ইরেন্ডেল তারা
ইরেন্ডেল তারা

সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বল তারা আছে নাকি?

‘দেখা না দিলে বন্ধু কথা কইয়ো না...।’ না দেখা কোনো কিছু দেখার জন্য আকুতিটা চিরন্তন। না দেখা দুনিয়ায় অবস্থিত সবচেয়ে দূরের তারা হিসেবে আলোচিত ইরেন্ডেল। সেই তারা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া শুরু হয়েছে। হয়তো একদিন দেখাও হবে এই তারার সঙ্গে। ইরেন্ডেল নাকি সূর্যের দ্বিগুণ গরম আর কয়েক লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল—জানাচ্ছেন গবেষকেরা। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের নিয়ার–ইনফ্রারেড ক্যামেরার তথ্য বিশ্লেষণ করেই এমনটা জানিয়েছেন তাঁরা। উজ্জ্বলতা পরীক্ষা করে গবেষকেরা ইরেন্ডেলকে বৃহদাকৃতির ‘বি টাইপ স্টার’ বলে অভিহিত করেছেন।

সেটাস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থান করছে এই ইরেন্ডেল। এতই দূরে যে এই তারার আলো পৃথিবীতে আসতে ১ হাজার ২৯০ কোটি বছর লেগে গেছে। যে আলো দেখার সুযোগ মিলেছিল যখন, তখন মহাবিশ্বের বয়স এখনকার চেয়ে ৯৩ শতাংশ কম ছিল।

২০২২ সালে প্রথম হাবল টেলিস্কোপে এই তারার খোঁজ মেলে। মধ্যযুগীয় ইংরেজিতে ‘ইরেন্ডেল’ শব্দের অর্থ ‘সকালের তারা’ বা ‘প্রজ্জ্বলিত আলো’। ইরেন্ডেল যে ছায়াপথ বা গ্যালাক্সিতে অবস্থিত, তার নাম রাখা হয়েছে ডব্লিউএইচএল ০১৩৭–জেডডি১। দিগন্তে সূর্যোদয় নামে ডাকা হয় এই ছায়াপথকে। মহাকর্ষীয় লেন্সিং নামের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য এখানে আলো দেখতে অর্ধচন্দ্রকার। মহাকর্ষীয় লেন্স বা গ্র্যাভিটেশনাল লেন্স এমন একটি ঘটনা, যেখানে দূরবর্তী কোনো আলোক উৎসের সামনে কোনো বস্তুর অবস্থানের কারণে আলো বেঁকে যায়। সাধারণ সময়ে হয়তো পেছনে আলোক উৎস আমাদের পৃথিবী বা টেলিস্কোপে দেখার সুযোগ মেলে না। লেন্সিংয়ের ঘটনা বিরল হয়ে থাকে, সেই সুযোগে খোঁজ মেলে নানা তারার। পৃথিবী থেকে এ যাবৎ যত তারার সন্ধান মিলেছে, সেগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত ইরেন্ডেল সবচেয়ে দূরবর্তী। এর আগে এই স্বীকৃতি ছিল ইকারুস নামের তারার।

ইরেন্ডেলের আলোর রং পরীক্ষা করে আরও একটি ঠান্ডা ও লালরঙা সংযুক্ত তারার খোঁজ পেয়েছেন গবেষকেরা। ইরেন্ডেলের আশপাশের বেশ কয়েকটি পুরোনো তারার খোঁজ পেয়েছেন তাঁরা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ‘এই অনুসন্ধানে আমরা বুঝতে পারব যে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগে আমাদের ছায়াপথের পরিস্থিতি কেমন ছিল।’ ইরেন্ডেল বিগ ব্যাংয়ের ৯০ কোটি বছর পর গঠিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন এসব তথ্য গবেষক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মহাবিশ্বের প্রাথমিক সময়সম্পর্কিত গবেষণায় সাহায্য করবে। নতুন এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মহাবিশ্ব গঠনের শুরুর দিককার ছায়াপথের গঠন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জ্যোতির্বিদেরা জানিয়েছেন, যখন আমরা ইরেন্ডেলকে দেখতে পাচ্ছি, তখন মহাবিশ্বের বয়স ছিল ১০০ কোটি বছরের কম। তখন এটি আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ে থেকে ৪০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছিল।

ইরেন্ডেল থেকে পৃথিবীর কাছে আলো পৌঁছাতে যে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর লেগেছে, সেই সময়ের মধ্যে মহাবিশ্ব অনেক প্রসারিত হয়ে যায়। এখন নক্ষত্রটির অবস্থান আমাদের থেকে ২ হাজার ৮০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। পর্যবেক্ষণ করে গবেষকেরা জানান, এই তারা ৫০ থেকে ১০০ সৌরভরের মধ্যে থাকতে পারে। এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমপক্ষে ২০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ধারণা করা হচ্ছে যে এখানে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম ছাড়া আর কোনো কিছুর উপস্থিতি নেই।

সূত্র: সাই নিউজ