আপনার ফোনের পর্দায় যে কাচ রয়েছে, তা ভাঙতে কতবার হাতুড়ির দিয়ে আঘাত করতে হবে? শিশুতোষ এ প্রশ্নে অবাক হবেন অনেকেই। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন মাউরোকে এমন প্রশ্ন করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। একটু ঘুরিয়ে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আর কয়েক বছর পর শরীরের পুরো শক্তি দিয়ে যতবার আঘাতই করুন না কেন, আমার ফোনের কাচ ভাঙতে পারবেন না।’ নিজের উদ্ভাবিত ইকো-গ্লাসের শক্তিমত্তা নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেছেন এই বিজ্ঞানী। তিনি আরও বলেন, নতুন উদ্ভাবিত এই কাচ ভাঙতে চাইলে প্রথমে হিরে বা টাংস্টেন কার্বাইডে তৈরি স্টাইলাস বা কলম দিয়ে কাচের ওপর আঁচড় দিতে হবে। তারপরে হাতুড়ি দিয়ে অনেকবার আঘাত করলে কাচটি ভাঙলেও ভাঙতে পারে।’
সংগীতশিল্পী তপন চৌধুরী ও শাকিলা জাফর ‘ঢাকা ৮৬’ চলচ্চিত্রে গেয়েছিলেন, ‘পাথরের পৃথিবীতে কাচের হৃদয়’। কাচের হৃদয় মানেই তো ভঙ্গুর হৃদয়। হাজার বছর ধরে মানবসভ্যতায় নানাভাবে কাচের ব্যবহার হচ্ছে। অনেক ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়ে আসছে কাচ দিয়ে। এই ব্যবহার্য বস্তুর অসংখ্য গুণাগুণ থাকলেও একটি দুর্বলতা রয়েছে—ভেঙে যায়। ব্রিটিশ গবেষকেরা এখন শক্তিশালী কাচ উদ্ভাবনের মাধ্যমে সেই দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা করছেন। অধ্যাপক জন মাউরো উদ্ভাবিত নতুন ধরনের এই কাচের নাম দেওয়া হয়েছে লায়ন গ্লাস। এই কাচ সাধারণ কাচের তুলনায় দশ গুণ বেশি শক্তি ধারণ করতে পারে।
টেকসই কাচের সন্ধানে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন গবেষকেরা। নতুন ধরনের এই কাচের মেধাস্বত্ব পেতে এরই মধ্যে আবেদন করেছেন জন মাউরো। তিনি জানিয়েছেন, এই কাচ উৎপাদনে সোডা, ছাই কিংবা চুনাপাথরের প্রয়োজন হয় না। পুরোপুরি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উপকরণে তৈরি করা হচ্ছে। অবশ্য কাচ তৈরির মূল উপাদান ও নির্মাণপ্রক্রিয়ার কথা গোপন রেখেছেন তিনি।
নতুন উদ্ভাবিত লায়ন গ্লাস উৎপাদনে কম কার্বন বস্তু ব্যবহার করার পাশাপাশি ৩০০ থেকে ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উৎপাদন করা হচ্ছে। যেখানে সাধারণ কাচ তৈরিতে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। সোডা লাইম সিলিকেট দিয়ে প্রচলিত কাচ উৎপাদন করা হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, সোডা অ্যাশ ও লাইমস্টোনকে পোড়ানো হলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ হয়। আবার কাচ উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে তাপেরও প্রয়োজন হয়। কাচের বহুমাত্রিক উদ্ভাবন নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কেলির গবেষক অধ্যাপক রবার্ট রিচি জানান, বর্তমানে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল থেকে শুরু করে সবখানেই কাচের ব্যবহার বাড়ছে। প্রয়োজনের তুলনায় কাচের টেকসই উদ্ভাবন বেশ কম বলা যায়। নানা প্রয়োজনে নানা আঙ্গিকে কাচের চাহিদা বাড়ছে বলে নতুন নতুন উদ্ভাবনের দিকে ছুটছে গবেষক দল। যদিও ভাঙবে না, এমন কাচের সন্ধান এখনো অধরা রয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি