নতুন গবেষণার তথ্য

বুদ্ধিমান পাখিরা বেশি ডাকাডাকি করে

টাফট টিটমাউজ পাখি, ৬৩ ধরণের ডাক ডাকতে পারে
সংগৃহীত

‘অশ্রু দিয়ে লেখা’ বাংলা সিনেমায় সাবিনা ইয়াসমিন গেয়েছিলেন, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা আর তো প্রাণে সয় না।/যখন তখন করে জ্বালাতন, ভালো লাগে না।’ পাখির ডাকে বিরক্ত হয়ে এমনটা গেয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমিন। সেই ডাকাডাকি নিয়ে গবেষণা করছেন গবেষকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, যে পাখির ডাক যত জটিল, সেই পাখি তত ভালো সমস্যার সমাধান করতে পারে।

প্রায় ২০০ পাখির ওপরে পরীক্ষা চালিয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন গবেষকেরা। এই তালিকায় সবার শীর্ষে আছে টাফট টিটমাউজ নামের পাখি, যা ৬৩ ধরনের শব্দে ডাকডাকি করতে পারে। এই পাখি দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া যায়, অনেকটা আমাদের দেশের চড়ুই পাখির মতো দেখতে। ডাকের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক আছে বলে প্রকাশিত তথ্যে জানা যাচ্ছে।

ইংরেজি ভাষাভাষীর দুনিয়ায় বোকা বা সরল ব্যক্তিদের ‘বার্ড ব্রেইন’ আছে বলে কটাক্ষ করা হয়। পাখির মাথার আকার ছোট বলে সেখানে মস্তিষ্ক ছোট, সেই পরিপ্রেক্ষিতে বার্ড ব্রেইন বলা হয় বোকাদের।

পাখিদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নতুন এক গবেষণা প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী জ্যাঁ-নিকোলাস অডেট ও তাঁর দল পাখির নতুন শব্দ শেখা ও কগনিটিভ বা জ্ঞানীয় দক্ষতা নিয়ে গবেষণা করেন। পাখিরা শুধু কলকাকলি করে না, নতুন শব্দ শিখতে পারে। নতুন যোগাযোগের উপায়ও অনেক পাখি বের করতে পারে।

সাদা বুকের নাটহ্যাচ সমস্যা সমাধানে অন্যতম সেরা পাখি

আমরা শহরে যেসব পাখি বেশি দেখি, সেসবের মধ্যে কাক ও টিয়াকে বেশি বুদ্ধিমান মনে করা হয়। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, শুধু ভালো ডাকলে বুদ্ধিমান পাখি হওয়া যায় না। নতুন গবেষণা অনুসারে বলা হচ্ছে, বুদ্ধিমান হলেই ভালো ডাকাডাকি করতে পারে পাখিরা। এই গবেষণায় ২৩ প্রজাতির প্রায় ২১৪টি পাখিকে গভীর পর্যবেক্ষণ করে তাদের সমস্যা সমাধানের কৌশল বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

পাখির গান নিয়ে গবেষণা করেন মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী উইলিয়াম সিয়ার্সি। তিনি জানান, নতুন এই গবেষণার ফল খুবই ইতিবাচক। যে পাখির ডাকে যত বেশি ভিন্নতা, তার সমস্যা সমাধানের কৌশলে অভিনত্ব দেখা যাচ্ছে। এই আচরণের জন্য কোন ধরনের জিনগত বৈশিষ্ট্য দায়ী, তা নিয়ে গবেষণার সুযোগ আছে।

গবেষণাগারে পাখিদের তৃষ্ণার সময় কাচের ফ্লাস্কের মুখ খোলার পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। যেসব পাখি ভালো শব্দ শিখতে পারে কিংবা ডাকাডাকিতে ওস্তাদ, তারা দ্রুতগতিতে বোতলের মুখ খুলতে পারে। গবেষক দল একেক ধরনের পাখির জন্য একেক পরীক্ষা করেন। গড়পড়তাভাবে একেকটি পাখির সাতটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ছয় দিনের মধ্যে অংশ নিতে হয়। সাতটি পরীক্ষার চারটি সমস্যা সমাধান–সংক্রান্ত; আর তিনটি পরীক্ষা শিক্ষাবিষয়ক।

পরীক্ষার ফল থেকে দেখা যায়, যেসব পাখি মিমিক্রি বা অনুকরণ করতে পারদর্শী, দ্রুত পরিবেশ বুঝে শিখতে পারে, তাদের কণ্ঠের দক্ষতা অনেক জটিল ও উন্নত হয়। যে পাখির কণ্ঠ যত বেশি দক্ষ, সে পাখি তত সমস্যা সমাধানে দক্ষ। টাফটড টিটমাউজ পাখির সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বেশি, যেখানে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্রাউন হেডেড কাউবার্ডের দক্ষতা কম। এই পাখি সারা জীবনে মাত্র ৯ ধরনের ডাক শিখতে পারে। ব্রাউন হেডেড কাউবার্ডের আকার দেখতে কিছুটা আমাদের দেশের কাকের মতো।

সূত্র: সায়েন্স নিউজ