কয়েক শ বছর আগে ঈশ্বরী পাটনী লিখেছিলেন, আমার সন্তান যেন থাকে দুধে–ভাতে। কয়েক কোটি বছর আগে কোনো ডাইনোসর তার সন্তানদের জন্য হয়তো বলেছিল, আমার সন্তান যেন থাকে মাংস–ভাতে। ভাত না খেলেও খুব সাধারণভাবে মনে করা হয় ডাইনোসরদের অনেকেই ছিল মাংসভোজী। মাংসভোজী ডাইনোসরের পাশাপাশি গেল কয়েক দশকে অনেক তৃণভোজী ডাইনোসরের খোঁজ মিলেছে। এমনই এক হাইপসিলোফহোডোনটিড ডাইনোসরের জীবাশ্মের খোঁজ মিলেছে যুক্তরাজ্যের আইল অব ওয়াইটে। এর আগে এই প্রজাতির কোনো ডাইনোসরের ফসিলের খোঁজ মেলেনি বলে নতুন গণ ও প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে। এক শৌখিন জীবাশ্ম সংগ্রাহক এই ডাইনোসরের খোঁজ পান। ডাইনোসর নিয়ে ‘ক্রেটাসিয়াস রিসার্চ’ নামের জার্নালে এক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন প্রজাতির নাম রাখা হয়েছে ‘ভেক্টিড্রমিয়াস ইনসুলারিস’। ভেক্টিড্রমিয়াস শব্দটি নেওয়া হয়েছে রোমান ভিক্টিস শব্দ থেকে। রোমান আমলে আইল অব উইটকে ভিক্টিস নামে ডাকা হতো। আর গ্রিক শব্দ ড্রোমেইয়াস অর্থ হচ্ছে দৌড়বিদ। এই ডাইনোসরগুলো প্রায় সাড়ে ১২ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে পদচারণ করত। সেই সময়কে বিজ্ঞানীরা আর্লি ক্রেটাসিয়াস ইপোক নামে নামকরণ করেছেন।
ফসিল থেকে জানা যাচ্ছে, এই ডাইনোসর মুরগির চেয়ে আকারে একটু বড় ছিল। চটপটে প্রকৃতির সেই ডাইনোসরগুলো ছিল তৃণভোজী। এরা এমন এক সময় পৃথিবীতে ছিল যখন টাইরানোসরাস, স্পিনোসরাস ও লাগুয়ানোডনেরা পৃথিবীতে বসবাস করত। ইউনিভার্সিটি অব বাথের জীবাশ্মবিদ নিকোলাস লংরিচ বলেন, ভেক্টিড্রমিয়াস ইনসুলারিস প্রজাতির ডাইনোসরগুলো হাইপসিলোফহোডোন ফক্সি ডায়নোসরের কাছের আত্মীয়। ব্রিটিশ ইতিহাসে ভিক্টোরিয়ান যুগের ফক্সিদের নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল। ফক্সিরা প্রথম ডাইনোসর যাদের ফসিল পূর্ণাঙ্গভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
ডাইনোসর আইল জাদুঘরের জীবাশ্মবিদ মার্টিন মুন্ট বলেন, নতুন এই সন্ধান বেশ অনুপ্রেরণার বটে। এ অঞ্চলে আগেও অনেক ডাইনোসরের খোঁজ পাওয়া গেছে, যা নতুন তথ্য দিচ্ছে আমাদের। নতুন প্রজাতির ডাইনোসর থেকে মনে হচ্ছে ইউরোপ অঞ্চলে সেই আমলে আর কোনো তৃণভোজী ডাইনোসর বাস করত না। এ ধরনের ডাইনোসর উত্তর আমেরিকা, এশিয়া ও দক্ষিণ গোলার্ধের ডাইনোসরগুলোর চেয়ে বেশ আলাদা। প্যানজিয়া মহাদেশ ভেঙে যাওয়ার পরে একেক মহাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসরের বিকাশ ঘটে। আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি কীভাবে ডাইনোসরগুলো সেই সময় চলাফেরা করত। আর্লি ক্রেটাসিয়াস সময়ের মধ্যে অনেক নতুন ধরনের ডাইনোসর আবির্ভূত হয়। সে সময় পৃথিবী দখল করে রেখেছিল সেরাটোপসিয়ান, স্পিনোসরিডস, কার্চরোডন্টোসোরিডস এবং কোয়েলুরোসররা। সেই সময় প্রথম ফুলের উদ্ভিদ অ্যাঞ্জিওস্পার্মস দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এ সময়ে আধুনিক পাখি হিসেবে নিওরনিথিসের প্রথম দেখা যায়। কিশোর এক ভেক্টিড্রমিয়াস ইনসুলারিস ডাইনোসরের আংশিক ফসিল থেকে তথ্যাদি বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী থমাস হেনরি হাক্সলি ফক্সিদের নিয়ে গবেষণা করেন। তিনিই প্রথম পরীক্ষা করে পাখিদের পূর্বপুরুষ এই ডাইনোসরদের দাবি করেন। নতুন যে ডাইনোসর পাওয়া গেল তা ফক্সিদের চেয়েও বেশি পুরোনো ডাইনোসর। এই ডাইনোসরের পশ্চাৎ হাড়ের গঠন বেশ আলাদা।
সূত্র: সাই নিউজ