দূর থেকে স্পর্শের অনুভূতি পাওয়া নিয়ে চলছে গবেষণা
দূর থেকে স্পর্শের অনুভূতি পাওয়া নিয়ে চলছে গবেষণা

দূর থেকে স্পর্শ করতে সহায়তা করবে নতুন যন্ত্র

বলুন তো, দূরত্ব যতই হোক না কেন প্রেম কি আটকানো যায়? দূরত্ব কমাতে একসময় চিঠির প্রচলন ছিল। এরপর টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন আর হাল জমানায় এসেছে মুঠোফোন, ইন্টারনেট, কত–কী! এসেছে ভিডিও কল। তাতেও যেন মানুষের মন ভরে না। শিগগিরই হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা প্রিয়জনের হাত ধরে রাখতে পারবেন, এমনই এক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই যন্ত্রের মাধ্যমে প্রিয়জনের হাত ধরার অনুভূতি পাওয়া যাবে দূর থেকেই। বিজ্ঞানীরা আঙুলের স্পর্শের অনুভূতি দেয়, এমন এক যন্ত্রের নকশা করেছেন। এই যন্ত্র স্পর্শের বাস্তব অনুভূতি দিতে পারবে হাজার মাইল দূর থেকে।

মানবদেহের অন্যতম জটিল অনুভূতি স্পর্শকে প্রযুক্তির গণ্ডিতে অনেক দিন ধরেই আনার চেষ্টা চলছে। সেই গবেষণার অংশ হিসেবে নতুন এক যন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। ‘বায়োইনস্পায়ার্ড হ্যাপটিক’ নামের কৌশলে গতি ও শক্তির কম্পন ব্যবহার করে মানুষের আঙুলের চারটি স্পর্শ রিসেপ্টর বা সংবেদনশীল প্রোটিনের অনুকরণে কাজ করবে এটি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি গ্লাভস বা যান্ত্রিক হাতমোজা তৈরি করতে চান বিজ্ঞানীরা। এটি দূরবর্তী সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ও হাত ধরার মতো অনুভূতি তৈরি করতে সক্ষম হবে। বাস্তব জীবনের সংবেদনশীলতার মতো প্রাকৃতিক স্পর্শকে অনুকরণ করতে পারে এই যন্ত্র। যন্ত্রটি স্নায়ু কোষকে উদ্দীপিত করার মধ্য দিয়ে কাজ করে।

প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকা কোনো একজনের হাত ধরার অনুভূতি পেতে সক্ষম হবেন। বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, এই যন্ত্র হাতের স্পর্শহীন সমস্যা মেটাকারপাল টানেল সিনড্রোম বা ডায়াবেটিস জটিলতায় একটি ডায়াগনস্টিক টুল হিসেবে কাজ করতে পারে। দূরবর্তী স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এই যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। সার্জনরা সুস্থ ও ক্যানসারযুক্ত টিস্যুর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে যন্ত্রটি ব্যবহার করতে পারেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য সংবেদন হারিয়ে ফেলা এমন ১০ জনের ওপর পরীক্ষা করার কথা রয়েছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী সারা আবাদ বলেন, ‘স্পর্শের অনুভূতি আমাদের সব ইন্দ্রিয়ের মধ্যে সবচেয়ে কম পরিচিত। জটিলতার কারণে জানার সুযোগ কম। বায়োইনস্পায়ার্ড হ্যাপটিক সিস্টেম স্নায়ু কোষকে উদ্দীপিত করার মধ্য দিয়ে কাজ করে, যা কম্পন ব্যবহার করে স্পর্শের সাড়া দেয়। ত্বক আমাদের দেহে থাকা সবচেয়ে বড় অঙ্গের মধ্যে একটি। বিভিন্ন ধরনের তথ্য সরবরাহ করে। ত্বকের মাধ্যমে আমরা কী ধরনের উদ্দীপনা পাচ্ছি, তা টের পাই। এই যন্ত্রের মাধ্যমে আপনার পরিবারের সদস্যরা যাঁরা অন্য শহরে আছেন, তাঁদের স্পর্শ করতে পারবেন।’

বায়োইনস্পায়ার্ড হ্যাপটিক

ভিডিও কলের মাধ্যমে অন্যদের দেখা ও শোনা যায়। সামাজিক বন্ধনের জন্য স্পর্শও প্রয়োজন। ভিডিও কলে তা পাওয়া যায় না। নতুন প্রযুক্তি আমাদের ভার্চ্যুয়াল উপায়ে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্পর্শকে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ করে দিচ্ছে। যেসব রোগীর স্পর্শসংক্রান্ত জটিলতা আছে, তাদের জন্য ডায়াগনস্টিক টুল হিসেবে এটি কাজ করতে পারে। ইস্ট লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিটিশ বিজ্ঞান উৎসবে এই প্রযুক্তি দেখানো হয়েছে। বিজ্ঞানী হেলগে ওয়ারডেম্যান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই প্রযুক্তি দিয়ে গ্লাভসের নকশা করা যাবে।’

সূত্র: ডেইলি মেইল