই একটি কল্পিত নোটবুকের কয়েকটি লাইনে চোখ বোলানো যাক। ‘৯৯৯তম দিন: আজ মঙ্গলের বুকে আমার দারুণ একটা সময় কাটল। সূর্য উঠলে পৃথিবীকে জানাতে হবে, ১০০০তম দিন নিয়ে আমি কতটা উৎসাহিত। ১০০০তম দিন: দারুণ। লাল গ্রহে আজ আমার ১০০০তম মঙ্গল দিবস।’ যার কল্পিত নোটবুক পড়ছিলেন তার নাম ‘পার্সিভিয়ারেন্স রোভার’। পৃথিবীর প্রতিনিধি হিসেবে মঙ্গল গ্রহে ১০০০তম দিন গবেষণায় পার করছে রোভারটি। আদর করে রোভারটিকে পার্সি নামে ডাকা হয়। ছয় চাকার রোভার পার্সি মঙ্গল গ্রহের ২৩টি নমুনা সংগ্রহ করেছে। এসব নমুনা থেকে মঙ্গল গ্রহের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস সম্পর্কে জানা যাবে।

পার্সির সংগ্রহ করা নমুনার তথ্যাদি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নে সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ক্যালটেকের বিজ্ঞানী কেন ফার্লি বলেন, ‘আমরা মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটারকে অবতরণ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। অরবিটাল ইমেজ থেকে জায়গাটি একটি বদ্বীপ বা ডেলটার মতো দেখায়। আমরা স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি, এখানে একটি বড় হ্রদ ছিল। সময়ের পরিক্রমায় স্থানটি ভরাট হয়ে গেছে। হ্রদটি মঙ্গলের সম্ভাব্য বাসযোগ্য পরিবেশ ও বদ্বীপের বিভিন্ন শিলা ও জীবাশ্ম হিসেবে প্রাচীন জীবনের নিদর্শন বলা যায়। পার্সির সাহায্যে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধানের পর হ্রদ ও নদীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসকে একত্র করেছি। আমরা বিভিন্ন ছবি থেকে জেজেরোর ইতিহাস জানার চেষ্টা করছি। প্রায় ৪০০ বছর আগে একটি গ্রহাণুর আঘাতে জেজেরো খাদটি তৈরি হয়েছিল। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্সি লাল গ্রহ মঙ্গলে অবতরণ করে। দীর্ঘদিনের সংগ্রহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, খাদটির তল আগ্নেয় শিলা দিয়ে তৈরি।’

মঙ্গল গ্রহে বেলেপাথর ও কাদাপাথরও খুঁজে পেয়েছে পার্সি। সেই নমুনা কয়েক লাখ বছর আগের কোনো নদীর চলাচলের পথের সংকেত দেয়। এই শিলার ওপরে লবণসমৃদ্ধ কাদাপাথর রয়েছে, যা অতীতের কোনো একটি অগভীর হ্রদে বাষ্পীভবনের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। হ্রদটি ২২ মাইল লম্বা ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন নমুনা চকের টুকরার মতো বিশেষ ধাতব টিউবে সংরক্ষণ করছে পার্সি। সেই টিউব পৃথিবীতে আনার পর বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহ নিয়ে আরও কার্যকর গবেষণা করতে পারবেন।

কোন নমুনা সংগ্রহ করতে হবে, তা নির্ধারণ করতে পার্সি বিশেষ একটি কৌশল ব্যবহার করে। কোনো শিলার সামনে পড়লে ঘর্ষণ–টুল ব্যবহার করে রোভারটি। তারপর এক্স-রে লিথোকেমিস্ট্রির জন্য জেপিএলের প্ল্যানেটারি ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহারে শিলার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে রোভারটি। বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গল গ্রহে জলীয় পরিবেশ ছিল। সেখানে থাকা বিভিন্ন শিলায় প্রচুর পরিমাণ সিলিকাও রয়েছে। পৃথিবীতে এমন সূক্ষ্ম দানাদার সিলিকা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে নাসার বিজ্ঞানী মরগান ক্যাবল বলেন, ‘সেখানে হয়তো পৃথিবীর মতোই পরিবেশ ছিল। প্রাচীন জীবনের অবশিষ্টাংশ শিলায় সংরক্ষিত থাকতে পারে।’

মঙ্গলের এক দিনকে বিজ্ঞানীরা এক ‘সল’ বলেন। লাতিন সূর্যের নাম থেকে সলের নামকরণ করা হয়েছে। মঙ্গলের এক দিন আর পৃথিবীর এক দিন সমান নয়। এক সল বা মঙ্গলের এক দিন পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা, ৩৯ মিনিট, ৩৫ সেকেন্ডের সমান। যে কারণে মঙ্গলের এক বছর পৃথিবীর ৬৮৭ দিনের সমান। ১৯৭৬ সাল থেকে মঙ্গলের দিন গণনার একক হিসেবে সলকে নির্ধারণ করা হয়।

উল্লেখ্য, নাসার মঙ্গল ২০২০ মিশনের অংশ হিসেবে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো হয়েছে রোভারটি। জেট প্রপালশনের তৈরি রোভারটি ২০২০ সালের ৩০ জুলাই যাত্রা শুরু করে ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলে অবতরণ করে। আজ বুধবার মঙ্গল গ্রহে অবতরণের ১০০০তম মঙ্গল দিন পার করছে পার্সি, যা পৃথিবীর হিসেবে ১০২৮তম দিন।

সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ