পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মারাত্মক তাপপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এমনিতেই আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে কোনো সংকট এলে প্রথমেই জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর দোষ চাপান সবাই। সেখানে আফ্রিকার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো মানুষের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিজ্ঞানীরা।
গত মাসে আফ্রিকার মালিতে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠেছিল। চরম আবহাওয়ার কারণে একটি হাসপাতালে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মাত্রা সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকায় বেড়েছে। এ কারণে আফ্রিকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিচালিত খরাবিষয়ক একটি গবেষণায় এল নিনোকে প্রকৃতির অদ্ভুত আচরণের জন্য দায়ী করা হয়। আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল ও পশ্চিম আফ্রিকাজুড়ে বেশ কয়েকটি দেশ অস্বাভাবিক শক্তিশালী তাপপ্রবাহ আঘাত করে। গত মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত এই তাপপ্রবাহ স্থায়ী হয়। মালি ও বুরকিনা ফাসোর দক্ষিণাঞ্চলে তাপ সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়। মালির রাজধানী বামাকোতে গ্যাব্রিয়েল ট্যুর হাসপাতালের ভাষ্যে, এপ্রিলের প্রথম দিনে ১০২ জন মারা যান।
মারা যাওয়া প্রায় অর্ধেক ব্যক্তির বয়স ৬০ বছরের বেশি। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাঁচ দিনের তাপপ্রবাহ দেখা যায় বলে মনে করেন গবেষকেরা। ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন গ্রুপের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবীতে দীর্ঘমেয়াদি কয়লা, তেল ও গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। সেই সঙ্গে বন উজাড়ের মতো অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের প্রভাবে দিন ও রাতে তাপমাত্রা বাড়ছে।
সমীক্ষা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মালি ও বুরকিনা ফাসোতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ এখন। রাতে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ডিগ্রি বেশি গরম দেখা যাচ্ছে। পুরো অঞ্চলে পাঁচ দিনের তাপমাত্রা ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পাঁচ দিনকে রীতিমতো নরকের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। বুরকিনা ফাসোর রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টারের জলবায়ু বিজ্ঞানী কিসভেনসিদা গুইগমা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ ১ দশমিক ৪ বা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অনেকেই বুঝবেন না।
সেনেগালে অনেক বছর ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত তাপ অনেক মানুষের জীবন ও মৃত্যুর কারণ। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি বাড়লে এমন তাপপ্রবাহ প্রতি ২০ বছরে একবার করে দেখা যাবে। এই বছরের শুরুর থেকেই আফ্রিকার দেশগুলোতে বড় আকারের খরা দেখা যায়। কম বৃষ্টিপাতের ফলে বেশ কয়েকটি দেশে ফসল নষ্ট হয়েছে। আনুমানিক দুই কোটি মানুষ অনাহারে থাকছেন। জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়েতে পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মালাউইতে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা খরার কারণ বের করার চেষ্টা করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চলজুড়ে ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারিতে কম বৃষ্টিপাত দেখা যায়। এল নিনোর কারণে খরা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি