১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর মহাকাশ যুগের শুরু হয়। এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুতনিক স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণ করে। মহাকাশ যুগের দরজা খোলার এক মাসের কম সময়ের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুতনিক ২ উৎক্ষেপণ করে। এই উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রথম কোনো প্রাণী কক্ষপথে যাওয়ার সুযোগ পায়। স্পুতনিক ২ রকেটে করে একটি প্রাণী মহাকাশে নিয়ে যাওয়া হয়। লাইকা নামের কুকুরকে পাঠানো হয় কক্ষপথে।
লাইকা পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করা প্রথম প্রাণী। লাইকার মহাকাশ গমনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র জোরেশোরে মহাকাশ কর্মসূচি গঠন করে। ফিউচার ম্যানড স্পেসক্র্যাফট সেন্টারের পরিচালক রবার্ট গিলরুথের ভাষ্য থেকে জানা যায়, ‘যখন আমি কুকুরটিকে ওপরে উঠতে দেখলাম, তখন আমি বলেছিলাম, ও ঈশ্বর, আমরা আরও ভালোভাবে যেতে পারব। মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর কর্মসূচি নেওয়া হবে।’
স্পুতনিক ২ কৃত্রিম উপগ্রহের ওজন ছিল ৫০৮ কেজি। পূর্বসূরি স্পুতনিক ১ থেকে বেশি ওজনের ছিল। সম্ভবত কক্ষপথে পৌঁছানোর পর লাইকা মাত্র কয়েক ঘণ্টা বেঁচে ছিল। ১০ নভেম্বর স্যাটেলাইটের ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে ডেটাপ্রাপ্তির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৫৮ সালের ১৪ এপ্রিল স্পুতনিক ২ পুনঃপ্রবেশের সময় পুড়ে যায়। নির্মাণের সময় পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে লাইকাকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো ব্যবস্থা ছিল না উপগ্রহে। নির্মাণ প্রকৌশলীরা দীর্ঘ সময়ের মিশনের জন্য পরিবেশগত কোনো ব্যবস্থা সেখানে রাখেননি।
উৎক্ষেপণের আগে লাইকাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। লাইকাসহ অন্য দুটি কুকুর আলবিনা ও মুশকাকে কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমবর্ধমান ছোট খাঁচায় রাখা হয়। চাপের মধ্যে শান্ত মেজাজের জন্য লাইকাকে বেছে নেওয়া হয়। সোভিয়েত মহাকাশ মিশনের কর্মকর্তা ভ্লাদিমির ইয়াজদভস্কি লাইকাকে শান্ত বলে বর্ণনা করেছেন। লাইকার মহাকাশযান স্পুতনিক ২ উপগ্রহে তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবনী ডিভাইস লাগানো হয়। সেখানে একটি অক্সিজেন জেনারেটর ছিল, যা কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করে। সেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি তাপ-সক্রিয় পাখা রাখা হয়। কুকুরটি যেন সাত দিন বাঁচে, তার জন্য ক্যাপসুলে পর্যাপ্ত খাবার মজুত করা হয়।
মহাকাশে লাইকার মৃত্যুর পরস্পরবিরোধী বিবরণ পাওয়া যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রাথমিকভাবে জানায়, অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে লাইকা মারা যায়। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে বিষযুক্ত খাবার দিয়ে ঘুম পাড়ানোর কথা শোনা যায়। ১৯৯৯ সালে জানা যায়, স্পুতনিক ২ উপগ্রহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা দেখা গেলে লাইকা পৃথিবীর কক্ষপথ চতুর্থবার ভ্রমণের সময় মারা যায়।
সূত্র: নাসা ও রয়্যাল মিউজিয়াম গ্রিনউইচ