রবিঠাকুর গেয়েছিলেন, ‘দেখো দেখো, দেখো, শুকতারা আঁখি মেলি চায়, প্রভাতের কিনারায়।’ শুকতারা শুধু দেখেই হয়তো কবিমনের আবেগ প্রকাশিত হয়। কিন্তু সেই শুকতারা মানে শুক্র গ্রহে মানব অভিযানের পরিকল্পনা চলছে। যারা এ বছর জন্মেছে, তারা ২০৫০ সালের সেই অভিযানে যাওয়ার জন্য দ্রুত প্রস্তুতি শুরু করতে পারে।
ওশানগেটের নাম অনেকের কাছে পরিচিত। এই তো কয়েক সপ্তাহ আগে আটলান্টিক অতলে সাবমার্সিবল দুর্ঘটনায় পাঁচ অভিযাত্রীর মৃত্যুর কথা বৈশ্বিক গণমাধ্যমে খুবই আলোড়িত হয়। সেই ওশানগেটের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড স্টকটন রাশের মৃত্যু হয়।
ওশানগেটের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা গুইলারমো সোহনলেইন। তিনি বছর দশেক আগে ওশানগেট থেকে বিদায় নেন। সেই গুইলারমোর শুক্র গ্রহে মনুষ্যযান পাঠানোর জন্য পরিকল্পনা করছেন। মানুষের কলোনি স্থাপনের জন্য এক হাজার মানুষ পাঠাতে চান তিনি। সত্যিই পড়ছেন আপনি, এক হাজার মানুষকে ২০৫০ সালের মধ্যে শুক্রের নভোমণ্ডলে পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন গুইলারমো। হিউম্যানটুভেনাস নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অভিযাত্রী সংগ্রহ করছেন তিনি। গুইলারমোর ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন এমনটি।
শুক্র গ্রহের অবস্থান বিবেচনায় অনেকে হয়তো আগ্রহী হবে না। তাদের উদ্দেশে গুইলারমোর বলেন, ‘ক্যারাভানে ছুটি কাটানোর মতো আমরা শুক্র গ্রহে যেতে চাই। সবাই কিন্তু ছুটিতে ঘুরতে যেতে চায় না, আমার ধারণা, শুক্র গ্রহে সবাই না গেলেও অনন্ত এক হাজার মানুষ তো যাবেই।’ তাঁর ভাষ্যে, ‘মঙ্গলের বুকে হয়তো এক লাখ মানুষ পাঠানোর কথা ২০৫০ সালের মধ্যে। সে পরিপ্রেক্ষিতে শুক্র গ্রহে মানুষ পাঠানোর ভাবনা হয়তো তেমন অনুপ্রেরণার নয়। আমি ১১ বছর ধরে গ্রহান্তরে মানুষ পাঠানোর স্বপ্ন দেখে আসছি। আমার স্বপ্ন ছিল, আমি মঙ্গলের বুকে মানুষের কলোনির ক্যাপ্টেন হব।’
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বেলেন ওউর মতে, শুক্রপৃষ্ঠের প্রকৃতি অনেক রুক্ষ ও বিধ্বংসী। সেখানে সাধারণ কিছু টিকে থাকার সুযোগ অনেক কম। বেলেন ও তাঁর দল শুক্র গ্রহে ড্রোন অবতরণ নিয়ে কাজ করছেন। শুক্র গ্রহ জয় নিয়ে গবেষকেরা তেমন আশাবাদী নন কখনোই। ২০৩১ সালে নাসার দ্য ভিঞ্চি মিশন পাঠানো হবে। সেই মিশন কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে নাসাই দ্বিধান্বিত বলে জানা গেছে। ‘প্যারাডাইস ইন দ্য ক্লাউডস’ শিরোনামে অভিযাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে ৫০ কিলোমিটার ওপরে মধ্যাকর্ষের মান পৃথিবীর প্রায় সমান। চাপ ও তাপমাত্রা পৃথিবীর সমান বলেই বিজ্ঞাপনে লেখা হচ্ছে। যদিও এখানে শুভংকরের ফাঁকি দেখা যাচ্ছে। শুক্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা আসলে ৯০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) এরই মধ্যে ৪০টির বেশি খেয়াযান পাঠিয়েছে শুক্রের উদ্দেশে। ১৯৬২ সালে প্রথম নাসা মেরিনার টু খেয়াযান পাঠানো হয়। শুক্রের তাপমাত্রা ও বায়ুর চাপ পৃথিবীর চেয়ে ৯০ গুণ বেশি। পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে চাপ ৩ হাজার ৩০০ গুণ বেশি সেখানে। পৃথিবী থেকে কোনো খেয়াযান শুক্রের বুকে নামলে ২ ঘণ্টার বেশি টেকা সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়। সোভিয়েত আমলে ভেনেরা ১৩ খেয়াযান নেমেছিল শুক্রের বুকে। ১৯৮১ সালের সেই অভিযানে শুক্রের বুকে রকেটে ১ ঘণ্টার মতো টিকে ছিল। শুক্র পরিমণ্ডলে তরল পানির কোনো অস্তিত্ব নেই। সেখানে অসংখ্য সক্রিয় আগ্নেয়গিরির সন্ধান মেলে।
সূত্র: পপুলার মেকানিকস